সত্তরের বৃদ্ধ, দেশের জ্যেষ্ঠ নাগরিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল করিম। এখন বসবাস কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার একটি গ্রামে। সরকারি কর্মজীবন থেকেও বয়সের ভারে অবসরে। সেরে নিচ্ছেন জায়গা-জমি ভাগ-বণ্টনসহ অন্যান্য কাজ। টেলিফোনে কথা বলতেই আনন্দে আটখানা বীর মুক্তিযোদ্ধা স্ব-গৌরবে জানালেন– মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন জমি সংক্রান্ত শুনানীর জন্য নিজ পৈত্রিক ঠিকানা দৌলতপুর উপজেলার ভূমি অফিসে যাওয়ার। দীর্ঘ এই পথে তাঁকে চলতে হবে ইজিবাইক অথবা যন্ত্র চালিত কথিত পাখি ভ্যানে। আব্দুল করিম জানতে পারলেন দৌলতপুর ভূমি অফিস তাঁকে সেবা দিতে পারবে উপজেলার যেকোনো তহসিল অফিস থেকেই। সেক্ষেত্রে আব্দুল করিমের পথ কমে গেলো অর্ধেকেরও বেশি, একেবারেই চিন্তা নেই দীর্ঘ সারিতে অপেক্ষার! আব্দুল করিমকে আগে থেকে জানিয়ে দেয়া শুনানীর সময়েই সংযুক্ত করা হলো অনলাইন ভিডিও কনফারেন্সে। একদিকে সেবা গ্রহীতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল করিম, অন্যদিকে সহকারী কমিশনার (এসি ল্যান্ড) আফরোজ শাহীন খসরু।
দৌলতপুরের হাড়াভাঙ্গার গোলেজান নেছা, আব্দুল হামিদের মতো আরও অনেকেই নিজের কাজ সেরে নিচ্ছেন ডিজিটাল সেবার সহজ জীবনে। কুষ্টিয়ার বিশাল আয়তনের সীমান্তবর্তী উপজেলা দৌলতপুরে ভূমি উন্নয়ন কর এখন শতভাগ আদায় হচ্ছে অনলাইনেই। সবশেষ অর্থ-বছরে ২ কোটি ১৬ লাখ রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে বাড়তি আদায় হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ টাকা। প্রতিবেদন লেখার দিন ২৪ জুলাই ২০২২ থেকে ঠিক ১২ মাস আগে মাইকে প্রচার আর লিফলেট বিতরণ হয় মাসব্যাপী। সেখানে উপজেলাব্যাপী জনসাধারণকে ভূমিসেবা, ই-নামজারিসহ বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে অবগত করা হয়। পাশাপাশি চালানো হয় পোস্টার প্রদর্শণী। উপজেলার প্রধান কার্যালয় সহকারী কমিশনার (ভূমি) -এর কার্যালায় ও ১২টি তহসিল অফিসের সাথে সার্বিক যোগাযোগ বৃদ্ধি, নিরাপত্তা জোরদার, অনিয়ম প্রতিরোধের লক্ষ্যে বসানো হয় ভিডিও কনফারেন্স কমিউনিকেশন সিস্টেম ও সিসি ক্যামেরা। এখানে এখন দশ কার্যদিবস বা দুই সপ্তা’য় সম্পন্ন হয় নাম খারিজ প্রক্রিয়া, যা এধরণের সেবা গ্রহীতাদের জন্য বেশ সুখকর খবর।
উপজেলাটিতে গেলো ১২ মাসে খাস জমি উদ্ধার ও সনাক্ত হয়েছে প্রায় ৮ একর, যার সরকার নির্ধারিত বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৭ কোটি টাকা। উদ্ধারে প্রক্রিয়াধিন আরও বেশকিছু জমি। বহমান পদ্মা-হিসনায় বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন বাস্তবায়নের পাশাপাশি কড়া নজর ভোক্তা অধিকার, বাল্যবিবাহেও। ১২ মাসের কড়চা রচনায় প্রসঙ্গক্রমে আলোচনায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফরোজ শাহীন খসরু। বত্রিশ বছর বয়সী এই কর্মকর্তা দৌলতপুর উপজেলায় দায়িত্বগ্রহনের মধ্যদিয়ে শুরু করেন এসি ল্যান্ড হিসাবে কাজ। ক্যারিয়ারের অন্যতম বড় দায়িত্ব, তাও আবার আয়তনের দিক থেকে বড় আর ভৌগলিক দিক থেকে বৈচিত্রপূর্ণ দৌলতপুর উপজেলায়। ৬৮ তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা এই মেধাবী কর্মকর্তা বলেন, দৌলতপুর উপজেলা কাজ করার জন্য চমৎকার একটি প্ল্যাটফর্ম। গত এক বছরে বিভিন্ন দিক নিয়ে বিশ্লেষণের মাধ্যমে বেশকিছু পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়েছে। সেবা গ্রহীতারা ডিজিটাল সেবা গ্রহনে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। আশা করি তাদের আস্থা বাড়ছে। আগামীর দিনগুলোতে সবধরণের কাজ আরও গতিশীল হবে বলে প্রত্যাশা রাখছি।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জমি-জমা সংক্রান্ত সেবা গ্রহণকারীদের সাথে সরেজমিন কথা বলে জানা গেছে, প্রথমত সময় আর দ্বিতীয়ত বাড়তি খরচ দুই-ই বেঁচে যাচ্ছে তাদের। দেশের বিভিন্ন উপজেলায় এধরণের ডিজিটালাইজেশন প্রকল্প বরাদ্দ সহকারে চালু করা হয়েছে, যার আওতায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর না থাকলেও এই কার্যালয়টি দিতে সক্ষম বেশকিছু উল্লেখযোগ্য ডিজিটাল সেবা। যার কারিগর হিসাবে সমাদৃত তরুণ কর্মকর্তা আফরোজ শাহীন খসরু।