বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকা দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতালের প্রথম দিন গতকাল রবিবার রাজধানীর জনজীবনে তেমন প্রভাব পড়েনি। গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীতে যানবাহনের চাপ ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে গণপরিবহন। কোথাও কোথাও চিরচেনা যানজটও ছিল। হরতালকে উপেক্ষা করে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমও চলেছে। কয়েক জায়গায় ঝটিকা মিছিল হলেও কোনো নাশকতার ঘটনা ঘটেনি।
রাজধানীর গাবতলী, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড, আসাদগেট, মিরপুর সড়ক, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, কারওয়ানবাজার, বাংলামোটর, প্রেস ক্লাব, পল্টন, গুলিস্তান, দৈনিক বাংলা, মতিঝিল ডেমরা, সাইনবোর্ড, জুরাইন, ধোলাইপাড়, দয়াগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদ এলাকায় গতকাল ব্যক্তিগত যানবাহনের পাশাপাশি গণপরিবহনও চলেছে। দূরপাল্লার বাস চলাচল কিছুটা কম থাকলেও, লোকাল সার্ভিসের বাস ছিল বিগত দিনের হরতাল-অবরোধের তুলনায় অনেক বেশি। সেই সঙ্গে লেগুনা, পিকআপ, কাভার্ড ভ্যান, সিএনজি অটোরিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন ছিল চোখে পড়ার মতো।
জুরাইন রেলগেটে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রোডের আনন্দ, বোরাক রাইদা ও নগর পরিবহনের বিআরটিসি বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করছে। এছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ি, ট্রাক, লড়ি, কাভার্ড ভ্যানসহ অন্যান্য পণ্যবাহী পরিবহনও চলতে দেখা যায়। কিন্তু দক্ষিণ অঞ্চলের দূরপাল্লার বাস চলাচল ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে কম।
যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা গিয়ে দেখা যায়, লোকাল বাসসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল গত হরতাল-অবরোধের তুলনায় অনেক বেড়েছে। যানবাহন চলছে স্বাভাবিক দিনের মতোই। এমনকি, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবহনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের।
সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে পূর্বাঞ্চলের কিছু বাস ছেড়ে গেছে। অনেক বাস আবার ঢাকায়ও প্রবেশ করেছে। বরাবরের মতো যাত্রী কিছুটা কম হওয়ার কারণে বাসগুলো যথাসময়ে যেতে পারছে না বলে জানান কুমিল্লা রুটের বাসের চালক আবুল। গতকাল বিকালে মালিবাগ রেলগেটে রাইদা পরিবহনের হেলপার জুয়েল জানান, আগের হরতাল-অবরোধের চেয়ে গতকাল রবিবার অনেক গাড়ি রাস্তায় বের হয়েছে। যদিও গত শনিবার রাতে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় কয়েকটি গাড়ি জ্বালিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। তবু তারা আতঙ্কের মধ্যে গাড়ি বের করেছেন। সকালে যাত্রীর চাপ বেশি ছিল বলেও জানান তিনি।
আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে স্কুলগুলোকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা শেষ করতে বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরই ধারাবাহিকতায় মোহাম্মদপুর এলাকার স্কুলপাড়া হিসেবে পরিচিত আসাদ এভিনিউ, ইকবাল রোডসহ আশপাশের এলাকার অনেক স্কুলের কার্যক্রম চালু ছিল। অভিভাবকরা অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে বাচ্চাদেরকে স্কুলে নিয়ে এসেছেন। তবে মেট্রোরেল চলাচলে হরতালেও যাত্রীদের সুবিধা হয়েছে উল্লেখ করে উত্তরা থেকে আসা সুমন শাহরিয়ার তুহিন বলেন, মতিঝিল আসতে তার কোনো সমস্যা হয়নি। মেট্রোরেলে করে ৩০-৩৫ মিনিটেই মতিঝিলে চলে এসেছি। তবে পুরো সময় ধরে চললে রাতেও নির্বিঘেœ ফেরা যেত বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে, গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি থাকলেও ৪৮ ঘণ্টার হরতালের সমর্থনে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তরের আয়োজনে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি মিরপুর-২ নম্বর বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মসজিদ মার্কেটের সামনে এসে পথসভার মাধ্যমে শেষ হয়। ওইদিনই দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হরতালের সমর্থনে মিছিল করে বিএনপির আরেক যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী গণতন্ত্র মঞ্চ। পল্টন মেহেরবা প্লাজার সামনে থেকে গণতন্ত্র মঞ্চের মিছিল শুরু হয়ে বিজয় নগর, নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
এছাড়াও পাঁচ দফা অবরোধের পর বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকা দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতালের প্রথম দিন গতকাল সিদ্দিকবাজারের কাজী আলাউদ্দিন রোডে ওয়ানস্টার হোটেলের সামনে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটালে তাতে আগুন ধরে যায়। ফায়ার সার্ভিসের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার জানান, সিদ্দিকবাজার ফায়ার স্টেশনের দুটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভায়।
এদিকে, গত ১৫ ঘণ্টায় দেশব্যাপী ১১টি আগুন লাগার সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস। সবচেয়ে বেশি ঢাকা সিটিতে ৫টি যানবাহনে আগুনের ঘটনা ঘটে। র্যাব লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বিএনপি, জামায়াত ও সমমনা বিরোধী দলগুলোর ডাকা ৪৮ ঘণ্টার হরতালকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৪৬০টি টহল দল মোতায়েন করা হয়েছে। হরতালের প্রথম দিনে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ঢাকায় শুধু র?্যাবের ১৬০টি টিম মোতায়েন রাখা হয়েছে।