উচ্চ আদালতে বিচারাধীন সরকারের সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দফতরের মামলার গতিবিধি পর্যবেক্ষণে ‘সলট্র্যাক’ নামে ডিজিটাল কেস ট্র্যাকিং সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে। এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে-বিপক্ষে থাকা মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানতে পারবে এক ক্লিকেই। তথ্য সঠিকভাবে হালনাগাদ হচ্ছে কি না তা দেখভালে এরই মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর উইংসহ সরকারি সব দফতরেই নিযুক্ত করা হয়েছে একজন করে ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে যে কোনো সময় সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাই কোর্ট বিভাগে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদফতর, দফতর ও সংস্থাগুলোর পক্ষে-বিপক্ষে থাকা মামলার অগ্রগতি ও সর্বশেষ অবস্থা জানা যাবে। সংশ্লিষ্ট মামলার বিষয়ে সলিসিটর উইং, অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়সহ বিভিন্ন পক্ষের মতামত প্রদানসহ ফাইল প্রস্তুত ও অন্যান্য বিষয়ে সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া থাকবে এই সফটওয়্যারে।
জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্টে আপিল বিভাগ ও হাই কোর্ট বিভাগে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতরের ৯০ হাজারের বেশি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এত দিন মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানতেও অনেক বেগ পেতে হতো সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে। এই পরিস্থিতি থেকে বের হতে উদ্যোগ নেয় আইন মন্ত্রণালয়। সমস্যার সমাধানে তৈরি করে ‘সলট্র্যাক’। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এই সফটওয়্যারটি উদ্বোধন করবেন। এর পর থেকে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো নিজেদের ড্যাশবোর্ড ব্যবহার করে মামলা-সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদান করতে পারবে। আইন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতে চাইলে প্রথমেই soltrack.gov.bd-এ লগইন করে সলিসিটর অনুবিভাগের কেস ট্র্যাকিং সিস্টেমে রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণ করতে হবে ব্যবহারকারীকে। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান, ব্যবকারকারীর নাম, ইমেইল ও মোবাইল নম্বর দিয়ে পাসওয়ার্ড সংযুক্ত করতে হবে। পরে সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারী মামলা-সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি যুক্ত করার পাশাপাশি গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। সফটওয়্যারে সরকারের ৫৮টি মন্ত্রণালয়, ৬৪ জেলা প্রশাসক কার্যালয়, বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়, উপজেলা প্রশাসন, অধিদফতর, দফতর ও সংস্থাগুলোর নাম ও শাখা সন্নিবেশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উচ্চ আদালতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতরের ৯০ হাজারের বেশি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এখন থেকে ‘সলট্র্যাক’ নামের এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো নিজ নিজ মামলার সর্বশেষ অবস্থা এক ক্লিকেই জানতে পারবে। মন্ত্রী বলেন, সর্বশেষ অবস্থা জানার পর দফতরগুলো মামলার বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপও গ্রহণ করতে পারবে। উচ্চ আদালতে ঝুলে থাকা সরকারের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে এই সফটওয়্যার ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করেন আইনমন্ত্রী।
জানতে চাইলে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অনেক সময়ই দেখা যায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা প্রতিষ্ঠান তাদের মামলার চলমান অবস্থা কিংবা পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে জানে না। এই কেস ট্র্যাকিং সিস্টেমের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মামলার গতিবিধি অতি সহজেই পর্যবেক্ষণ করে মামলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সময়মতো জানতে পারবে। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সরকারি স্বার্থ অক্ষুণ্ন রাখাও সম্ভব হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের মন্ত্রী মহোদয়ের দিকনির্দেশনায় মাত্র ছয় মাসে নিজস্ব জনবল দিয়ে সফটওয়্যারটি তৈরি করেছি আমরা। এতে অতিরিক্ত কোনো অর্থই খরচ হয়নি।’ ‘সলট্র্যাক’ সম্পর্কে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো নিজ নিজ মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানতে পারবে। একই সঙ্গে কোনো দফতর থেকে সলিসিটর উইংয়ে পাঠানো মামলার নথিপত্র সঠিকভাবে পৌঁছল কি না তাও জানা যাবে এই ট্র্যাকিং সিস্টেমের মাধ্যমে। তিনি বলেন, এই ট্র্যাকিং সিস্টেমের জন্য ইতোমধ্যে সলিসিটর উইংয়ে একজন ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরগুলোতে একজন করে ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়েছে। কোনো কারণে সফটওয়্যারে তথ্য হালনাগাদ না হলে সংশ্লিষ্ট ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্য হালনাগাদ করার ব্যবস্থা করা হবে। ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তাদের তালিকা সফটওয়্যারে দেওয়া থাকবে।