বাঙালির সক্ষমতার স্মারক পদ্মা সেতুর বছরপূর্তি আজ। এ দিনেই পদ্মা সেতুর স্বপ্নদ্রষ্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এর পরই দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী অধ্যায় রচিত হয়। দক্ষিণাঞ্চলে অর্থনৈতিক বিপ্লবসহ জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত ছাড়াও শিল্প-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং আর্থসামাজিক অবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়নসহ সব সেক্টরেই বড় পরিবর্তন এসেছে। পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বেঁধেছে একই সুতোয়। রাতদিন সেতুটি দিয়ে যান চলাচল করছে নির্বিঘ্নে।
আর পদ্মা সেতু প্রকল্পের আওতায় নদী দিয়ে হাই ভোল্টেজ জাতীয় গ্রিড লাইন স্থাপনে রামপাল ও পায়রার বিদ্যুৎ আসছে রাজধানীতে। সেতু দিয়ে চলতি বছরেই দ্রুতগতির ট্রেন চালু হলে সাফল্যের পরিধি হবে বিস্ময়কর। এ ছাড়া সেতুতে স্থাপিত গ্যাসলাইন চালু হলে দক্ষিণের চেহারা আরও বদলাবে। সেভাবেই প্রস্তুত করা হচ্ছে সেতু। নদীশাসন কাজেরও অগ্রগতি ৯৯ শতাংশ।
বাংলাদেশ সেতু বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক আমিরুল হায়দার বলেন, গত এক বছরে সেতু দিয়ে প্রায় ৫৩ লাখ যান পারা হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৫ হাজার যান চলাচল করছে। আর এক বছরে টোল আদায় হয়েছে প্রায় আটশ’ কোটি টাকা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের এমপি অধ্যাপক সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সততার পরিচয়। দক্ষতার পরিচয়। এই সেতু বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বদলে দিচ্ছে। দক্ষিণ বাংলার ২১ জেলার লাখ লাখ মানুষ প্রতিদিন এই সেতু দিয়ে চলাচল করছে। দক্ষিণাঞ্চলে উৎপাদিত পণ্য সহজেই উত্তরাঞ্চলে পৌঁছে যাচ্ছে। উত্তরাঞ্চলে উৎপাদিত পণ্য সহজেই চলে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলে। এই পদ্মা সেতু করে বাংলার মানুষের ভাগ্য বদলে দিয়েছেন মানবিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বরিশালের সন্তান মোজাম্মেল হোসেন বসবাস করেন মুন্সীগঞ্জ শহরের পঞ্চসারে। তিনি জানান, আগে তার গ্রামের বাড়িতে যেতে সময় লাগত কমপক্ষে আট ঘণ্টা। আর এখন মাত্র তিন ঘণ্টায় তিনি বাড়ি পৌঁছতে পারছেন। পদ্মা সেতু দিয়ে তিনি ভোরে রওয়ানা দিয়ে বরিশালে কাজ সেরে আবার বিকেলে মুন্সীগঞ্জ সদরের বাড়িতে পৌঁছতে পারছেন। ফরিদপুরের ভাঙ্গার বাসিন্দা মনির হোসেন ঢাকার একটি বেসরকারি ব্যাংকের অফিসার। পদ্মা সেতু চালুর পর তিনি এখন নিজ বাড়ি থেকেই অফিস করতে পারছেন। এমন নানারকম পরিবর্তন এসেছে পদ্মাপাড়ের মানুষের জীবনে।
বিশ্ব রেকর্ডের নদীশাসন শেষ পর্যায়ে ॥ পদ্মা সেতুর নদীশাসনের কাজ একেবারে শেষ পর্যায়ে। বাকি মাত্র একভাগ। সেতু চালু হলেও নদীশাসনের কাজ চলমান ছিল। বিশ্ব রেকর্ডের চুক্তির কাজটি ৩০ জুন শেষ হবে বলে আশা প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলামের। ব্লক দিয়ে নান্দনিকভাবে বাঁধাই করা হচ্ছে পদ্মার তীর। প্রবল স্রোত সহ্য করার সক্ষমতায় মাওয়ায় চলছে এখন চূড়ান্ত পর্যায়ের কর্মযজ্ঞ।
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (নদীশাসন) মাসুদ পারভেজ জানান, মাওয়া প্রান্তে প্রায় দুই কিলোমিটার অংশে কাজ শেষ। বাকি অংশের ড্রেজিং ও অ্যাপ্রোনও শেষ। লোয়ার স্লোপ কাজের অগ্রগতি ১০০ ভাগ, লো ওয়াটার ট্রানজিশন শতভাগ, আপার স্লোপে সিসি ব্লক প্লেসিং অগ্রগতি ৯৮ ভাগ, এম্ব্যাঙ্কম্যান্ট অগ্রগতি ৯৯ ভাগ। নদীর দুই প্রান্তে ১৪ কিলোমিটারের বেশি নদীশাসন কাজের জাজিরা প্রান্তের প্রায় ১২ কিলোমিটারের কাজ শেষ। এখন মাওয়া প্রান্তের প্রায় দুই কিলোমিটারের ফিনিশিং কাজ চলছে।
সেপ্টেম্বরে চলবে রেল ॥ পদ্মা সেতু দিয়ে ১২০ কিমি গতিতে রেল চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত এখন পদ্মা সেতু। শনিবার পদ্মা সেতুর ৬ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার দীর্ঘ মূল সেতুর রেল অংশ ঘুরে দেখা গেছে, সেতুর রেল কাজের আর কিছুই বাকি নেই, অপেক্ষা শুধু ঢাকা থেকে মাওয়া অংশের কাজ। এর পরই চলবে ব্রডগেজ লাইনে দ্রুতগতির রেল। সেই লক্ষ্যে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে মাওয়া রেলস্টেশন ও জাজিরা প্রান্তে পদ্মা রেলস্টেশন নির্মিত হয়েছে। পুরো রেল সংযোগ প্রকল্পে রেলস্টেশন ২০টি। এর মধ্যে নতুন স্টেশন ১৪টি। বাকি ৬টি আধুনিক করা হচ্ছে। আগামী সেপ্টেম্বরেই রাজধানী ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে রেল যাবে ফরিদপুরের ভাঙ্গায়। আর ঢাকা থেকে যশোর ১৭২ কিলোমিটার পুরো রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে আগামী বছরের জুনে।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক-৩ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামসুল আলম শামস জানান, ভাঙ্গা থেকে যশোর অংশে ৮৬ কালভার্ট, ৮২ আন্ডার পাস ও ৩৩টি রেল সেতুর কাজ শেষ পর্যায়ে এখন। ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-যশোর পুরো প্রকল্পের যশোর অংশের অগ্রগতি ৭৮ শতাংশ।
রেলমন্ত্রী নরুল ইসলাম সুজন এমপি জনকণ্ঠকে বলেছেন, রাজধানী থেকে মাওয়া অংশ উদ্বোধন হবে সেপ্টেম্বরে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করবেন। তাই পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পাথরসহ রেললাইন ও পাথরবিহীন রেললাইন স্থাপন কাজ চলছে একযোগে।
প্রকল্প পরিচালক মো. আফজাল হোসেন জনকণ্ঠে জানান, ঢাকা-ভাঙ্গা প্রায় ৮১ কিলোমিটার অংশে ট্রেন চলাচল শুরু হবে সেপ্টেম্বরে। আর যশোর পর্যন্ত রেল চলবে আগামী বছরের জুনে। রাজধানী থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত অংশে পাথরসহ রেললাইন স্থাপন শেষ।
টোল আদায়ে নতুন প্রযুক্তি ॥ পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় সংযোজন হচ্ছে নতুন প্রযুক্তি। আগামী মাসে চালু হতে যাচ্ছে চলন্ত অবস্থায় গাড়ির টোল আদায় পদ্ধতি আরএফআইডি। এ ছাড়াও প্রক্রিয়াধীন হাইব্রিড-টাচ অ্যান্ড গো পদ্ধতি। নতুন এ দুই পদ্ধতি চালু হলে জটলামুক্ত থাকবে টোল প্লাজা। প্রতিটি যানের টোল আদায়ে এখন গড়ে সময় লাগছে ১৫ সেকেন্ড। আর লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা তো রয়েছেই। সেতুতে উচ্চ ক্ষমতার ক্যামেরাসহ বিভিন্ন ধরনের সিসি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
এতদিন পদ্মা সেতুতে কম্পিউটারে টোল কালেক্টর পদ্ধতিতে ম্যানুয়ালি টোল আদায় হচ্ছিল। এখন চালু করা হচ্ছে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন-আরএফআইডি এবং হাইব্রিড-টাচ অ্যান্ড গো পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে টোল প্লাজায় সময় ব্যয় হবে না। সেতুর দুই প্রান্তের টোল প্লাজায় দুটি আরএফআইডি লেন রয়েছে। এই টাওয়ার থেকে চলন্ত গাড়ির টোল আদায় হবে। আধুনিকায়নে টোল লেন হবে দুই পাড়ে ১৭টি। নয়টি জাজিরাতে এবং মাওয়াতে আটটি। আর পুরো সেতু অত্যাধুনিক ক্যামেরার আওতায় আসবে। সেতুর মাঝখানে ৫০টি উচ্চ ক্ষমতার ক্যামেরা বসবে। তাই অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন স¤পন্ন হয়েছে।
আটশ’ কোটি টাকার মাইলফলক ছাড়াচ্ছে ॥ পদ্মা সেতুর টোল আদায় আটশ’ কোটি টাকার মাইলফলক ছাড়াচ্ছে। গত বছর ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর ৩৬২ দিনে পদ্মা সেতুর টোল আদায় হয়েছে ৭৯০ কোটি ৯৪ লাখ ৭৮ হাজার ৩৭০ টাকা। বর্ষপূর্তিতে টোল আদায় আটশ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ সময় সেতুটি দিয়ে বিভিন্ন প্রকার যানবাহন পারাপার হয়েছে মোট ৫২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৫৫টি। প্রতিমাসে গড়ে টোল আদায় হয়েছে ৬৭ কোটি ৭৮ লাখ ৯৭ হাজার ৬ টাকা ২ পয়সা। প্রতিদিন গড়ে টোল আদায় হয়েছে ৬৩ লাখ ৩৫ হাজার ৪৮৬ টাকা ৪ পয়সা। পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের এ তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, সেতুটি উদ্বোধনের পর হতে এ বছর জুন মাসের ২২ তারিখ পর্যন্ত ৩৬২ দিনে সেতুটিতে মোট টোল আদায় হয়েছে প্রায় ৭৯১ কোটি টাকা।
তিন লাখ বাইক চলাচল ॥ পদ্মা সেতু দিয়ে তিন লাখ ৩৫ হাজার ৬৪৩টি মোটরসাইকেল চলাচল করেছে। এতে রাজস্ব আদায় হয়েছে তিন কোটি ৩৫ লাখ ৬৪ হাজার তিনশ’ টাকা। সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পদ্মা সেতু চালুর পর গত বছরের জুনে ৪২ হাজার ৩৫৯ বাইক পারাপার হয়েছে। সেতুতে বাইক নিষিদ্ধ থাকার পরবর্তীতে গত ২০ এপ্রিল চালু হওয়ার পর এপ্রিল মাসের ১১ দিনে পারাপার হয় এক লাখ ১২ হাজার ৫২ বাইক। মে মাসের ৩১ দিনে পারাপার হয়েছে এক লাখ ১৭ হাজার ২৯৪ বাইক। আর জুন মাসের ২৩ দিনে পারাপার হয়েছে ৬৩ হাজার ৯৩৬টি মোটরসাইকেল। বাইক চলাচল করছে এখন নির্বিঘ্নে।
পদ্মা সেতুর পাঁচটি বিশ্ব রেকর্ড ॥ পাঁচটি বিশ্ব রেকর্ডও করেছে এই সেতু। সর্বাধুনিক সব প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে এটির নির্মাণে। খরস্রোতা পদ্মায় ব্রিজ নির্মাণে বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, পানিপ্রবাহ বিবেচনায় বিশ্বে আমাজন নদীর পরেই এর অবস্থান। মাটির ১২০ থেকে ১২২ মিটার গভীরে গিয়ে পাইল বসানো এই রেকর্ডের অন্যতম। পৃথিবীর অন্য কোথাও কোনো সেতুতে পাইল এত গভীরে প্রবেশ করাতে হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্ব রেকর্ড হলো, পিলার এবং স্প্যানের মাঝে যে বিয়ারিং থাকে সেটি। এখানে ১০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন ওজনের একেকটি বিয়ারিং ব্যবহৃত হয়েছে। পৃথিবীতে এর আগে এমন বড় বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়নি কোনো সেতুতে। তৃতীয় রেকর্ড নদীশাসন।
১৪ কিলোমিটার (১.৬ মাওয়া+১২.৪ জাজিরা) এলাকা নদীশাসনের আওতায় আনা হয়েছে। এই নদীশাসনে খরচ হয়েছে ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকারও বেশি। পরের রেকর্ডটি ব্রিজে ব্যবহৃত ক্রেন। পিলারের ওপর স্প্যান বসাতে যে ক্রেনটি ব্যবহৃত হয়েছে, সেটি আনা হয়েছে চীন থেকে। প্রতি মাসে এর ভাড়া বাবদ গুনতে হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। সাড়ে তিন বছরে মোট খরচ হয়েছে ১২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। বিশ্বে প্রথম এই ব্রিজটি বানাতেই এত দীর্ঘদিন ক্রেনটি ভাড়ায় থেকেছে। এই ক্রেনটির বাজার দর ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আরেকটি রেকর্ড পদ্মা সেতুই বিশ্বে প্রথম যেটি কংক্রিট আর স্টিল দিয়ে নির্মিত হয়েছে।
পাল্টে যাচ্ছে অর্থনৈতিক অবস্থা ॥ বাংলাদেশের যোগাযোগ ছিল মূলত নদীনির্ভর। অসংখ্য ছোট-বড় নদ-নদীতে ভরপুর আমাদের এ দেশ। এ দেশে সড়কপথ নির্মাণ করতে গেলেই অসংখ্য নৌপথ পাড়ি দিতে হতো। ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধনের পর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের দ্বার উন্মোচনে স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পদ্মা বহুমুখী সেতুর জন্য শুধু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নয়, পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতিই বদলে যাচ্ছে। এই সেতু দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগ, বাণিজ্য, পর্যটনসহ নানা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই সেতুটি ভবিষ্যতে ট্রান্স-এশীয় রেলপথের অংশ হবে। তখন যাত্রীবাহী ট্রেন যত চলবে, তার চেয়ে অনেক বেশি চলবে মালবোঝাই ট্রেন। ডাবল কন্টেনার নিয়ে ছুটে চলবে ট্রেন।
ঢাকা ও চট্টগ্রামের সঙ্গে যুক্ত হবে মোংলা ও পায়রা বন্দর। অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে দেশের প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই সেতু। এই সেতুর ফলে কৃষিপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল এবং শিল্পজাত পণ্যসামগ্রী সহজে ও স্বল্প ব্যয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছে যাচ্ছে। এর ফলে দেশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। শিল্প ও ব্যবসার প্রসার ঘটেছে। নতুন নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে। এই সেতু যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অর্থনীতির ভিত্তি ও সোনালি সোপান হিসেবে কাজ করছে পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতুর কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন হয়েছে। জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠায় কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা ॥ পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে দেশে প্রথম কোনো সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠছে। পদ্মা সেতু দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে উৎপাদিত কৃষিপণ্য খুব সহজেই ঢাকায় চলে আসছে। মোংলা ও পায়রা বন্দর এবং বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী এবং বন্দর নগরী চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। পুরো দেশের অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়ছে। কৃষি, শিল্প, অর্থনীতি, শিক্ষা, বাণিজ্য- সব ক্ষেত্রেই আমূল পরিবর্তন হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের কুয়াকাটা ও সুন্দরবনসংলগ্ন ছোট ছোট বিভিন্ন দ্বীপে মালদ্বীপের মতো পর্যটন নগরী গড়ে উঠতে শুরু করেছে।
কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত, সুন্দরবন ও পায়রা বন্দরকে ঘিরে পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনা হাতছানি দিচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন চর ও দ্বীপকে কেন্দ্র করে মালদ্বীপের মতো পর্যটন নগরী গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে। পদ্মা সেতু চালু সেই সম্ভাবনা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। পদ্মা সেতু দিয়ে অল্প সময়ে সুন্দরবন ও কুয়াকাটায় পৌঁছানো সম্ভব বলে এখন সেখানে পর্যটক অনেক গুণ বেড়েছে। ফলে সেখানে নতুন নতুন হোটেল-মোটেল গড়ে উঠছে। মানুষের কর্মসংস্থ’ান সৃষ্টি হচ্ছে। সব মিলিয়ে পদ্মা সেতু নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করেছে।
পদ্মার বুকে বড় অবকাঠামো ॥ পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ প্রথম থেকেই চ্যালেঞ্জের ছিল। নির্মাণকাজের প্রতিটি পর্বেই কোনো না কোনো চ্যালেঞ্জ এসেছে। এখানে নদীশাসন যেমনটা চ্যালেঞ্জিং ছিল, তেমনি নদীর তলদেশে পাথর না থাকায় পাইলিং করাটাও বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। সেতুর নকশা পরিবর্তন করতে হয়েছে।
সেতু বিভাগ বলছে, পদ্মা সেতুর পাইল বিশ্বে গভীরতম। এ কাজ ছিল সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং। যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু যখন হয়, তখন সেটির পাইলও ছিল বিশ্বে গভীরতম। এখন পদ্মা সেতু বিশ্বে গভীরতম ভিত্তির সেতু বলা যেতে পারে। নদীর তলদেশে মাটির ১২৫ মিটার গভীরে পাইল বসানো ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এর আগে পৃথিবীর অন্য কোথাও কোনো সেতুতে এত গভীরে পাইল বসাতে হয়নি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাইলিংয়ের নিচে পাথর ও বালু থাকে। কিন্তু পদ্মা সেতুতে কাদামাটি ছিল।
পদ্মা সেতুকে ভূমিক¤প-সহনীয় করতে অনেক কাজ করা হয়েছে। ভূমিকম্পের সময় মাটির যে কম্পন, তার সবটা যেন সেতুর ওপরের কাঠামোয় যেতে না পারে, তার জন্য ব্যবহার করা হয় ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং। এটি ব্যবহার করলে ভূমিকম্পের সময় সেতুর পাইলিং নড়াচড়া করলেও মূল সেতুর কাঠামোয় এটি কোনো প্রভাব ফেলবে না। নকশা অনুসারে, এটি প্রায় ১০ হাজার টন লোড সামলাতে সক্ষম।
উত্তর প্রান্তে বহুমাত্রিক উন্নয়নের ছোঁয়া ॥ পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এক বছরে পদ্মার দক্ষিণ প্রান্তে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। আর উত্তর প্রান্তে লেগেছে বহুমাত্রিক উন্নয়নের ছোঁয়া। উত্তরপ্রান্তে মুন্সীগঞ্জের তিনটি উপজেলায় পদ্মা সেতু ঘিরে নানা রকম উন্নয়ন হয়েছে এবং কার্যক্রম এখনো চলছে। পাশাপাশি এই এলাকাগুলোতে জমির দাম বেড়েছে স্থানভেদে অন্তত পাঁচগুণ। অন্যদিকে, মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধি, সাধারণ জনগণ ও প্রশাসনে কর্মরত বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা হলে এমন চিত্র উঠে এসেছে। তারা জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু মহাসড়কের (ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে) সুফল ভোগ করছে মুন্সীগঞ্জের তিন উপজেলার বাসিন্দারা।
মহাসড়কের ধলেশ্বরী টোলপ্লাজা থেকে শুরু করে পদ্মা সেতু পর্যন্ত সিরাজদীখান, শ্রীনগর ও লৌহজং উপজেলা অতিক্রম করেছে। এই তিন উপজেলার সাত লাখ মানুষের ঢাকায় যাতায়াতে ভোগান্তি কমেছে। মুন্সীগঞ্জ থেকে দক্ষিণবঙ্গের যে কোনো জেলায় যাত্রীরা মুহূর্তেই আসা-যাওয়া করতে পারছেন। বঙ্গবন্ধু মহাসড়কের (ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে) কারণে দ্রুত সময়ের মধ্যে মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকায় যাতায়াত করা যাচ্ছে। আগে যেখানে মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকায় যেতে সময় লাগতো ২ ঘণ্টা এখন সেখানে ২০-৩০ মিনিটেই ঢাকায় যাওয়া যায়। এ ছাড়া দক্ষিণবঙ্গের ২১টি জেলায় মুন্সীগঞ্জে উৎপাদিত সিমেন্ট, ইট-রডসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী সহজেই পৌঁছে যাচ্ছে। এতে অর্থনীতিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু ও বঙ্গবন্ধু মহাসড়কের আশপাশের পরিত্যক্ত জমিও এখন চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। অথচ এক সময় যা বনজঙ্গলে রূপ নিয়েছিল। এই এলাকাগুলোতে গড়ে উঠেছে শতাধিক হাউজিং প্রকল্প। এ ছাড়া, মহাসড়কের পাশে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র ও হোটেল-রেস্টুরেন্ট। প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা মুন্সীগঞ্জের মাওয়াসহ বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শনে আসছেন। ঢাকার কাছে হওয়ায় পর্যটকদের কাছে মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলো দিনকে দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ডিসেম্বরের আগেই ঢাকা থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া স্টেশন হয়ে পদ্মা সেতুর নিচতলা দিয়ে ট্রেন চলাচলের কথা রয়েছে ফরিদপুরের ভাঙা পর্যন্ত। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মুন্সীগঞ্জসহ নতুন চার জেলা, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল অতিক্রম করে যশোরের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। রাজধানীর গে-ারিয়া স্টেশন থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া পর্যন্ত ৩৬ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ কাজের অগ্রগতি প্রায় ৮০ শতাংশ। এ অংশে নির্মিত হচ্ছে ৪টি রেল স্টেশন।
সেগুলো হলো- ঢাকা স্টেশন (কাজের অগ্রগতি ৬০ শতাংশ), গেন্ডারিয়া স্টেশন (কাজের অগ্রগতি ৩০ শতাংশ), কেরানীগঞ্জ স্টেশন (কাজের অগ্রগতি ৪৫ শতাংশ), নিমতলা স্টেশন (কাজের অগ্রগতি ৫৮ শতাংশ) ও শ্রীনগর স্টেশন (কাজের অগ্রগতি ৪০ শতাংশ)। অন্যদিকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া স্টেশন নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ৮৯.২০ শতাংশ। পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা জংশন পর্যন্ত রুটের দৈর্ঘ্য ৪২ কিলোমিটার। এ অংশে ব্রডগেজ রেলপথ এবং ৫টি স্টেশন নির্মাণ হচ্ছে। রেলপথ স্থাপনের কাজের অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ।
অন্যদিকে চলতি মাসেই শেষ হবে ভাঙা রেল স্টেশনের কাজ। ইতোমধ্যে এর ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি চারটি, মাওয়া স্টেশন নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ৮৯.২০ শতাংশ, পদ্মা স্টেশন নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ৮৯.১৫ শতাংশ, শিবচর স্টেশন নির্মাণকাজের অগ্রগতি ৮৩.৫০ শতাংশ। এই ৩টি স্টেশনের কাজ আগস্টে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। আর ভাঙা জংশন স্টেশন নির্মাণকাজ শেষ হবে আগামী বছরের মে মাসে। সর্বশেষ এই স্টেশন নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ৬১.৯১ শতাংশ। পদ্মা সেতুর নিচ তলায় ৬ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে পাথরবিহীন রেললাইন দ্রুতগতির ট্রেন চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। চলতি বছরের ৪ এপ্রিল ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশন জংশন থেকে শিবচরের ২নং স্টেশন হয়ে রেলট্র্যাক কার ও সাত বগি বিশিষ্ট একটি পরীক্ষামূলক ট্রেন পদ্মা সেতুর নিচতলা হয়ে ৪১ দশমিক ৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে মাওয়া স্টেশনে পৌঁছায়।
জমির দাম বেড়েছে কয়েকগুণ ॥ পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর এই এলাকায় জমির দাম প্রকারভেদে চার-পাঁচগুণ বেড়ে গেছে। এতে স্থানীয়রা ব্যাপক খুশি। জমির এমন বাড়তি দাম পাবেন তা তারা কখনো ভাবেননি। সিরাজদীখান উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) উম্মে হাবিবা ফারজানা বলেছেন, ‘পদ্মা সেতুর কাজ শেষ না হতেই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের শুরু থেকেই এই এলাকার জমির দাম বাড়া শুরু করে। বর্তমানে এখানকার জমির দাম আকাশচুম্বী। ঢাকার পাশে হওয়ায় আবাসন নির্মাণের ক্ষেত্রে এই এলাকাগুলো অনেকেই বেছে নিচ্ছেন।
এ ছাড়া এইসব এলাকায় বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছেন।’ শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ হোসেন পাটওয়ারী বলেন, ‘পদ্মা সেতুকে ঘিরে এই এলাকার জনগণের যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ঢাকা থেকে মুন্সীগঞ্জের এই এলাকাগুলো পাশাপাশি হওয়ায় এখানে আবাসনের পরিকল্পনা করছেন তারা। ফলে জমির দামও বেড়েছে কয়েকগুণ। তা ছাড়া আগে যারা ঢাকায় থেকে চাকরি-ব্যবসা করতেন তারা ঢাকা ছেড়ে এদিকে চলে আসছেন এবং যাওয়া-আসা করে তাদের পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন।’
লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘পদ্মা সেতুর কারণে এই এলাকার জমির চাহিদা বেড়েছে। ফলে জমির দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। ঢাকাসহ আশপাশের জেলা থেকে এই অঞ্চলে জমি কিনতে মানুষ আসছে।’ শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর এলাকার তোফাজ্জল হোসেন সভ্যতার আলোকে বলেন, ‘কখনো ভাবিনাই এমন কইরা জমির দাম বাড়ব। পদ্মা সেতু হওয়ার পরে হঠাৎ কইরাই যেমন জমির দাম বাড়ল।’ আরেক স্থানীয় হানিফ শিকদার বলেন, ‘যেই বড় রাস্তা বানায়া দিছে সরকার দেখলেই মন ভইরা যায়।
এই রাস্তার কারণে ঢাকা থেকে অনেক মানুষ জমি কিনতে আইয়া পড়ে। আমার ৫ শতাংশ জমি ছিল রাস্তার পারে পাঁচ বছর আগে যার দাম ছিল দেড় লাখ টাকা শতাংশ। কিন্তু এই বছর সেই জমি বিক্রি করছি ১০ লাখ টাকা শতাংশে।’ স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেছে, পদ্মা সেতুর কারণে মুন্সীগঞ্জের এই এলাকাগুলোর জমির চাহিদা বেড়ে গেছে। এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে বিভিন্ন ডেভেলপার কোম্পানি।
তারা বিভিন্ন সূত্রে স্থানীয়দের কাছ থেকে জমি নিয়ে সেখানে সাইনবোর্ড লাগিয়ে নিজেদের ব্যবসায়ীক উদ্দেশ্য হাসিল করার চেষ্টায় রয়েছে। এই কোম্পানিগুলো সড়কের পাশের জমির দাম হাকাচ্ছে শতাংশ প্রতি ১৫ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার হাসাড়া থেকে লৌহজং উপজেলার মাওয়া চৌরাস্তা পর্যন্ত লাখ লাখ একর জমিতে ঝুলছে এসব ডেভেলপার ও হাউজিং কোম্পানির জমি বিক্রির সাইনবোর্ড।
পরিকল্পনায় আটকে আছে পর্যটন কেন্দ্র ॥ পদ্মা সেতুকে ঘিরে পদ্মা নদীর উত্তর পারে ৪০০ কোটি টাকা ব্যায়ে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়ায় ‘ইকোপোর্ট’ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের আওতায় রিভারক্রুজ (নদী ভ্রমণ), চরে অবকাশ যাপনকেন্দ্র, প্রাকৃতিক ওয়াকওয়ে ট্রেইল, নৌজাদুঘর, ইকোপার্কসহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা তৈরিরও পরিকল্পনা ছিল। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন যোগ্য কি না বা এর বাস্তবায়নযোগ্যতা কতটুকু তা এখনো নিরূপণ করা হয়নি।
বিআইডব্লিউটির চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ‘এখানে ফিজিবিলিটি স্টাডি হচ্ছে- এখানে ইকোপোর্ট হবে না কন্টেনার পোর্ট হবে এ বিষয়ে আমরা স্টাডি করছি।’ ২০২২ সালের জুনে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক পর্যালোচনা সভায় পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে এই এলাকায় বছরে ৬০ লাখ দেশী-বিদেশী পর্যটকের সমাগম হবে-এমন ধারণা থেকে সরকারি- বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে এ বিনোদনকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় বিআইডব্লিউটিএর অব্যবহৃত ১৫-১৮ একর জমি রয়েছে। এই জমির ব্যবহারের মাধ্যমে রাজস্ব আয়ের পরিকল্পনা করেছিল বিআইডব্লিউটিএ।