শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৫৭ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ

অচিরেই ফেরত আসছে বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া রিজার্ভ

রিপোর্টারের নাম / ২৯৭ বার দেখা হয়েছে
আপডেট করা হয়েছে

আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া রিজার্ভের পুরো টাকা ফেরত আসতে পারে। গত জানুয়ারি মাসে ফেডারেল কোর্টের দেওয়া রায়ের পর ফিলিপাইন সরকার দ্রুত সময়ের মধ্যে এই টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, জানুয়ারি মাসে ফেডারেল কোর্টের রায়ের পর দুই দেশই সমঝোতার দিকে বেশি জোর দিয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, আদালতের বাইরে সমঝোতা হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে চুরি যাওয়া পুরো টাকা ফেরত আনা সম্ভব হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে জানায়, ফিলিপাইনের বিচার বিভাগ বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি হওয়া রিজার্ভ ফেরাতে বাংলাদেশকে সহায়তা করার কথা জানিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসির সঙ্গে দেশটির একজন মন্ত্রীর এ বিষয়ে বৈঠক হয়েছে।

জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান মাসুদ বিশ্বাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ফেডারেল কোর্টের রায়ের যে অবজারভেশন, তাতে আমাদের টাকা পাওয়াটা সহজ হয়েছে। কোর্টের বাইরে সমঝোতা হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা টাকা ফেরত পাবো।’

‘তা না হলে অর্থাৎ মামলা-মোকদ্দমায় গেলে অনেক সময় লাগবে’ জানিয়ে মাসুদ বিশ্বাস উল্লেখ করেন, ‘আমরা চাচ্ছি আদালতের বাইরে সমঝোতা হোক।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই পুরো টাকা চলে আসতে পারে। চুরি যাওয়া পুরো টাকা যাতে ফেরত আসে, সে জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে।

বিএফআইইউ প্রধান বলেন, ‘শুরু থেকেই টাকা ফেরত আনার ব্যাপারে আমরা জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি। কিছুদিন আগেও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা ফিলিপাইনে গিয়েছিলেন। এ ছাড়া সরকারের অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেশটির বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে মিটিং হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ফিলিপাইন সরকারের বিচার বিভাগ আমাদের বিনা খরচের মামলা পরিচালনা করার সুযোগ দিয়েছে।’

এর আগে গত ১৬ জানুয়ারি বিএফআইইউ জানায়, ফিলিপাইনের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) সহযোগিতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয়েছিল। তাই রিজার্ভ চুরির ঘটনায় আরসিবিসিসহ অভিযুক্ত ছয়জনের করা মামলা খারিজ করে দিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে রায় দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট (স্টেট কোর্ট)।

আদালত রায়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির ক্ষেত্রে আরসিবিসির উদ্দেশ্যপ্রণোদিত জোগসাজশ ছিল। আদালতের রায়ে আরও উল্লেখ করা হয়, আরসিবিসির নিউইয়র্কের হিসাব ব্যবহার না হলে এবং ফিলিপাইনে আরসিবিসি অভিযুক্তদের সহযোগিতা না করলে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে ওই অর্থ অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ ছিল না।

স্টেট কোর্ট আরসিবিসি ও অন্যান্য বিবাদীদের গত ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জবাব দেওয়ার আদেশ এবং মধ্যস্থতার নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নিউইয়র্কে নিয়োজিত বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনি প্রতিষ্ঠান মধ্যস্থতার বিষয়টি পর্যালোচনা করছে।

উল্লেখ্য, গত ১৩ জানুয়ারি বাংলাদেশের পক্ষে রায় দেন নিউইয়র্কের সুপ্রিম কোর্ট। তবে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে ফিলিপাইনের অভিযুক্ত ব্যাংক রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি)।

বিএফআইইউ জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে সংঘটিত হয়েছে বিবেচনায় ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ফর দ্য সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউইয়র্কে (ফেডারেল কোর্ট) আরসিবিসিসহ ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে। পরে আরসিবিসিসহ ৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের মামলা বাতিল করার (মোশন টু ডিসমিস) আবেদন করে। বিভিন্ন আইনি প্রক্রিয়ার পর ২০২০ সালের ২০ মার্চ ফেডারেল আদালত ফিলিপাইনের বিভিন্ন বিবাদী কর্তৃক করা আবেদন খারিজ করে দিয়ে মামলাটি ফেডারেল কোর্টের পরিবর্তে স্টেট কোর্টে পরিচালনার নির্দেশ দেয়।

সেই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৭ মে বাংলাদেশ ব্যাংক আবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সুপ্রিম কোর্টে (স্টেট কোর্ট) আরসিবিসিসহ ফিলিপাইনের ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করে। মামলা করার পর ৬ বিবাদী ফেডারেল কোর্টের মতো এই কোর্টেও মামলা বাতিলের আবেদন করে। বিবাদীপক্ষের আবেদনের বিষয়ে ২০২১ সালের ১৪ জুলাই ও ১৪ অক্টোবর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

নিউইয়র্ক কাউন্টি সুপ্রিম কোর্ট ২০২২ সালের ৮ এপ্রিল মামলার আংশিক রায়ে দুই প্রতিষ্ঠানকে অব্যাহতি দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক আপিল আবেদন করে, যা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের ইতিহাসে রিজার্ভ চুরির সবচেয়ে বড় এই ঘটনা ঘটেছিল ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে। সেই রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। কম্পিউটার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে পাচার হওয়া এই অর্থ প্রথমে গিয়েছিল ফিলিপাইনের মাকাতি শহরের রিজাল ব্যাংকের চারটি ভুয়া অ্যাকাউন্টে। তারপর সেখান থেকে দ্রুত এই অর্থ উত্তোলন করে হ্যাকাররা।

পরে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের সহযোগিতায় মাত্র দেড় কোটি ডলার উদ্ধারে সমর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। এখনও উদ্ধার করা যায়নি ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার বা (১০৫ টাকা দরে) ৬৯৩ কোটি টাকা। এ ঘটনায় ফিলিপাইনের ম্যানিলায় বেশ কয়েকটি মামলা করা হয়েছে। মামলাগুলো এখনও চলমান।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Theme Created By Limon Kabir