বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৫ অপরাহ্ন

সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এক ভর্তি পরীক্ষা!

রিপোর্টারের নাম / ২৬৭ বার দেখা হয়েছে
আপডেট করা হয়েছে রবিবার, ২ এপ্রিল, ২০২৩, ২:৪৫ অপরাহ্ন

গুচ্ছ পদ্ধতির পর এবার দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা একসঙ্গে নিতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি (এনটিএ) গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তদারক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তথা সবাইকে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করার জোর তৎপরতা চলছে। এর জন্য নীতিমালা তৈরি করতে আগামীকাল সোমবার (৩ এপ্রিল) ইউজিসির সভাকক্ষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে নীতিনির্ধারণী কমিটির সভা ডাকা হয়েছে। সভায় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য সমিতির সভাপতিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে সরকার। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় আপাতত এ বিষয়ে কোনো চিন্তা করছে না বলে খবর এসেছে।

গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলছেন, বর্তমানে যে পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয় তা বিজ্ঞানসম্মত নয়, গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিও নয়। উন্নত বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পদ্ধতি যাচাই-বাছাই করে ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটির প্রবর্তন করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলমান ভর্তি পরীক্ষার বিকল্প হিসেবে এ পরীক্ষা পদ্ধতির উদ্ভাবন করা হবে বলে জানান তিনি।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে এবং আর্থিক সাশ্রয়ের লক্ষ্যে তিনটি গুচ্ছে বর্তমানে ৩৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটের মতো বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই প্রক্রিয়ায় আসেনি। এ ছাড়া একটি ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হয়ে থাকে।

অভিযোগ রয়েছে, কয়েক বছর ধরে সাধারণ ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ধারার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হলেও এ পদ্ধতিতে দীর্ঘসূত্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ভর্তি করতে গিয়ে ১০ বার পর্যন্ত মেধাতালিকা প্রকাশ করেছে। এরপরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত আসন পূরণ করতে না পেরে আসন শূন্য রেখেই ক্লাস শুরু করেছে। চলমান গুচ্ছ পদ্ধতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে ইতোমধ্যে এ পদ্ধতিতে অংশ নিতে অনাগ্রহ দেখিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

যদিও ইউজিসি থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়েছে, গত শিক্ষা বছরে গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সব বিশ্ববিদ্যালয় এবারও একই পদ্ধতিতে পরীক্ষায় অংশ নেবে। একই সঙ্গে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দ্রুত ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ ও ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ক্লাস শুরুর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ইউজিসির পক্ষ থেকে। ভর্তি পরীক্ষা প্রক্রিয়া সহজ ও শিক্ষার্থীবান্ধব করতেও ইউজিসির পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে নির্দেশনা।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একক ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত নীতিনির্ধারণী সভা ও এনটিএ গঠনের বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার ইউজিসির সচিব ড. ফেরদৌস জামান এক চিঠিতে বলেছেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে গত ২৭ মার্চ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিচালন নীতি ও শিক্ষার মানোন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় আগামী বছর থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়কে একক আওতাভুক্ত করে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, পর্যায়ক্রমে এনটিএ (ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি) গঠন করতে হবে। ইউজিসিকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য পরবর্তী করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে সভা হবে। সভায় শিক্ষা উপমন্ত্রী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব উপস্থিত থাকবেন।

ইউজিসিসহ সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ভারতসহ উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে নির্দিষ্ট অথরিটি রয়েছে। তারা পরীক্ষা নিয়ে স্কোর দেয়। স্কোরের ভিত্তিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। বিষয়টি আইইএলটিএস, জিআরই (গ্র্যাজুয়েট রেকর্ড এক্সামিনেশন)-এর মতো। বাংলাদেশেও সে ধরনের সংস্থা গঠনের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এতে ভারতীয় মডেলটি আলোচনায় আসছে বেশি। ভারতে এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়ে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয় শিক্ষার্থীদের।

বাংলাদেশে এ ধরনের সংস্থা গঠন হলে সেখানে একজন চেয়ারম্যান থাকবেন। এ ছাড়া একটি নির্দিষ্ট বোর্ড থাকবে, যেখানে পিএসসির আদলে শুধু একাডেমিশিয়ানরা থাকবেন। পাশাপাশি অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাও বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করবেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেবে বোর্ড। পরীক্ষার জন্য একটি প্রশ্নব্যাংক থাকবে। পরীক্ষা হবে কম্পিউটারভিত্তিক। অঙ্ক থাকলে সেটি খাতায় লিখে আপলোড করতে হবে। সঙ্গে ভাইভাসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া অনুসরণ করে স্কোর দেওয়া হবে। সেই স্কোরের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবেন। এ ধরনের পরীক্ষা বছরে দুইবার হতে পারে। জানুয়ারি ও বছরের মাঝামাঝি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউসিজির একজন সদস্য বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে আগামীকাল সোমবার বৈঠকটি হবে। বৈঠক থেকে এ সংক্রান্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হবে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে কীভাবে এনটিএ-তে আনা যায় তা হবে মুখ্য আলোচনা। তিনি জানান, যেহেতু বড় পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে আসেনি, তাই তাদের এনটিএ-তে আনার বিষয়ে বেশি আলোচনা হবে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বৈঠকের কোনো চিঠি পাইনি। চিঠি পেলে সিদ্ধান্ত নেব কী করা যায়।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম বলেন, ‘পরবর্তী শিক্ষাবর্ষ থেকে সরকার ও ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা একাডেমিক কাউন্সিল এবং সিন্ডিকেটে আলোচনা করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট যে সিদ্ধান্ত নেবে সেভাবেই আমরা ভর্তি পরীক্ষা নেব।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচর্য ড. সুলতান-উল-ইসলাম টিপু বলেন, ‘সরকারিভাবে নির্দেশনা পেলে আমরা একাডেমিক কাউন্সিল এবং সিন্ডিকেটে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’

তবে ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ গুচ্ছ পদ্ধতিকেই সমর্থন করেন। তিনি বলেন, ‘গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করায় দেশবাসী আমাদেরকে উষ্ণ অভিবাদন জানিয়েছে। তারা বলেছে এটি একটি ভালো পরীক্ষা পদ্ধতি। নতুন পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে। তাই বলে এখান থেকে পিছু হটার বা বের হয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা যাতে ভালো ও সর্বজনস্বীকৃত পদ্ধতি হয় সেজন্য উপাচার্য ও সংশ্লিষ্টদের তিনি আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Theme Created By Limon Kabir