শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩৮ অপরাহ্ন

নির্ধারিত সময়ের আগেই মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন পরিকল্পনা

রিপোর্টারের নাম / ১৬২ বার দেখা হয়েছে
আপডেট করা হয়েছে

ক্যাপিটাল ওয়ান ও প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোয় কাজের সুযোগ পাচ্ছেন অটিজমসহ নানা ধরনের প্রতিবন্ধিতায় ভোগা ব্যক্তিরা। অটিজমে আক্রান্ত ব্যক্তির গভীর মনোসংযোগের ক্ষমতাকে উদ্ভাবনী শক্তিতে রূপান্তরে মনোযোগী হয়ে উঠেছে মাইক্রোসফটসহ সিলিকন ভ্যালির প্রযুক্তি খাতের জায়ান্টরাও।

বাংলাদেশেও বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানে এখন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে  তাদের অনেকেই এখন এসিআই, স্কয়ারসহ দেশের শীর্ষ করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোয় কর্মরত আছেন। আবার তাদের মধ্যে উদ্যোক্তা গড়ে তোলা নিয়ে কাজ করছে নগদ লিমিটেডের মতো কিছু প্রতিষ্ঠান। নিজ নিজ অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাহীরা জানিয়েছেন, শৈশব থেকে নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে এসব ব্যক্তিকে করপোরেট আবহাওয়ায় কাজের উপযোগী করে গড়ে তোলা সম্ভব। যথাযথ সুযোগ পেলে কর্মী বা উদ্যোক্তা হিসেবে ঈর্ষণীয় কর্মদক্ষতা দেখাতে সক্ষম তারাও।

প্রতিবন্ধিতা বা মনোদৈহিক বিশেষ চাহিদার মোট ১২টি ধরন রয়েছে এগুলো হলো অটিজম বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারস, শারীরিক, মানসিক অসুস্থতাজনিত, দৃষ্টি, বাক, বুদ্ধি, শ্রবণ, শ্রবণ-দৃষ্টি, সেরিব্রাল পালসি, ডাউন সিনড্রোম, বহুমাত্রিক ও অন্যান্য প্রতিবন্ধিতা। এর মধ্যে মস্তিষ্কের উন্নয়নজনিত সমস্যার কারণে সৃষ্টি হয় অটিজম বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার (এএসডি)। সারা বিশ্বে এএসডিতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এ বৈষম্য আর্থসামাজিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। অটিজমে আক্রান্ত প্রতিটি মানুষেরই শারীরিক ও মানসিকভাবে স্বাভাবিক মানুষের মতো জীবন উপভোগের অধিকার থাকলেও শুধু বৈষম্যের কারণে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা বলে উল্লেখ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অটিজমে আক্রান্তদের মূলধারার কর্মক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত করছে। পরিবারের বোঝা নয়, দক্ষ কর্মশক্তির অংশ হিসেবে জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছেন তারা।

আজ ১৬তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস ‘বর্ণনার রূপান্তর: বাড়ি, কর্মক্ষেত্র, শিল্পকলা এবং নীতিনির্ধারণ’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হচ্ছে। ডব্লিউএইচও বলছে, প্রতি ১০০ শিশুর মধ্যে একজন অটিজমে আক্রান্ত। প্রাথমিক শৈশবেই এএসডির বৈশিষ্ট্যগুলো শনাক্ত করা যেতে পারে। তবে প্রায়ই এএসডি উপসর্গ শনাক্ত করতে বিলম্ব হয়।

মস্তিষ্কে উন্নয়নজনিত অক্ষমতার কারণে এএসডি সমস্যার সৃষ্টি হয় উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) বলছে, এএসডিতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা মূলত জন্মগতভাবে এ সমস্যার (বংশগতভাবে) মধ্যে পড়েন একটি বিকাশগত অক্ষমতা—মস্তিষ্কের পার্থক্যের কারণে সৃষ্টি হওয়া সমস্যা হলো এএসডি। বেশির ভাগ কারণে তাদের এ সমস্যা বংশগতভাবে (জেনেটিক্যাল) হয়ে থাকে। তবে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন এএসডির একাধিক কারণ রয়েছে। এএসডিতে আক্রান্ত মানুষের বিকাশ স্বাভাবিক মানুষের মতো নয়। মূলত যোগাযোগ, আচরণ ও প্রতিক্রিয়া জানাতে তারা অক্ষম।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘অটিজম ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা হলো নিউরোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার। সাত ধরনের নিউরোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার বা স্নায়বিক সমস্যা রয়েছে অটিজম আক্রান্তদের কারো কারো বুদ্ধি ভালো থাকতে পারে। তাদের কারো কারো মানসিক দক্ষতা ভালো আবার কারো কম থাকে। অটিজমের ক্ষেত্রে একই আচরণ বারবার করা ও আচরণগত সমস্যা থাকতে পারে। আবার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীদের বেলায় তাদের সার্বিক আচরণজনিত সমস্যা থাকে, বুদ্ধি খাটিয়ে যৌক্তিকভাবে কোনো কাজ করতে পারে না। দুটি সম্পূর্ণ আলাদা। যদিও দুটিই নিউরোলটিক্যাল ডিজঅর্ডারের অন্তর্ভুক্ত। সব অটিজম বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নয়। তবে কারো কারো বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী সমস্যা থাকতে পারে। অটিজম আক্রান্তদের সমস্যা হলো যোগাযোগের ঘাটতি ও দক্ষতার অভাব, ভাবের আদান-প্রদানে সমস্যা, আচরণের পুনরাবৃত্তি করা। কেউ কেউ কথা বলতে পারে, কেউ কেউ পারে না।’

জাতিসংঘ সনদের ২৭ নম্বর আর্টিকেলে প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থানের কথা বলা হয়েছে সেই সঙ্গে তাদের জন্য উপযুক্ত কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করার কথাও বলা হয়েছে। জাতিসংঘ সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশও বিষয়টি বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিয়েছে। দেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ সালের কর্মসূচিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাকরির সংস্থান ও চাকরির ক্ষেত্রে সমান সুযোগের কথা খুব জোর দিয়ে বলা হয়েছে। আইনিভাবে প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থানের বিষয়টি স্বীকৃত। পাশাপাশি কোনো কোম্পানি যদি তাদের মোট জনবলের ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি নিয়োগ দেয়, তাহলে বার্ষিক করের ৫ শতাংশ ফেরত দেয়ার বিধান রয়েছে। একটা সময় পর্যন্ত দেশে প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে সচেতনতার ঘাটতি ছিল। অনেকেই বিষয়টি নিয়ে উন্মুক্ত ফোরামে আলোচনায় অস্বস্তি বোধ করতেন। তবে সরকারের বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচির কারণে এ বিষয়ে মানুষদের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। এখন অনেকেই প্রতিবন্ধীদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ব্যাপারে এগিয়ে আসছেন।

দেশের শীর্ষস্থানীয় সুপার স্টোর এসিআই লজিস্টিকস লিমিটেড (স্বপ্ন) প্রতিষ্ঠানটির নীতিমালা অনুসারে মোট জনবলের ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধীদের মাধ্যমে পূরণের কথা বলা হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি তাদের চাহিদা অনুসারে জনবল না পাওয়ার কারণে ১০ শতাংশ কোটা পূরণ করতে পারছে না। বর্তমানে সুপারস্টোরটিতে ৩০ জন প্রতিবন্ধী কর্মরত রয়েছেন। তাদের পারফরম্যান্স নিয়ে উচ্ছ্বসিত প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, প্রতিবন্ধীরা কাজের বিষয়ে শতভাগ নিবেদিত। সুপারস্টোরের ব্যবসার ধরনের কারণে মানুষের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগের কাজ বেশি। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে গ্রাহকদের যোগাযোগের ঘাটতির সমস্যা দেখা গেছে। তবে এটি মোটেও তাদের কর্মসংস্থানের পথে অন্তরায় নয়।

এ বিষয়ে স্বপ্নের নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা তাদের প্রতিবন্ধী বলি না তারা ভিন্নভাবে সক্ষম। কর্মক্ষেত্রে তাদের স্থায়িত্ব বেশি থাকে। প্রতিষ্ঠানের প্রতি তারা অনেক বেশি আন্তরিক ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাদের উৎপাদনশীলতাও বেশি। এমনকি আমরা ভিন্নভাবে সক্ষম উদ্যোক্তাদের পণ্যও আমাদের স্টোরে রাখছি। আমরা চাহিদা অনুযায়ী কর্মী পাচ্ছি না। যেসব এনজিও তাদের নিয়ে কাজ করে তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে তারা যেন আরো বেশি প্রশিক্ষিত কর্মী আমাদের সরবরাহ করেন। পাশাপাশি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিও আমাদের আহ্বান থাকবে তারাও যেন তাদের নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে আসেন।’

দেশের অন্যতম কনগ্লোমারেট স্কয়ার গ্রুপ। গ্রুপটির ওষুধ ও বস্ত্র ব্যবসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধীরা কাজ করছেন বর্তমানে সব মিলিয়ে গ্রুপটিতে দুই শতাধিক প্রতিবন্ধী কর্মরত রয়েছেন। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘স্কয়ার গ্রুপের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধী কর্মীরা কাজ করছেন। আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবেই আমরা তাদের নিয়োগ দিয়েছি। তাদের কর্মদক্ষতার প্রতি আমরা সন্তুষ্ট। তারা প্রতিষ্ঠানের প্রতি অনেক বেশি নিবেদিতপ্রাণ হয়ে থাকেন। আমরাও তাদের সম্মান করে থাকি।’

দেশের তৈরি পোশাক খাতসহ বিভিন্ন খাতের প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে প্রতিবন্ধীরা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন কেয়া গ্রুপের কারখানায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রতিবন্ধী কর্মী কাজ করছেন। এছাড়া একে খান গ্রুপ, উর্মি গ্রুপ, শিন শিন গ্রুপ, টিম গ্রুপ, ডোমিনোজ পিত্জা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এসওয়াইএস সলিউশন, প্রেডিকশন লার্নিং অ্যাসোসিয়েশন, ক্যাটালিস সলিউশনের মতো প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধীরা রয়েছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Theme Created By Limon Kabir