মুজতবা হাকিম প্লেটো:
যুক্তরাষ্ট্রর নেতৃত্বে পশ্চিমা শক্তি আওয়ামী লীগ সরকারের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করে চলেছে। স্যাংশন থেকে শুরু করে গণতন্ত্র কোনো অস্ত্রই অলস ফেলে রাখছে না।
প্রশ্ন হচ্ছে: কোন শক্তি শেষমেশ বাংলাদেশে সফল হতে যাচ্ছে?
সম্প্রতি বিশ্ব রাজনীতি মোড় ঘুরতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এই শক্তিগুলোর পরিস্থিতি বিচার করলেই বোঝা যাবে কী হতে পারে।
ভারত, চীন, সৌদি আরব এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের গুণে চলতে হয়। এরপরেই রয়েছে রাশিয়া, ইউরোপসহ অন্য কয়েকটি দেশ।
বাংলাদেশের বৈদেশিক উপার্জনের রেমিটেন্স আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আর পোশাক বিক্রি আয় হয় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র ইউরোপ থেকে। চীন ও ভারত এই অর্থনীতির পশ্চাৎ সংযোগ হিসেবে কাজ করে। কোনোটাই ফ্যালনা নয়।
এই দেশগুলোর পারস্পরিক সম্পর্কগুলো আগে দেখে নেওয়া যাক। ভারতের সঙ্গে চীনের দ্বন্দ্ব রয়েছে। ফলে চীনের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের সখ্য গড়ে ওঠায় ভারত নাখোশ এমন কথা আলোচিত হচ্ছিল। এছাড়া সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ভারত মার্কিনের আরো কাছে চলে যায়। এ অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থরক্ষক হিসেবে ভারতকে দেখা হয়।
এতদিন সৌদি আরবের উপর যুক্তরাষ্ট্রের একক আধিপত্য ছিল। চীনের দূতাওয়ালীতে ‘চির শত্রু’ ইরানের সঙ্গে সমঝোতার ঘোষণার পর সৌদি আরব পূর্বের অবস্থান থেকে সরে ‘বৈচিত্রময়’ পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণের কথা বলছে। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও রাশিয়া চীন ভারতসহ সবার সাথেই সম্পর্ক গড়তে যাচ্ছে। ফলে ভায়া সৌদি আরব মার্কিন ধমক আগের মত সম্ভব না; অন্তত রেমিটেন্সে হাত পড়বে না।
অন্যদিকে, চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের ঘাটতির কারণ সীমান্ত সমস্যা এবং পাকিস্তানের সঙ্গে গভীর মিত্রতা। লক্ষ করুন, নতুন যে প্রভাব বলয় গড়ে উঠছে তাতে সামিল হয়েছে রাশিয়া, চীন, ভারত, ব্রাজিলের পাশাপাশি পাকিস্তানও। এছাড়া ভারত মার্কিনের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারও। ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ-মার্কিন দ্বৈরথে স্পষ্ট হয়েছে ভারত এককভাবে যুক্তরাষ্ট্রের আনুগত্য করবে না। ফলে আগামী দিনে নয়া বলয়ের শক্তি বৃদ্ধির সাথে সাথে ভারত-পাকিস্তান এবং ভারত-চীন দ্বন্দ্ব আগের মত থাকবে না। বলয়ভুক্ত দূতাওয়ালীর মাধ্যমে অনেক কিছু্র মীমাংসা হয়ে যাবে। যা হয়তো ভেতরে ভেতরে শুরু হয়েও গেছে। যে কারণে চীনের প্রতি বাংলাদেশের দুর্বলতায় ভারত নড়েচড়ে বসলেও এখন পরিষ্কার তারা শেখ হাসিনার বিরোধী শিবিরে মদদ দেবে না।
আওয়ামী লীগের কিছু অন্ধ শত্রু রয়েছে—দেশে যেমন জামাত-বিএনপি, বাইরে পাকিস্তানের সামরিক শক্তি; তাদের দক্ষিণ এশিয়ো রণকৌশলের কারণে। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা এখন এতই নাজুক যে তার বাংলাদেশ নিয়ে ভাবাটাই অযৌক্তিক। ফলে সরকার হটাতে লিপ-সার্ভিস থাকলেও পাকিস্তানী বড় ফুয়েল মিলবে না।
এ অবস্থায় আওয়ামী সরকার বিরোধী তৎপরতায় প্রকাশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যে কারণে জামাত-বিএনপির ছাড়াও এদেশের পশ্চিমা সহায়াতাজীবী সিভিল সমাজ সরকারের বিরোধিতায় জড়িত। তাদেরই অনুগত পত্রিকা প্রথম আলো।
মায়ের ডাকের বিপরীতে মায়ের কান্না হাজির করলেও সরকার যে মার্কিন শক্তিকেও যথেষ্ট আমলে নেয় তার বহু প্রমাণ রয়েছে। এমন কি মার্কিন স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে রাশিয়ার ধমক হজম করতে হয়েওছে। আবার যুক্তরাষ্ট্রে আওয়ামী লীগ যে তাদের লবি জোরদার করেছে তার সাম্প্রতিক প্রমাণ মার্কিন কংগ্রেসে বাংলাদেশ উন্নয়ন বিল উত্থাপন।
মনে রাখা দরকার খালেদা জিয়ার ‘ডাল-ভাত’র স্লোগানের পাল্টা হিসেবে শেখ হাসিনা ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ স্লোগান আনে। মাছ-মাংসের স্বাধীনতা আওয়ামী লীগের গত ১৪ বছরের কৃষি উৎপাদনের কৌশলের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। ফলে সরকারকে বুঝতে হবে তারা সম্পদ বণ্টনে এবং প্রচারে কোন কৌশল নেবে।
২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও যুক্তরাষ্ট্রের আওয়ামী সরকার নিয়ে রিজার্ভেশন ছিল। এবার তা আরো একটু চড়া হয়েছে। তবে যতটুকু প্রকাশ্য তাতে সরকার পড়ে যাবে না। আসছে নির্বাচনেও আওয়ামী ক্ষমতায় আসবে; যদি না কতিপয় অর্থলোভী লীগার বেমক্কা কাণ্ড ঘটনায়। সরকার ফেলে দিতে আচমকা কাণ্ডই একমাত্র বিরোধীদের ভরসা। সরকারকে আচমকা কাণ্ড ঠেকাতে নিজের লোকদের প্রতিও সতর্ক থাকতে হবে। অতি উৎসাহ আদতে উৎসাহ না।
মুজতবা হাকিম প্লেটো
লেখক,সাংবাদিক