• মঙ্গলবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:০৯ পূর্বাহ্ন

বিনা পয়সার ট্রাফিক সার্জেন্ট ইব্রাহিম

/ ১০৫ বার দেখা হয়েছে
আপডেট করা হয়েছে


রফিক মোল্লা:
গায়ে খাকি পোষাক, মুখে বাঁশি, হাতে লাঠি, মাথায় ক্যাপ। যানজট নিরশনে সড়কের এদিক থেকে ওদিক ছুঁটে চলছে সুদর্শন যুবক ইব্রাহিম। প্রথম দেখায় যে কেউ বলবেন ট্রাফিক সার্জেন্ট। কাগজে কলমে না হলেও সেচ্ছাশ্রমে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছেন সিরাজগঞ্জের বেলকুচির দৌলতপুর ইউনিয়নের ব্যস্ততম ত্রি-মুখি কান্দাপাড়া সড়কে। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি বিভিন্ন যানবাহনের জট ছাড়াতে মহতি এ কাজ করে যাচ্ছে প্রায় আড়াই বছর ধরে। তবে এ জন্য জন্য কোন পারিশ্রমিক নির্ধারন করা নেই।

 দৌলতপুর ইউনিয়নের চর দুলগাগরাখালি গ্রামে ইব্রাহিমের বাড়ি। দোচালা টিনের ঘরে বসবাস করে ১৮ বছর বয়সি ইব্রহিম। দিন মুজুর বাবা সুলতান বেপারী সন্তানদের একটু ভাল রাখার কথা চিন্তা করে দাড়দেনা করে মাস তিনেক আগে মালয়েশিয়া পারি জমিয়েছেন। মা ফরিদা খাতুন তিন সন্তান নিয়ে থাকেন। ইব্রাহিম হাটা চলাও কিছু সমস্যা আছে। কথা ভাল ভাবে বলতে পারে না। তার একটি প্রতিবন্ধী কার্ড রয়েছে। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে বাড়ি থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার পায়ে হেটে ত্রি-মুখি সড়ক কান্দাপাড়া চলে আসে। এরপর শুরু হয় ডিউটি। একের পর এক বাঁশি ফুঁক দিচ্ছে। নিরাপদ যোগাযোগ ও নির্বিগ্ন করতে কঠোর পরিশ্রম করে। দুপুরে আবার হেটে গিয়ে বাড়িতে খাবার খেয়ে আবার ফিরে আসে। সন্ধ্যায় যানজট একটু বেশি হওয়ায় প্রায় দিন রাতেই বাড়ি ফেরে। এভাবেই তার প্রতিদিনই কেটে যাচ্ছে।

ইব্রাহিমের মা ফরিদা খাতুন বলেন, করেনাকালীন সময়ে পুলিশ সদস্যরাই এখানে দায়িত্ব পালনে উৎসাহিত করে। পরে স্থানীয়রা কিছু টাকা তুলে পোষাক কিনে দেয়। আমরা কিছু টাকা দিয়ে বাঁশি, বুট জুতা কিনে দেই। এরপর থেকেই বৃষ্টি ও রোধ উপেক্ষা করে যানজট নিরশনে কাজ করে যাচ্ছে ইব্রাহিম। কেউ খুশি হয়ে কিছু দিলে সেটা গ্রহন করে। অভাবের সংসারে প্রতিবন্ধী এ সন্তান নিয়ে বেশ কষ্টেই দিন কাটাতে হয়। তারপরও ছেলের ভাল কাজে আমরা খুশি।

এদিকে কয়েকজন ভ্যান চালক ও স্থানীয়রা জানান, দেখতে সুদর্শন ইব্রাহিম কঠোর পরিশ্রমি হলেও ঠিকমত কথা বলতে পারে না। দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছর হলে সে দায়িত্ব পালন করছে। এলাকায় ইব্রাহিমকে বিনা পয়সার ট্রাফিক বলে চেনে। তবে সে কারও সাথে খারাপ আচারন না করে না। রোধ বৃষ্টি মাথায় নিয়েই সে সেচ্ছাসেবী ট্রাফিক হিসেব কাজ করে। এ মহতি দায়িত্ব পালন দেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তাকে সরকারী ও বেসরকারী ভাবে বিশেষ কোন সুবিধা দেয়ার দাবি জানাই।

ইব্রাহিম হোসেন ভাঙ্গা গলায় বুঝালেন, কাজ করে আনন্দ পাই। টাকা পয়সা কোন ব্যাপার না। কেউ দিলে নেই, না দিলে নাই। তার কোন আক্ষেপ  নেই। তিনি সকলের দোয়া ও সহযোগিতা চেয়েছেন। এছাড়া যত দিন বেঁচে আছেন মহতি এ দায়িত্ব পালন করতে চান।



আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর