মোঃবুলবুল ইসলাম,কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
আগামীকাল (বুধবার) পূণ্যতোয়া খ্যাত ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী অষ্টমীর স্নান ও মেলা অনুষ্ঠিত হবে। স্নান উপলক্ষ্যে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র তীরে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে স্থানীয় প্রশাসন ও স্নান উৎসব কমিটি। ইতোমধ্যে হাজারো পূণ্যার্থী ব্রহ্মপুত্র তীরে উপস্থিত হতে শুরু করেছেন। উপজেলার রাজারভিটা এলাকায় বুধবার ভোর চারটা থেকে শুরু হয়ে ভোর সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত স্নানের উত্তম লগ্ন ধার্য করা হয়েছে। তবে দিনব্যাপী স্নান চলবে।
প্রায় ৪ শত বছর ধরে প্রতিবছর চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষের অষ্টমী তিথিতে এ পূণ্যস্নান সম্পন্ন করেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। চিলমারীর ব্রহ্মপুত্রের এ স্থানটিকে তারা তীর্থ স্থান হিসেবে বিবেচনা করেন। হিন্দু ধর্ম মতে, এটি একটি পূণ্য কর্ম এবং এই স্নানের মাধ্যমে তাদের পাপ মোচন ঘটে। এই পাপ মোচনের অভিপ্রায়ে লাখো পূণ্যার্থী সমবেত হন ব্রহ্মপুত্র তীরে।
প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও স্নান উদযাপনে জেলা ও জেলার বাইরে থেকে ব্রহ্মপুত্র তীরে পূণ্যার্থীরা আসতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে হাজার হাজার পূণ্যার্থী স্নান ঘাটের আশে পাশে অবস্থান নিয়েছেন। উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের বসতভিটায় তাদের আশ্রয়্রে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চিলমারীর ব্রহ্মপুত্র তীরের রমনা ঘাটের উত্তর দিক থেকে শুরু করে রাজারভিটা ভায়া রুকুনুদৌলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত অষ্টমীর স্নান ঘাট হিসেবে নির্ধারণ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। স্নান উপলক্ষ্যে ঘাট এলাকায় দিনব্যাপী মেলার আয়োজন থাকবে।স্নান ঘাট ইজারা গ্রহণকারীকে মেলার স্থানে এ বছর ছামিয়ানা টাঙানোর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এছাড়াও ঘাট এলাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
স্নান উৎসব কমিটির দেওয়া তথ্য মতে, অষ্টমী স্নান উপলক্ষ্যে চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র তীরে কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পূণ্যর্থীদের বিচরণ হয়। লগ্ন অনুযায়ী নিজেদের সুবিধাজনক সময়ে ধর্মীয় এ স্নান সেরে নেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। স্নান উৎসব নির্বিঘ্ন করতে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। পাশাপাশি স্নান ও মেলা উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। দুর-দূরান্ত থেকে আসা পূণ্যার্থীদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ, ও আনসার সদস্য ছাড়াও সেচ্ছাসেবী মোতায়েনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
প্রায় এক যুগেরও পর এবছর বুধবার স্নান অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এটি পূণ্যার্থীদের জন্য পবিত্র দিন বলে জানিয়েছে স্নান উৎসব কমিটি।
কমিটির সহ-সভাপতি তপন কুমার এনি বলেন, ‘ এ বছর দুই লক্ষাধিক পূণ্যার্থীর আগমন ঘটবে বলে আমরা ধারণা করছি। সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি সহ স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদাায়ের লোকজন পূণ্যার্থীদের নানা ভাবে সহযোগিতা করছেন। এছাড়াও স্নান ঘাট এলকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূণ্যার্থীদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মূলত মুসলিম সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় আমরা এই স্নান উৎব নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করি।’
চিলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, অষ্টমীর স্নান উপলক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। উৎসব নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে উপজেলা প্রশাসন থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।