বিদ্যুৎচালিত মেট্রোরেলের পর এবার বৈদ্যুতিক বাসের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। চলতি বছরই রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) বহরে যুক্ত হচ্ছে বৈদ্যুতিক ডাবল ডেকার এসি বাস। বায়ুদূষণে বিশ্বের শীর্ষে থাকা রাজধানী ঢাকায় বিদ্যুৎচালিত এসি ডাবল ডেকার বাস দূষণ কমাতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, ভারতীয় ঋণ চুক্তির আওতায় বিআরটিসির জন্য ৩০০টি ইলেকট্রিক ডাবল ডেকার এসি বাস সংগ্রহ করা হবে। এর জন্য ব্যয় হবে ১ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। এতে প্রকল্প সহায়তা থাকবে ৮৫৪ কোটি টাকা এবং সরকার জোগান দেবে ২৯৯ কোটি টাকা। এর পাশাপাশি ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে সরকার ইলেকট্রিক ভেহিকল নীতিমালা প্রণয়নেরও কাজ করছে। চলতি মাসের মধ্যেই নীতিমালাটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।
প্রকল্পের তথ্যমতে, প্রাথমিকভাবে এ বছরের মধ্যেই ১০০টি এসি ডাবল ডেকার বিদ্যুৎচালিত বাস ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর জন্য আনা হবে। গতকাল সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার ড. বিনয় জর্জ। সাক্ষাৎকালে চলতি বছরেই ১০০টি ইলেকট্রিক বাস সরবরাহের জন্য তাদের অনুরোধ করা হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান। সাক্ষাৎকালে দুই দেশের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়। বিআরটিসির জন্য বৈদ্যুতিক দ্বিতল এসি বাস সংগ্রহ প্রকল্পে জানানো হয়, নির্ভরযোগ্য এবং আরামদায়ক গণপরিবহন সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রাথমিকভাবে ১০০টি বাস সংগ্রহের জন্য ব্যয় হবে ৩৮৩ কোটি টাকা। এর সঙ্গে খুচরা যন্ত্রাংশের জন্য বাসের মূল্যের ১৫ শতাংশ ৫৪ কোটি টাকা, সাতটি বৈদ্যুতিক চার্জিং স্টেশন স্থাপনের জন্য ৬৭ কোটি টাকা ব্যয় হবে। উল্লেখ্য, বর্তমানে বিআরটিসির বহরে ১ হাজার ৩৫০টি বাস রয়েছে।
বিআরটিসি বর্তমান গাড়ি বহর দিয়ে জনগণের বিশাল পরিষেবার চাহিদা মেটাতে পারছে না। অন্যদিকে, আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে প্রায় ৮০০ বাসের আয়ুুষ্কাল শেষ হয়ে যাবে। তখন বাসের সংখ্যা দাঁড়াবে ৫৫০। তাই, নতুন বাস সংগ্রহের পরিকল্পনা করা খুবই জরুরি বলে প্রকল্পে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে ডিজেল বা সিএনজিচালিত বাসগুলো বিশ্বব্যাপী পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয়ে যাবে। ২০৩৫ সালের পরে, অটোমোবাইল নির্মাতারা আর ডিজেল ইঞ্জিন তৈরি করবে না। নতুন ইলেকট্রিক ডাবল ডেকার এসি বাস অন্তর্ভুক্ত হলে বিআরটিসির বাসের সংকট কাটবে। এসব বাস পরিবেশবান্ধব এবং বেশি যাত্রী ধারণক্ষমতার কারণে বাংলাদেশের জন্য একটি আদর্শ বিকল্প হতে পারে।
ভারতীয় ঋণচুক্তির অধীনে বিআরটিসির জন্য বৈদ্যুতিক ডাবল ডেকার এসি সংগ্রহের জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনের মধ্যে একটি সভা আহ্বান করা হয়েছে। শিগগিরই দুই সরকারের মধ্যে এ সম্পর্কিত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। উভয় দেশের সরকার উল্লিখিত ঋণচুক্তির আওতায় বিআরটিসির জন্য বৈদ্যুতিক ডাবল ডেকার এসি বাস সংগ্রহের জন্য অর্থায়নে সম্মত হয়েছে।