শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩০ অপরাহ্ন

অবৈধ আয়ে জমি–ফ্ল্যাট, দুদকের জালে স্বামী–স্ত্রী

রিপোর্টারের নাম / ৩৯১ বার দেখা হয়েছে
আপডেট করা হয়েছে

  • মারুফ সরকার, স্টাফ রিপোর্টার:

সমবায় অধিদফতরের উপ-নিবন্ধক গালিব রাখি দম্পতির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল পাঁচ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদের। কিন্তু তদন্তে নেমে নামে-বেনামে বিপুল সম্পত্তি হাদিস পচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। বিভিন্ন সমিতির নিবন্ধন, নির্বাচন ও নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িত থেকে এসব সম্পদ গড়েছেন বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, পাঁচ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগে ২০২২ সালের ১২ অক্টোবর মুহাম্মদ গালিক খান ও রাখির বিরুদ্ধে পৃথক দু’টি মামলা করেন সংস্থাটির উপ-পরিচালক শাহীন আরা মমতাজ। ওই মামলায় সমবায় অধিদফতরের উপনিবন্ধক মুহাম্মাদ গালীব খানের বিরুদ্ধে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ মিলিয়ে ২ কোটি ১৩ লাখ ৯৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ রয়েছে। সেইসাথে তার স্ত্রী ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে ট্রেড অপারেশন বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট তানিয়া সুলতানা রাখির বিরুদ্ধে ২ কোটি ৮৩ লাখ ২৫ হাজার ৫২০ টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ আনা হয়েছে।

 

অভিযোগ রয়েছে অবৈধভাবে অর্জিত অর্থে স্ত্রী তানিয়া সুলতানা রাখির নামে গড়েছেন ইট ভাটা, এজিএস ফার্মা অ্যান্ড মেডিক্যাল ডিভাইসেস নামে ওষুধ কোম্পানি ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। রাখির নামে ফরিদপুরে রয়েছে ২৫৪ শতাংশ জমি। রাজধানীর খিলগাঁওয়ে ৩.৫০ কাঠা জমি, বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রকল্পে সাড়ে তিন কাঠার প্লট, ধানমন্ডি সাত নম্বর রোডে এবং খিলগাঁও এলাকায় দু’টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট এবং শেয়ারবাজারে রয়েছে বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ। দুদকে দাখিল করা সম্পদবিবরণীতে ধানমন্ডির সাত নম্বর রোডে তানিয়া সুলতানার নামে কেনা ফ্ল্যাটটির মূল্য দেখানো হয়েছে মাত্র ৬৪ লাখ টাকা।

কিন্তু অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফ্ল্যাট ক্রয়ের চুক্তিপত্র অনুসারে, এটির মূল্য ১ কোটি সাড়ে ৯ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ৭ কোটি ২৫ লাখ ৯৩ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য রয়েছে। এর মধ্যে ৪ কোটি ৪২ লাখ ৬৮ হাজার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বৈধ উৎস পাওয়া গেলেও ২ কোটি ৮৩ লাখ ২৫ হাজার ৫২০ টাকার সম্পদের স্বপক্ষে কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি।

দুদক অনুসন্ধান শুরুর পর নিজের ও স্ত্রী তানিয়া সুলতানার নামে যেসব বিও অ্যাকাউন্ট রয়েছে সেগুলো থেকে টাকা তুলে নিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের নামে বিও অ্যাকাউন্ট খুলে সেগুলো সরিয়ে নেয়া হয়। এরকম প্রায় ১০-১১টি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তার প্রায় ১০ থেকে ১১ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পদ গোপন করা হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া রয়েছে। দুদক গালিব ও তার স্ত্রীর বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করে দিলে তারা নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে ওই সব ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে এখনো লেনদেন অব্যাহত রেখেছেন।

গালীব খান বর্তমানে বাংলাদেশ সমবায় একাডেমি, কুমিল্লার অধ্যাপক (প্রশাসন) হিসেবে কর্মরত। উপনিবন্ধক পদ মর্যাদায় বর্তমান কর্মস্থল এটি। সূত্রে জানা গেছে, ২৭ বিসিএসের কর্মকর্তা হিসেবে ঢাকা জেলা সমবায় কার্যালয়ে যোগদান করেন গালিব। টানা আট বছর একই দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘদিন একই পদে থাকার কারণে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার লাইন-ঘাট ছিল তার নখদর্পণে। তবে সবচেয়ে বেশি অর্থ তিনি আয় করেন বিভিন্ন কো-অপারেটিভ সোসাইটির বিতর্কিত নির্বাচন ও অবৈধ কমিটি অনুমোদন, অডিট রিপোর্টে উল্লিখিত বিভিন্ন তথ্যের ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরে, ফাইল আটকে রেখে জিম্মি করে অর্থ আদায় করেন তিনি।

মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানি ডেসটিনিকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে অর্থ আত্মসাতে সহযোগিতারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ কাজে অন্তত ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নিম্ন আয়ের সহস্রাধিক মানুষের সংগঠন রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও আগারগাঁওয়ে ‘মমতা বহুমুখী সমবায় সমিতি’। নতুন করে সমিতির সদস্য অন্তর্ভুক্তি, নতুন কমিটি গঠন, সরকারি সম্পত্তি দখল করে খালের ওপর ভবন নির্মাণ, সমিতির বহুতল মার্কেটে দোকান বরাদ্দ, লটারিতে অনিয়মসহ বহু দুর্নীতির অভিযোগ সমিতিকে কুক্ষিগত করে রাখা প্রভাবশালী ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে। একেকটি সদস্যপদ বিক্রি করা হয় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকায়। মমতা সমবায় সমিতির প্রভাবশালী সদস্য মোখলেছুর রহমান ও বদরুল আলমসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে ছিল বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ। সমবায় কর্মকর্তা মুহাম্মদ গালীব খান এ অভিযোগ উপেক্ষা করে সমিতির নির্বাচন ও নতুন কমিটির অনুমোদনের ব্যবস্থা করেন বলেও জানা গেছে।

এ সব বিষয়ে সমবায় অধিদফতরের উপ-নিবন্ধক মুহাম্মদ গালীব খান সাংবাদিকদের বলেন, এসব অভিযোগ সত্য না। এর চেয়ে বেশি মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। গালীব খান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের করা মামলার বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা সংস্থাটির সহকারী পরিচালক ফাহমিদা আকতার বলেন, মামলা দু’টির তদন্ত চলছে। মামলায় উল্লেখ করা তথ্যের বাইরে এই দম্পতির আরো অবৈধ সম্পদ আছে কিনা তা খোঁজা হচ্ছে।

 

টিপিএন২৪/ হৃদয়


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Theme Created By Limon Kabir