প্রায় পাঁচ বছর পর আজ শনিবার ময়মনসিংহে আসছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর আগমন ঘিরে উচ্ছ্বাসের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে ময়মনসিংহ বিভাগজুড়ে। ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস ময়দানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিভাগীয় জনসভায় বক্তব্য দেবেন তিনি। জনসভায় স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জমায়েত হবে বলে আশা করছেন আয়োজকরা। এ অনুযায়ী সব প্রস্তুতিও শেষ হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের প্রত্যাশা, প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে বেশ কিছু জনগুরুত্বপূর্ণ দাবির ব্যাপারে ইতিবাচক বক্তব্য আসতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী আজ ৭৩টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৩০টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। জনসভাস্থল সার্কিট হাউস মাঠেই প্রকল্পগুলো উদ্বোধন করা হবে। এর মধ্যে আছে স্বাস্থ্য বিভাগ, শিক্ষা বিভাগ, গণপূর্ত বিভাগ ও স্থানীয় সরকার বিভাগের একাধিক প্রকল্প। ময়মনসিংহ জেলা ছাড়াও বিভাগের অন্য জেলারও কিছু প্রকল্প রয়েছে এগুলোর মধ্যে।
এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষ করে ময়মনসিংহের নাগরিক সংগঠনগুলো তাঁর কাছে বিভিন্ন দাবি পেশ করেছে। জন-উদ্যোগ নামের একটি সংগঠন প্রধানমন্ত্রী বরাবর ১৮ দফা এবং নাগরিক আন্দোলন নামের একটি সংগঠন ২৩ দফা দাবিনামা পেশ করেছে।
দলীয় সূত্র জানায়, দলের সভানেত্রীর আগমনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই পাল্টে গেছে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাংগঠনিক দৃশ্যপট। নগর থেকে গ্রাম পর্যন্ত চলছে সভা-সমাবেশ। চাঙ্গা হয়েছে দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোও। প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে একাধিক প্রস্তুতিসভা করেছেন কেন্দ্রীয়, জেলা, মহানগর ও অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতারা। পাশাপাশি প্রচার-প্রচারণাও চালাচ্ছেন। তাঁদের প্রত্যাশা, বিশাল সার্কিট হাউস মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হবে এবারের জনসভায়।
উৎসবের নগরী ময়মনসিংহ : প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে ময়মনসিংহ। প্রধানমন্ত্রীর ছবিসহ শুভেচ্ছা তোরণ, পোস্টার আর ব্যানারে ছেয়ে গেছে গোটা ময়মনসিংহ। দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষার প্রহর গুনছে। নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর এই জনসভাকে কেন্দ্র করে দলের নেতাকর্মীরাও উজ্জীবিত। স্থানীয় প্রশাসন থেকে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নেওয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা।
প্রধানমন্ত্রীর যাতায়াতের সড়কগুলো অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে। সড়কপথের পাশের দেয়ালগুলোতে রঙের কাজ, ফুটপাতে রং, ভাঙা সড়ক সংস্কার, পথের ধুলাবালি সরানোর কাজও চলেছে জোরেশোরে। সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সভাস্থল সার্কিট হাউস ও আশপাশের এলাকার। সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু এসব বিষয় তদারকি করছেন।
মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে নগরীকে নতুনভাবে সাজানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত ময়মনসিংহ নগরী। প্রধানমন্ত্রী সিটি করপোরেশনের অনেক প্রকল্প উদ্বোধন করবেন বলে তিনি জানান।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপি বলেন, প্রাণের নেত্রীকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত ময়মনসিংহবাসী। নেত্রীকে একনজর দেখতে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে নেতাকর্মীরা এ নগরীতে ছুটে আসবেন।
৭৩ প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৩০ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন : প্রধানমন্ত্রী আজ বিকেলে সার্কিট হাউস ময়দানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত ময়মনসিংহ বিভাগীয় জনসভায় বক্তব্য দেবেন। এ সময় ১০৩টি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগের ৭৩টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন এবং ৩০টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে ময়মনসিংহের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন জায়গায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, ময়মনসিংহ সদরের চর সিরতায় ৫০ শয্যাবিশিষ্ট ডা. মুশফিকুর রহমান শুভ মেমোরিয়াল ইসলামিক মিশন হাসপাতাল, ত্রিশাল উপজেলায় এক হাজার আসনবিশিষ্ট অডিটরিয়াম কাম কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ, ময়মনসিংহ জেলায় ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁওয়ের চর আলগী ইউনিয়নকে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন থেকে রক্ষার্থে বেড়িবাঁধ নির্মাণ, ময়মনসিংহ সদর উপজেলা পরিষদ নতুন হাসপাতাল নির্মাণ, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলায় গোরবাকুড়া-কড়ইতলী স্থলবন্দর, জেলা আইনজীবী সমিতির মূল ভবন শহীদ অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম ভবন ও বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজ উদ্বোধন।
এ ছাড়া কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল নির্মাণ, শেখ রেহানা হল নির্মাণ, রোজী জামাল হল নির্মাণ, সরকারি আনন্দ মোহন কলেজে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট পাঁচতলা ছাত্র হোস্টেল নির্মাণ, বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন।
জনসভাস্থল পরিদর্শন ওবায়দুল কাদেরের : প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে গত রাতে নগরীর জনসভাস্থল সার্কিট হাউস মাঠ পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ময়মনসিংহের বিভাগীয় সমাবেশে আগামী নির্বাচনের বার্তা দেবেন। আওয়ামী লীগের যে উন্নয়ন তা জনগণের চোখের সামনে আছে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ করা হবে। সেটাই হবে নির্বাচনের মূল বার্তা।’ তিনি বলেন, এখন একটাই কাজ, মানুষকে বাঁচানো। তিনি আরো বলেন, ময়মনসিংহের রাস্তাঘাটসহ ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো উন্নয়ন হবে।
এ সময় কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক এমপি, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহাম্মদ হোসেন, মির্জা আজম, সদস্য মারুফা আখতার পপি, সংসদ সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু, সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্তসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।