শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২১ অপরাহ্ন

বড় পরিবর্তন ছাড়াই বাজেট পাস

রিপোর্টারের নাম / ১৩৫ বার দেখা হয়েছে
আপডেট করা হয়েছে

বড় কোনো সংশোধনী ছাড়াই সংসদে পাস হয়েছে নতুন অর্থবছরের বাজেট। গতকাল সোমবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ‘নির্দিষ্টকরণ বিল-২০২৩’ পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করলে কণ্ঠভোটে সর্বসম্মতিতে তা পাস হয়। আগামী ১ জুলাই নতুন অর্থবছরের প্রথম দিন থেকে এ বাজেট কার্যকর হবে।

গত ১ জুন অর্থমন্ত্রী এই বাজেট সংসদে উপস্থাপন করেন।

সংসদ সদস্যদের দীর্ঘ আলোচনা শেষে গতকাল বাজেট পাস হয়। প্রতিবছর সাধারণত ২৯ বা ৩০ জুন বাজেট পাস হলেও এবার কোরবানির ঈদের কারণে কিছুটা আগে পাস হলো। পাস হওয়া এ বাজেট সরকারের টানা তিন মেয়াদের ১৫তমসহ চলতি মেয়াদের শেষ এবং বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট।

মূল্যস্ফীতি কমানো ও বাজেটের ঘাটতি অর্থায়নই বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

তাঁরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, জিডিপি প্রবৃদ্ধির গতি ধরে রাখা, ডলার সংকট মোকাবেলা, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের শর্ত পূরণ করে বিনিময় ও সুদ হার বাজারভিত্তিক করা, বাড়তি রাজস্ব আদায় বড় চ্যালেঞ্জ হবে।

গতকাল স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে জাতীয় বাজেট পাসের কার্যক্রম শুরু হয়। সরকারি ও বিরোধী দলের বেশির ভাগ সদস্যের উপস্থিতিতে বাজেটের ওপর ৫৯টি মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে ৫০২টি ছাঁটাই প্রস্তাব আনা হয়। সরকার ও বিরোধী দলের হুইপের মধ্যে সমঝোতা অনুযায়ী দুটি মঞ্জুরি দাবি আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়।

আলোচনা শেষে মঞ্জুরি দাবিগুলো কণ্ঠভোটে সংসদে গৃহীত হয়। এরপর অর্থমন্ত্রী সর্বোচ্চ ১১ লাখ ১০ হাজার ৮৪০ কোটি ৭৬ লাখ ৯৭ হাজার টাকা ব্যয়ের অনুমোদন নিতে ‘নির্দিষ্টকরণ বিল-২০২৩’ পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। পরে কণ্ঠভোটে তা পাস হয়।

এ সময় সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারি ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ে দেশের বাজেট বাস্তবায়নের যাত্রাকে স্বাগত জানান। এর আগে মঞ্জুরি দাবির ৪২ নম্বর—পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জন্য আগামী অর্থবছরের জন্য এক হাজার ৬৩৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা রাষ্ট্রপতির অনুকূলে মঞ্জুরের প্রস্তাব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংসদ সদস্যদের সর্বসম্মতিতে এ প্রস্তাব সংসদে গ্রহণ করা হয়।

প্রস্তাবিত বাজেটে মঞ্জুরি দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম, রুস্তম আলী ফরাজী, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, রওশন আরা মান্নান ও পীর ফজলুর রহমান, গণফোরামের মোকাব্বির হোসেন খান এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু। তবে ওই ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।

যেসব পরিবর্তন : বহুল আলোচিত আয়কর রিটার্ন দাখিলে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা কর দেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাহারসহ জাতীয় সংসদে গত রবিবার অর্থ বিল-২০২৩ পাস হয়েছে। নানা সমালোচনার মুখে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা আয়কর দেওয়ার বিধান বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া পেট্রোলিয়াম জাতীয় পণ্যের শুল্ক হারে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। বলপয়েন্ট কলম ও অ্যালুমিনিয়াম স্ক্র্যাপের ওপর এসআরও জারি করে ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।

বাজেট কাঠামো : নতুন বাজেটের আকার সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিচালনা ব্যয় চার লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা এবং মূলধনী ব্যয় ৩৯ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। পরিচালনা ব্যয়ের মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা।

মোট আয় : নতুন বাজেটের মোট আয়ের আকার পাঁচ লাখ তিন হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে কর রাজস্ব চার লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং কর ব্যতীত প্রাপ্তি ৫০ হাজার টাকা ও বৈদেশিক অনুদান তিন হাজার ৯০০ কোটি টাকা। মোট করের মধ্যে এনবিআর কর হচ্ছে চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং নন এনবিআর হচ্ছে ২০ হাজার কোটি টাকা।

ঘাটতি : মোট ঘাটতি (অনুদানসহ) দুই লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা এবং অনুদান ছাড়া দুই লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এই ঘাটতি পূরণে বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হবে এক লাখ দুই হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ খাত থেকে নেওয়া হবে এক লাখ ১৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এই ঋণ আসবে ব্যাংক থেকে এক লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার কোটি এবং অন্যান্য খাত থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা।

বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা, যোগাযোগ অবকাঠামো, ভৌত অবকাঠামো, আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, কৃষি এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭.৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, নির্দিষ্টকরণ বিলটি মূলত গ্রস বাজেট। বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও অন্যান্য খাতে বাজেটে সরকারের অর্থ বরাদ্দের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু এই অর্থ কখনো ব্যয় হয় না, যা বাজেটের আয়-ব্যয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে হিসাব মেলানো হয়। এ বাধ্যবাধকতার কারণে এবারের বাজেটেও তিন লাখ ৪৯ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা ব্যয় হবে না। অর্থমন্ত্রী ১ জুন সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার যে বাজেট উত্থাপন করেছেন, সেটাই ব্যয় হবে। সেটাই আগামী অর্থবছরের নিট বাজেট।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Theme Created By Limon Kabir