তথ্য-প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা। ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে কমে আসছে মানুষের হয়রানি। ভূমি প্রশাসনে বাড়ছে স্বচ্ছতা। এখন যে কেউ মুঠোফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে নিজের জমির সর্বশেষ আপডেট জানতে পারবেন। এছাড়া ‘দলিল যার জমি তার’ নীতি বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। ফলে দখলদার যুগেরও অবসান ঘটছে।
এ লক্ষ্যে দেশে প্রথমবারের মতো আজ শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী জাতীয় ভূমি সম্মেলন-২০২৩। এই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমি মন্ত্রণালয়ের ৭টি উদ্যোগের উদ্বোধন করবেন। উদ্যোগগুলো হচ্ছে- রেজিস্ট্রেশন-মিউটেশন আন্তঃসংযোগ, স্মার্ট ভূমি নকশা, স্মার্ট ভূমি রেকর্ডস, স্মার্ট ভূমি পিডিয়া, স্মার্ট ভূমিসেবা কেন্দ্র এবং ইউনিয়ন ভূমি অফিস এবং জাতির পিতার স্মৃতি বিজড়িত লক্ষ্ণীপুরের রামগতিতে স্থাপন করা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্মৃতিস্তম্ভ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব গুচ্ছগ্রাম কমপেস্নক্স।
জাতীয় ভূমি সম্মেলনের অন্যান্য লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়ের গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে নাগরিক, সরকারি সংস্থা, অংশীজনদের অবহিত করানো, তাদের মধ্যে ভূমি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং ভূমি সংক্রান্ত বিদ্যমান আইন ও বিধিবিধান সম্পর্কে ধারণা দেওয়া।
ভূমি সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে চালু করা হয়েছে ই-নামজারি, ডিজিটাল ভূমি উন্নয়ন কর, ১৬১২২ কলসেন্টার, সোশ্যাল মিডিয়া ও কিয়স্কের মাধ্যমে ভূমিসেবা, ডিজিটাল সার্ভে, অনলাইনে জলমহালের আবেদন, ল্যান্ড ডাটা ব্যাংক, মর্টগেজ ডাটা ব্যাংক।
রেকর্ড হালনাগাদ তথা নামজারি, রক্ষণাবেক্ষণ, ভূমি রাজস্ব আদায় ইত্যাদি ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট কাজ। জরিপ পরিচালনা, জরিপ পরবর্তী স্বত্বলিপি বা রেকর্ড ও মৌজা ম্যাপ প্রণয়ন, সংরক্ষণ ও সরবরাহকরণ হচ্ছে সেটেলমেন্ট সংশ্লিষ্ট কাজ। আর জমির দলিলের নিবন্ধন ও সংরক্ষণ রেজিস্ট্রেশন সংশ্লিষ্ট কাজ। ডিজিটাল বাংলাদেশের আওতায় স্থাপিত সরকারের ডিজিটাল নাগরিক সেবা ইকোসিস্টেমে ভূমি মন্ত্রণালয় নাগরিক ভূমিসেবা অধিকতর কার্যকর ও দক্ষ করতে ‘ম্যানেজমেন্ট’, ‘সেটেলমেন্ট’ এবং ‘রেজিস্ট্রেশন’- কার্যক্রমের ডিজিটাল সিস্টেম সিনক্রোনাইজ করা হচ্ছে।
এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে দেশের কিছু মৌজায় ভূমিসেবা সহজীকরণ ও এর মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে পাইলট আকারে ই-রেজিস্ট্রেশন ও ই-মিউটেশন ব্যবস্থার মধ্যে সংযোগ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে সাব-রেজিস্ট্রার জমি রেজিস্ট্রেশনের পূর্বে ডিজিটাল রেকর্ডরুম সিস্টেম থেকে জমির রেকর্ড অনলাইনে যাচাই করতে পারবেন। একইভাবে রেজিস্ট্রেশনের সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেজিস্ট্রেশন দলিল ও বিক্রি হওয়া জমির তথ্য ই-মিউটেশন সিস্টেমের মাধ্যমে পেয়ে যাবেন, যার ভিত্তিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নামপত্তন কার্যক্রম শুরু করা যাবে। এভাবে দেশব্যাপী ই-রেজিস্ট্রেশনের সঙ্গে ই-মিউটেশনের সংযোগ স্থাপিত হলে মানুষের ভোগান্তি কমবে এবং সংশ্লিষ্ট রেকর্ড স্বয়ংক্রিয়ভাবে হালনাগাদ হতে থাকবে। ফলে মামলা ও জাল-জালিয়াতির সুযোগও কমে আসবে।
ভূমি ব্যবস্থাপনায় ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে ‘নাগরিক ভূমিসেবা’। মানুষ ১৬১২২ নম্বরে ফোন করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কমেন্ট বা মেসেজ (বার্তা) করে ভূমি বিষয়ক সেবা গ্রহণ করেছেন। জাতীয় ভূমিসেবা কলসেন্টার সেবাটি ‘নাগরিক ভূমিসেবা ২৪/৭’ নামে পরিচিত। ডিজিটাল সেবার কারণেই ভূমি অফিসে না গিয়েই ভূমিসেবা গ্রহণ করতে পারছেন দেশের নাগরিক। এতে মানুষের অর্থ-খরচ ও ভোগান্তি অনেকাংশে কমেছে। অসাধু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির সুযোগ কমেছে বহুলাংশে। ‘ভূমি অফিসে না এসেই নাগরিক যেন ভূমি সেবা পান এবং জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যেন কাউকে ভূমি অফিসে আসতে না হয়’- বর্তমান সরকারের ভূমি ব্যবস্থাপনা এভাবেই এগোচ্ছে।
এ বিষয়ে ভূমিমন্ত্রী এম. সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওপর দেশের জনগণের আস্থা ফিরে আসছে- এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন। সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করছেন দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় সত্যিই এক ইতিবাচক পরিবর্তন হচ্ছে। এছাড়া ভূমি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আইন প্রণয়নের কাজ চলছে, সেই সঙ্গে চলছে পুরনো আইন যুগোপযোগীকরণের কাজ। এসবের বেশকিছু স্বীকৃতি পেয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়, যেমন ইউনাইটেড ন্যাশনস পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড, উইসিস পুরস্কার, ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার এবং বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক অর্জন।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দিন অপরাহ্নে ও পরবর্তী দুই দিন স্মার্ট ভূমি ব্যবস্থাপনায় মাঠ প্রশাসন, ‘সায়রাত ও খাসজমি ব্যবস্থাপনা’, ‘অধিগ্রহণ ব্যবস্থাপনা, সরকারি মামলা ও সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাপনা’ এবং ‘বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপ’ শীর্ষক চারটি সেমিনার বা প্যানেল ডিসকাশন অনুষ্ঠিত হবে।