সমাবেশে ময়মনসিংহের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী ফিতা কেটে ৭৩টি নতুন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৩০টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘এই উন্নয়নগুলো হলো। অসমাপ্ত কিছু কাজ ধীরে ধীরে শেষ করা হবে। আপনারা এগুলো দেখেশুনে রাখবেন। আমার আরো অনেক কাজ করার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অনেক কিছুই করা সম্ভব হচ্ছে না।’
বিকেল ৩টার দিকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবেশ মঞ্চে প্রধান অতিথির আসন গ্রহণ করেন। এ সময় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ছিল বিএনপি-জামায়াতের কাজ। তাদের আমলেই ময়মনসিংহে চারটি সিনেমা হলে বোমা হামলা করা হয়। বিএনপি অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসে। দেশে লুটপাট ও ধ্বংসের রাজনীতি চালু করে।’ তিনি বলেন, বিএনপি ধ্বংস করে, আওয়ামী লীগ করে উন্নয়ন। বর্তমানে দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এ দেশে কেউ ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ময়মনসিংহ বিভাগ করেছি। এখানে একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হবে। সব ধরনের উন্নয়ন হবে। কিন্তু করোনার কারণে উন্নয়নে দেরি হচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি আপনাদের জন্য উপহার নিয়ে এসেছি। এসব উপহার আপনারা সংরক্ষণ করবেন।’
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু অল্প সময়ের মধ্যে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে সংবিধান দিয়েছেন, বিধ্বস্ত রেল সেতু ও সড়ক সেতু পুনর্নির্মাণ করেছেন। দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছিল তখনই তাঁকে সপরিবারে হত্যা করা হলো। তখন বিদেশে ছিলাম। বাংলাদেশর জনগণের ওপর ভরসা করে ছয় বছর পর দেশে ফিরি। এরপর জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না। যাঁর যা জমি আছে তাতে চাষ করবেন। আমাদের যেন কারো কাছে হাত পাততে না হয়। আমাদের মাটি আছে, মানুষ আছে। জলাভূমিতে মাছ চাষ বাড়াতে হবে।’ তিনি তরুণদের উদ্যোক্তা হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, যারা উদ্যোক্তা হবে তাদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা থাকবে।
তিনি আরো বলেন, আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ফোন। আজ গ্রামেও ওয়াই-ফাই কানেকশন পাওয়া যায়। ইউনিয়নে ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার করে দেওয়া হচ্ছে। ডিজিটাল সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। অনেকে ঘরে বসে অনলাইনে আয় করতে পারছে।
গতকাল দুপুর ১২টা থেকেই নগরীর বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা মিছিল বের করেন। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে তাঁরা সমাবেশ প্রাঙ্গণে জড়ো হন। অনেকের পরনে ছিল রঙিন গেঞ্জি, মাথায় ছিল ক্যাপ। নৌকার লগি-বৈঠা হাতেও মিছিলে যোগ দেন অনেকে। এ সময় জয় বাংলা স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে নগরীর রাজপথ। দুপুর ১টার মধ্যেই জনসমুদ্রে পরিণত হয় সমাবেশ প্রাঙ্গণ। মাঠে জায়গা না পেয়ে অনেকেই সড়কে বসেন। পুরুষের পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গা থেকে মিছিল নিয়ে নারী কর্মী-সমর্থকরাও জনসভায় যোগ দেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলমের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদের, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর্জা আজম প্রমুখ।
ট্রেন রিজার্ভ করে জনসভায় : এদিকে ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদিন খান তুহিন কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে সম্পূর্ণ ট্রেন রিজার্ভ করে জনসভার উদ্দেশে রওনা দেন। পাশাপাশি জনসভায় যোগ দিতে বাস-মাইক্রোবাসও রিজার্ভ করেন। জনসভা সফল করতে কয়েক হাজার নেতাকর্মী নিয়ে তিনি সমাবেশে যোগ দেন।