দুবাইয়ে স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করে আলোচনায় আসা পুলিশ হত্যা মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানের প্রথম স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার কেয়াও দেশ ছেড়েছেন। তিনি একই মামলার আসামি ছিলেন। কেয়া মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার গাড়াডোব গ্রামের মেয়ে। সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়ে মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামে শাহিন নামের একজনকে বিয়ে করেন তিনি। এরপর থেকে স্বামীর সঙ্গে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন কেয়া।
কেয়ার বাবা আবুল কালাম আজাদ জানান, কেয়ার মা মনোয়ারা বেগম সম্পর্কে তার খালাতো বোন। ১৯৯৬ সালে মনোয়ারার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। এরপর থেকেই তাদের সংসারজীবন ভালোই চলছিল। কিন্তু ২০০০ সালে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে একটি মামলায় জেল হয় আবুল কালাম আজাদের। তখন কেয়ার বয়স মাত্র ৩ বছর। মাঝেমধ্যে মেয়েকে নিয়ে জেলখানায় তাকে দেখতে যেতেন তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম।
কিন্তু দীর্ঘদিন জেলে থাকার কারণে তাদের সংসারে ফাটল ধরে। এরই মাঝে বড় হতে থাকে কেয়া। ২০১১ সালে জেল থেকে বের হয়ে আসেন আবুল কালাম। এসে জানতে পারেন তার স্ত্রী তাকে তালাক দিয়েছেন। কিন্তু কোনো কাগজপত্র দেননি। মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলেও পারেননি।
স্ত্রী মনোয়ারা খাতুন পরবর্তীতে বিয়ে করেন মেহেরপুর সদর উপজেলার গোভিপুর গ্রামের এক হোমিও চিকিৎসককে। পরে তারা ঢাকায় চলে যান। ২০১৩ সালে এসএসসি পাস করেন কেয়া। তার মা তাকে বাবার অমতে ভর্তি করে দেন ঢাকার একটি ম্যাটস কলেজে। এরপর থেকেই মেয়ের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ ছিল না আবুল কালাম আজাদের।
তিনি আরও জানান, ঢাকায় ভর্তি হবার কিছুদিন পরই শুনতে পান তার মেয়ে সম্পর্কে জড়িয়েছেন আপন (বর্তমান আরাভ খান) নামের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে। পেশায় জুয়েলারি ব্যবসায়ী। তারা বিয়েও করেছে। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে কেয়া তার স্বামী আপনকে নিয়ে দুইবার বাবার বাড়ি সংলগ্ন খালার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। তখন বিলাসবহুল জীবনযাপন করতো তারা। কিন্তু বিভিন্ন মারফত আবুল কালাম আজাদ জানতে পারেন তার মেয়ে ও জামাই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।
এরপরই কিছুদিন যেতে না যেতেই খবর আসে কেয়া একটি পুলিশ হত্যা মামলার আসামি। পরে জেলেও যেতে হয় কেয়াকে। এ সময় আপন তালাক দেয় তাকে। দীর্ঘ কয়েক বছর হাজতবাস করার পর ২০২২ সালে জামিনে মুক্তি পায় কেয়া। পরে মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের শাহিন নামের এক যুবককে বিয়ে করেন কেয়া। তার পর পরই ওই স্বামীর সঙ্গে মালয়েশিয়ায় চলে যান তিনি।
গাংনী থানার এসআই জিল্লুর বলেন, কেয়া নামের ওই মেয়ের সম্পর্কে আমাকে খোঁজ নিতে বলা হয়েছিল। আমি তার খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারি, কেয়া এখন মালেশিয়ায় তার দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে বসবাস করেন।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সুরাইয়া আক্তার কেয়া একটি হত্যা মামলার আসামি। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য চেষ্টা করছে পুলিশ। তার সম্পর্কে অনেকেই ভিন্ন ধরনের তথ্য দিচ্ছে। কেউ বলছেন, দুবাই আছে আবার কেউ বলছেন মালয়েশিয়া আছেন। আমরা চেষ্টা করছি তার অবস্থান জানার।