বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২৫ অপরাহ্ন

শুনানি ছাড়াই পর্ষদ পুনর্গঠন করতে পারবে বিএসইসি

রিপোর্টারের নাম / ১৭৯ বার দেখা হয়েছে
আপডেট করা হয়েছে মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ, ২০২৩, ৪:৪৩ অপরাহ্ন

আর্থিক প্রতিবেদন জমা না দেয়ার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন পরিপালনে ব্যর্থতার জন্য বিশেষ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শুনানি ছাড়াই তালিকাভুক্ত কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করতে পারবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন ২০২২-এর খসড়ায় এ বিধান যুক্ত করা হয়েছে। বিএসইসি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ যৌথভাবে আইনের এ খসড়া প্রণয়ন করেছে।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ যৌথভাবে এ আইনের খসড়াটি প্রণয়ন করেছে। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯ ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন ১৯৯৩-এর সমন্বয়ে নতুন এ আইনের খসড়া করা হয়েছে। পাশাপাশি এতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারসহ আনুষঙ্গিক কিছু ধারা সংযোজনের মাধ্যমে এটিকে আরো যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আইনের খসড়ার বিষয়ে অংশীজন ও জনসাধারণের কাছ থেকে মতামত আহ্বান করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। আইনটি প্রকাশের তারিখ ৫ মার্চ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে এ মতামত পাঠাতে হবে। নতুন আইন চূড়ান্ত অনুমোদন হওয়ার পর আগের ১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ ও ১৯৯৩ সালের আইনটি রহিত হয়ে যাবে।

প্রস্তাবিত খসড়ায় বিএসইসি চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার শর্তগুলো আরো বিস্তৃত করা হয়েছে। ১৯৯৩ সালের আইনে বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের যোগ্যতার বিষয়ে বলা হয়েছিল কোম্পানি ও সিকিউরিটি মার্কেটসংক্রান্ত বিষয়ে পারদর্শিতা অথবা আইন, অর্থনীতি, হিসাবরক্ষণ ও সরকারের বিবেচনায় কমিশনের জন্য প্রয়োজনীয় অন্য কোনো বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান থাকা চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে। অন্যদিকে প্রস্তাবিত খসড়ায় এ বিষয়ে বলা হয়েছে, বাণিজ্য, ব্যবসায় প্রশাসন, আইন বা অর্থনীতি বিষয়ে ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রি ও সরকারের বিবেচনায় কমিশনের জন্য প্রয়োজনীয় অন্য কোনো বিষয়ে বিশেষ জ্ঞানসহ কমপক্ষে ২০ বছরের কর্ম অভিজ্ঞতা থাকা চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে। আগের আইনে চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের পদমর্যাদার বিষয়টি উল্লেখ ছিল না। তবে খসড়ায় বিএসইসির চেয়ারম্যানকে সিনিয়র সচিব ও কমিশনারদের সচিবের পদমর্যাদা দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সিকিউরিটিজের সুবিধাভোগী ব্যবসায় নিষিদ্ধকরণ এবং এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করার ও তথ্য উদঘাটনে গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করা বিএসইসির অন্যতম কার্যাবলি হিসেবে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে আগের আইনে এ বিষয়ে কোনো কিছু বলা হয়নি। খসড়ায় ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) নির্ধারিত যোগ্যতাসম্পন্ন নিরীক্ষকদের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরীক্ষা সম্পাদন এবং  নিরীক্ষকদের কার্যাবলি নিরূপণ ও নিয়ন্ত্রণকে কমিশনের কার্যাবলির আওতায় আনা হয়েছে। একইভাবে এফআরসি ও অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত যোগ্যতাসম্পন্ন সম্পদ মূল্যায়নকারীর মাধ্যমে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পদ মূল্যায়ন কার্যক্রম সম্পাদন এবং সম্পদ মূল্যায়নকারীর কার্য নিরূপণ ও নিয়ন্ত্রণকে কমিশনের কার্যাবলির আওতাভুক্ত করা হয়েছে।

তালিকাভুক্ত কোম্পানি এক্সচেঞ্জ, শেয়ারধারক ও কমিশনের কাছে বার্ষিক ও অন্যান্য প্রতিবেদন, কমিশনের পক্ষ থেকে তলব করা কোম্পানির বা এর অধীন কোম্পানির তথ্য, দলিল কিংবা ব্যাখ্যা দাখিল করতে বাধ্য থাকবে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনসংক্রান্ত শর্ত ও নিয়মাচার বিষয়ে কমিশনের জারি করা আদেশ তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের জন্য পরিপালন করা বাধ্যতামূলক। আলোচ্য ক্ষেত্রে ব্যর্থতার জন্য কমিশন চাইলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে কমিশন প্রয়োজন মনে করলে পর্ষদ পুনর্গঠনের আগে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির প্রাথমিক নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারবে। বিদ্যমান পরিচালনা পর্ষদকে শুনানির সুযোগ না দিয়ে পর্ষদ পুনর্গঠন করা যাবে না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে সিকিউরিটিজ মার্কেট ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে উপযুক্ত বিবেচনা করলে শুনানি ছাড়াই পর্ষদ পুনর্গঠনের সুযোগ রাখা হয়েছে খসড়ায়।

প্রতারণামূলক কার্য, কারসাজি ইত্যাদি নিষিদ্ধকরণ বিষয়ে প্রস্তাবিত খসড়ার ৩৬ ধারায় ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অন্য কোনো প্রচারমাধ্যম ব্যবহার, অপ্রকাশিত মূল্যসংবেদনশীল তথ্য ব্যবহার, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) ক্ষেত্রে দর নির্ধারণের সময় অযৌক্তিক বা বিভ্রান্তিমূলক দর প্রদানের মাধ্যমে ইস্যু মূল্য নির্ধারণকে প্রভাবিত করাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ধারায় আরো বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি সংবাদমাধ্যমে কোনো সিকিউরিটির বিভ্রান্তিমূলক, অসত্য বা মিথ্যা আর্থিক বিশ্লেষণ বা সংবাদ প্রকাশ করবেন না, যা ওই সিকিউরিটির মূল্যকে বা সিকিউরিটিজ মার্কেটকে প্রভাবিত করতে পারবে।

এছাড়া কোনো ডেরিভেটিভের মূলগত ইন্সট্রুমেন্ট বা সিকিউরিটির মূল্য কিংবা সূচকে প্রভাবিত করা, কোম্পানির কর্তৃত্ব গ্রহণ বা একীভূতকরণ বা পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে সিকিউরিটির মূল্য বা বিনিময় অনুপাতকে প্রভাবিত করা, কোম্পানি ও এর সাবসিডিয়ারির আর্থিক বিবরণীতে বিভ্রান্তিমূলক অসত্য বা মিথ্যা তথ্য প্রকাশ, আয় বা ব্যয়, লাভ বা লোকসান, সম্পদ বা দায় কম বা বেশি দেখানো বা গোপন রাখা কিংবা কোনো উল্লেখযোগ্য তথ্য প্রকাশ না করে সিকিউরিটির দরকে প্রভাবিত করা, নিরীক্ষা প্রতিবেদনে নিরীক্ষক কর্তৃক বিভ্রান্তিমূলক, অসত্য বা মিথ্যা তথ্যসহ প্রতিবেদন দেয়ার মাধ্যমে সিকিউরিটির মূল্যকে প্রভাবিত করা, কোনো স্টক ব্রোকার বা স্টক ডিলার, মার্চেন্ট ব্যাংকার কিংবা অন্য কোনো বাজার মধ্যস্থতাকারী বা এর কোনো পরিচালক বা কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা নিরীক্ষক বা সম্পদ মূল্যায়নকারী অসদুপায়ে বা কারসাজির মাধ্যমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো সিকিউরিটি ক্রয়, বিক্রয়, অর্জন, অধিগ্রহণ বা কর্তৃত্ব গ্রহণে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আলোচ্য সিকিউরিটির মূল্যকে প্রভাবিত করা, ক্রেডিট রেটিং কোম্পানি কর্তৃক বিভ্রান্তিমূলক, অসত্য বা মিথ্যা তথ্য, আর্থিক বিশ্লেষণ বা রেটিং প্রকাশের মাধ্যমে কোনো সিকিউরিটির মূল্যকে প্রভাবিত করা, কোনো ইস্যু ব্যবস্থাপক বা অবলেখক বা সম্পদ মূল্যায়নকারী বা বিনিয়োগ উপদেষ্টা বিভ্রান্তিমূলক, অসত্য বা মিথ্যা তথ্য, আর্থিক বিশ্লেষণ বা ডিউ ডিলিজেন্স সার্টিফিকেট প্রদান বা প্রকাশের মাধ্যমে কোনো সিকিউরিটির ইস্যু মূল্যকে প্রভাবিত করার বিষয়টি খসড়ায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

আলোচ্য ৩৬ ধারার বিধান লঙ্ঘনের বিষয়ে ৪৩(১) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি এ আইনের ৩৬ ধারার বিধান লঙ্ঘন করেন বা লঙ্ঘনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন বা লঙ্ঘনে প্ররোচনা বা সহায়তা করেন এবং কমিশন যদি ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত করে মামলা করে তবে ওই ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট আদালত কর্তৃক সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড বা অন্যূন ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এছাড়া ৩৬ ধারার বিধান লঙ্ঘনকারী ব্যক্তি কর্তৃক বেআইনিভাবে বা অনৈতিকভাবে আহরিত অর্থ, সিকিউরিটি বা সম্পদ সংশ্লিষ্ট আদালত বাজেয়াপ্ত করতে বা বাজেয়াপ্ত করে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারবে। এক্ষেত্রে আদেশকৃত ক্ষতিপূরণের পরিমাণ মোট আর্থিক ক্ষতির দ্বিগুণের কম হবে না বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। বিদ্যমান অধ্যাদেশে এ ক্ষেত্রে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অন্যূন ৫ লাখ অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

খসড়ায়  অনুসন্ধান বা তদন্ত পরিচালনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কমিশন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে যেকোনো সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ থেকে সিকিউরিটিজ লেনদেন বা এ সংক্রান্ত তথ্য প্রচারের সঙ্গে সম্পর্কিত টেলিফোন, ইন্টারনেট, ই-মেইল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা অন্য কোনো মাধ্যমের তথ্য ও রেকর্ড তলব করতে পারবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বিএসইসি যৌথভাবে এ আইনের খসড়া তৈরি করেছে। দেশের পুঁজিবাজারের ভালোর জন্যই নতুন আইনটি প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Theme Created By Limon Kabir