শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৩৯ পূর্বাহ্ন

সাংবাদিক সংগঠনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ গণতন্ত্রের জন্য হুমকি নয় কি?

রিপোর্টারের নাম / ৭৮২ বার দেখা হয়েছে
আপডেট করা হয়েছে


স্বপন চন্দ্র দাস

আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ-এই তিনটি মূল স্তম্ভের উপর গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা পরিচালিত হয়ে থাকে। আর চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে গণমাধ্যমকে।

রাষ্ট্র শাসনের দায়িত্বে থাকা জনপ্রতিনিধিদের গৃহীত কর্মকান্ড সম্পর্কে সাধারণ জনগনকে অবহিত করতে পারে গণমাধ্যম। আবার জনগনের সমস্যা-সম্ভাবনা শাসনকার্যে থাকা জনপ্রতিনিধিদের সামনে তুলে ধরতে পারে গণমাধ্যম। এ কারণে গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রের আয়না বলা হয়ে থাকে। তাই একটি রাষ্ট্রের উন্নয়নে গণমাধ্যম কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে সেটা সর্বজনবিদিত।

এ কারণেই হয়তো বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার তাদের টানা তিন দফা ক্ষমতার মেয়াদে গণমাধ্যমের বিকেন্দ্রীকরণ ঘটিয়েছে। একের পর এক পত্রিকা, নিউজ চ্যানেল অনুমোদন দিয়ে নতুন নতুন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠার দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। এসব সংবাদ মাধ্যম সরকারের ভাল- মন্দ উভয় দিক তুলে ধরে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হচ্ছে। তৃণমূল থেকে শুরু করে দেশের আনাচে-কানাচে ঘটে যাওয়া ঘটনার খবর তাৎক্ষণিক পাঠকের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে গণমাধ্যমের কল্যাণে। আবার একেবারে পিছিয়ে পড়া জনপদের সমস্যা আর সম্ভাবনার উঠে আসছে মিডিয়ার বিকেন্দ্রীকরণের কারণেই।

সব মিলিয়ে এটা অনস্বীকার্য দেশ, জনপদ ও জনগনের উন্নয়নে স্বাধীন গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বর্তমান সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী বলেই তাঁর সরকার আমলে স্মরণকালের সর্বোচ্চ মিডিয়া প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে গণমাধ্যমের অবারিত স্বাধীনতা আছে বলেই পত্রিকা, টিভি চ্যানেল আর অনলাইনগুলো সরকারের ত্রুটিগুলো তুলে ধরতে পারছে।

এতকিছুর পরও কতিপয় ব্যক্তি নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার জন্ম দিয়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। প্রভাব প্রতিপত্তি টিকিয়ে রাখার জন্য গণমাধ্যমের টুটি চেপে ধরে তারা। ক্ষমতার দাপটে গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকদের সংগঠনকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। সরকার দলের প্রভাবশালী দু-একজন ব্যক্তির কারণে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সম্পূর্ণ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে ওঠে।

সাংবাদিকদের সংগঠন প্রেসক্লাব, সাংবাদিক সমিতি বা রিপোটার্স ইউনিটি এগুলো সম্পূর্ণ রাজনীতি মুক্ত সংগঠন। ব্যক্তি সাংবাদিক যে কোন দলের সমর্থক বা কর্মী হতে পারেন। কিন্তু তার পেশা সংশ্লিষ্ট সংগঠন সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক। আর সেভাবেই এসব সংগঠনের সংবিধান রচিত হয়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে মিডিয়াকে অবারিত স্বাধীনতা দিয়েছেন, সেখানে তার দলের কতিপয় নেতা নিজেদের স্বার্থের জন্য সাংবাদিক সংগঠনকে দলের অঙ্গ সংগঠনের মতো ব্যবহার করবেন এটা কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এর ফলে সরকার ও স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামীলীগ জনগনের কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের পরেই গণমাধ্যমের স্থান। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃত গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন নিশ্চয়ই প্রথম শ্রেণীর সংগঠন। সকল মহলের নজর থেকে এই সংগঠনটির উপর। আর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এ সংগঠনে নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে-প্রশাসন থেকে শুরু করে সকল মহল এটাই চায়। এখানে দলের হস্তক্ষেপ কেউ কখনোই চায় না। খোদ সরকার দলের অধিকাংশ নেতাই চান গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রেসক্লাব বা যে কোন সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচিত হোক। কারণ প্রেসক্লাবসহ সাংবাদিকদের যে কোন সংগঠনকে বলা হয়ে থাকে মুক্তমঞ্চ। এখানে দলমত নির্বিশেষে সকল মানুষ আসবেন তাদের কথাগুলো বলবেন। সাংবাদিকরা নিজ নিজ মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের কথা জনগনের কাছে তুলে ধরবেন। এ সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ রাষ্ট্রের গণতন্ত্রকেই হুমকির মুখে ফেলবে নয় কি?

লেখক: সাংবাদিক, বাংলানিউজ ও দৈনিক কালবেলা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Theme Created By Limon Kabir