যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ ব্যাপারে আমি বলব, কারও মনঃকষ্ট হওয়া উচিত নয়। আমরা জানি কিছুদিন আগে একটি দেশ র্যাবের ওপর একটি স্যাংশন দিয়েছিল বলে অনেকেই প্রথমে ঘাবড়ে গিয়েছিল। আমি বলেছিলাম, এখানে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী রোববার সকালে রাজধানীর কুর্মিটোলায় র্যাব সদর দপ্তরে বাহিনীটির ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশের শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য র্যাবের প্রতি আহ্বান জানান। রমজানের আগে কেউ যেন খাদ্য মজুত ও ভেজাল দিতে না পারে এবং সমাজ থেকে মাদকের অপব্যবহার, কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি এবং সাইবার অপরাধ নির্মূলে আরও মনোযোগী হতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বিশেষ করে র্যাবকে সজাগ থাকতে নির্দেশ দেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিশোর গ্যাং’ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে, এখানে মা-বাবারও দায়িত্ব রয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষক এবং জনপ্রতিনিধিদেরও দায়িত্ব রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে এবং যে কোনো ধরনের অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধেও তিনি ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশীদ হোসেন বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি এটা বলতে পারি, যারা এই ধরনের মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে বাংলাদেশের বদনাম করে, বাংলাদেশের একেকটা প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, তাদেরকে আমাদের চিহ্নিত করতে হবে। তারা কোন উদ্দেশ্যে করছে, সেটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু আমি সরকারে আছি, আমি একটা কথা বলতে পারি, কে ভালো করল, কে মন্দ করল, সেটার বিচার তো আমরাই করতে পারি, করে যাচ্ছি। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশ করে না; কিন্তু বাংলাদেশ করে। যে কোনো অপরাধের কিন্তু বিচার হয়। কেউ যদি কোনো অপরাধ করে, অবশ্যই সেটা আমরা নিজেরাই বলব। পরের কথা শুনে কেউ মন খারাপ করবেন না। নিজের আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে চলতে হবে, আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে হবে। সেটাই সবচেয়ে বড় কথা। বিরোধী কিছু শক্তি বিদেশে দেশের বদনাম করছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা জানি, দেশবিরোধী কিছু শক্তি আছে যারা বাংলাদেশ যত ভালো কাজই করুক না কেন, তারা কিছুই চোখে দেখে না। আরেকটা শ্রেণি আছে, তাদের অভ্যাসটাই হলো বিদেশিদের কাছে গিয়ে বাংলাদেশের বদনাম করা। এ ধরনের বদনাম করে বদনামকারীরা আর্থিক বা অন্যান্য সুবিধাও পেতে পারে।
সরকারপ্রধান বলেন, এটা আমাদের দেশ, আমরা রক্ত দিয়ে এর স্বাধীনতা এনেছি। কাজেই আমার দেশে যারা কাজ করে, তারা কে কী করে-না-করে, সেটা আমরা জানি। বিচারটা আমরা করব, সেই আত্মবিশ্বাস রেখেই কাজ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাইবার ক্রাইমের বিরুদ্ধেও আমাদের যথাযথ সতর্ক থাকতে হবে এবং ব্যবস্থা নিতে হবে। র্যাবসহ আমাদের সব গোয়েন্দা সংস্থাকে যথাযথ ভূমিকা নিতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি মানুষের কল্যাণের জন্য, অকল্যাণের জন্য নয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের আরেকটা বোঝা হচ্ছে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা। প্রতিনিয়ত সেখানে নানা ধরনের অপরাধ ঘটছে। এ ব্যাপারেও সবার আরও নজর দিতে হবে যেন কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে না পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসাবেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে আমাদের যাত্রা শুরু করব। এখন থেকেই আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। সেই প্রস্তুতি নেওয়ার জন্যই দেশের শান্তি ও নিরাপত্তা দরকার। দেশের উন্নয়ন দরকার এবং সেক্ষেত্রে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বাজায় রাখতে হবে।
সরকারপ্রধান বলেন, আমরা স্মার্ট জনগোষ্ঠী গড়ে তুলব, স্মার্ট অর্থনীতি হবে স্মার্ট বাংলাদেশে। সেই স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ বাস্তবায়ন করাটাই আমাদের লক্ষ্য। কিছু লোক থাকবেই সব সময় বিরোধিতা করতে। আর মাঝেমধ্যে কিছু উলটাপালটা কথাও বলবে। এগুলো কানে না নিয়ে নিজের আত্মবিশ্বাস নিয়ে, আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে আমরা আমাদের দেশের কল্যাণে সঠিক কাজ করছি কি না, সঠিক পথে আছি কি না, এই চিন্তাটা নিজেই করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
ভারতের কাছে চট্টগ্রাম ও সিলেট বন্দর ব্যবহারের প্রস্তাব : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে আঞ্চলিক যোগাযোগ জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। গভর্নিং কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন রাম মাধব প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে রোববার সাক্ষাৎ করেন। এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভারত চাইলে আমাদের চট্টগ্রাম ও সিলেট বন্দর ব্যবহার করতে পারে।’ বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিব কেএম শাখাওয়াত মুন এ তথ্য জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, এ অঞ্চলের যোগাযোগ বৃদ্ধি মানুষে মানুষে যোগাযোগ বাড়াতে সহায়ক হবে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় রাম মাধবের মাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে তার শুভেচ্ছা জানান। রাম মাধব বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে এবং আমি আশা করছি, ভবিষ্যতেও এই সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে।’ এ সময় উপস্থিত ছিলেন অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ মো. জিয়াউদ্দিন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।