অল্পদিনের ব্যবধানে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওতে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুর এলাকায় ইমাদ পরিবহনের বাস দুর্ঘটনা। গত রবিবার এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় ১৯ জন। বাসের নিয়ন্ত্রণ হারানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটলেও মৃতের সংখ্যা বেড়েছে গাড়িটি ২৪ ফুট নিচে ছিটকে পড়ায়। পরদিন ‘নকশায়ও নিরাপত্তাবেষ্টনী নেই’ শিরোনামে কালের কণ্ঠে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
গত রবিবার শিবচরের ঘটনার ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে আবার বাস দুর্ঘটনা ঘটে। এক্সপ্রেসওয়ের মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর এলাকায় দুটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারায়। এর মধ্যে একটি বাস সড়কের নিরাপত্তাবেষ্টনীতে ধাক্কা দিয়ে সড়কের ওপর উল্টে যায়। এতে দুজন আহত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, নিরাপত্তাবেষ্টনীর কারণে বাসটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে। না হলে বাসটি নিচের সড়কে পড়ে গেলে প্রাণহানি ঘটতে পারত।
বিবিএ সূত্র বলছে, কালের কণ্ঠ’র প্রতিবেদনটি তারা দেখেছে। প্রতিবেদনের শতভাগ সত্যতা রয়েছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের মূল নকশায় নিরাপত্তাবেষ্টনী ছিল না। মূলত নকশটি বিদেশিরা করেছে। তারা তাদের সড়কের সংস্কৃতি ও ধারণা থেকে এখানে নিরাপত্তাবেষ্টনী রাখেনি।
এদিকে মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণ নীতিমালা ২০২১-এর খসড়ায় বলা আছে, রক্ষণাবেক্ষণকাজের প্রয়োজনীয়তা যথাযথভাবে চিহ্নিত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট নীতিমালা ও ম্যানুয়ালের যথাযথ অনুসরণ এবং যথার্থ কার্যসম্পাদন নিশ্চিত করতে হবে। মাঠ পর্যায়ের প্রকৌশলীদের নিয়মিত পরিদর্শন অপরিহার্য বলে গণ্য হবে। শিবচরের দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বেশি হওয়ার পেছনে সড়কের নিরাপত্তাবেষ্টনী না থাকাকে বড় কারণ হিসেবে সরকারের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, একপ্রেসওয়ের উভয় পাশে গার্ড রেলিং (নিরাপত্তাবেষ্টনী) না থাকায় গাড়ি বিনা বাধায় রাস্তার পাশে ছিটকে পড়ে, মৃত্যু বাড়িয়ে দেয়।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামছুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, এখন নকশায় পরিবর্তন আনায় কোনো ক্ষতি হবে না। মাটি থেকে এত উঁচু সড়ক স্বাভাবিকভাবেই ঝুঁকিপূর্ণ। একটি গাড়ির ভেতর যাত্রীর জন্য যেমন সিটবেল্ট থাকে তেমনি সড়কের নিরাপত্তাবেষ্টনী হচ্ছে গাড়ির জন্য সিটবেল্ট। এতে দুর্ঘটনা ঘটলেও গাড়িকে সড়কের মধ্যে আটকে রাখা যাবে। হতাহতের সংখ্যা কমবে।
শামছুল হক বলেন, এমন সড়কের জন্য ‘ডাব্লিউ বিম’ হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তাবেষ্টনী। শিবচরের যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানে কিন্তু কোনো টানা রেলিং ছিল না। সড়কে দুর্ঘটনা ঘটলেও এত ওপর থেকে গাড়ি নিচে পড়তে দেব কেন?
পদ্মা সেতুর দুই পাশে ৫৫ কিলোমিটার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এটি দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে। এই সড়কের পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের দেড় কিলোমিটার ও জাজিরা প্রান্তের ১০ কিলোমিটার নির্মাণ করেছে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ। প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়কের বাকি কাজ করেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর।
মহাসড়কের সওজের নির্মিত অংশে নিরাপত্তাবেষ্টনী রয়েছে। ‘ডাব্লিউ বিম’ হচ্ছে এক ধরনের ঢেউ তোলা টিনের পাত। তবে এতে দুটি ঢেউ থাকে বলে দেখতে ইংরেজি ডাব্লিউ বর্ণের মতো দেখায়।
এক প্রশ্নের জবাবে বিবিএর সচিব মনজুর হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, নকশায় নিরাপত্তাবেষ্টনী যুক্ত করা হবে। তবে কিভাবে সেটা করা হবে সে বিষয়ে এখন আলোচনা চলছে। আলাদা প্রকল্প নেওয়া হবে কি না, সেটা নির্ভর করে খরচ ও আনুষঙ্গিক কাজের ওপর। আলাদা প্রকল্প নেওয়া না-ও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে পদ্মা সেতু প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত করেও নিরাপত্তাবেষ্টনী যুক্ত করা হতে পারে।