আগামী ১ জুলাই থেকে সরকারি কর্মচারীরা মূল বেতনের ১০ শতাংশ বেশি পাবেন। সাধারণভাবেই ৫ শতাংশ বার্ষিক বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) আছে। এখন যোগ হবে আরও ৫ শতাংশ। সব মিলে তাদের ১০ শতাংশ বেতন বাড়ছে। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। মূল্যস্ফীতির কারণে সরকারি কর্মচারীদের স্বস্তি দিতে সরকারের এই সিদ্ধান্ত বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর বক্তব্য দেওয়ার সময় সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৫ শতাংশ নতুন করে প্রণোদনা দেওয়ার কথা জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি কর্মচারী যারা আছেন, তাদের বিশেষ বেতন হিসেবে মূল বেতনের ৫ শতাংশ আপৎকালীন সময়ে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাচ্ছি। অর্থমন্ত্রী আশা করি বিষয়টি গ্রহণ করবেন। আমরা ৫ শতাংশ মূল বেতন বিশেষ প্রণোদনা হিসেবে তাদের দেব।
এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ জানায়, তারা এ বিষয়ে প্রাথমিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। এখন একটি সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হবে অর্থমন্ত্রীর কাছে। এরপর তা অনুমোদনের জন্য যাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। জুলাইয়ের মধ্যেই সব কাজ শেষ হবে।
সূত্র জানায়, বাড়তি ৫ শতাংশের জন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বাড়তি ব্যয় হবে তিন থেকে চার হাজার কোটি টাকা। বাড়তি প্রণোদনা এককালীন নয়, বরং প্রতি মাসের বেতনের সঙ্গেই যোগ হবে। অর্থ বিভাগের চেষ্টা থাকবে জুলাই শেষে যখন জুলাই মাসের বেতন তুলবেন সরকারি কর্মচারীরা, তার মধ্যে বাড়তি প্রণোদনাটা যেন থাকে। জুলাইয়ের মধ্যে প্রক্রিয়া শেষ না হলে তা আগস্টে গড়াবে। তবে বাড়তি বেতন জুলাই থেকেই কার্যকর।
বাজেট ঘোষণার আগেই মে মাসের মাঝামাঝি এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছিলেন, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধি করা হবে। বার্ষিক বৃদ্ধি ৫ শতাংশ ও নতুন প্রণোদনা ৫ শতাংশ মিলিয়ে অবশ্য মূল্যস্ফীতি সমন্বয় হয়।
এ বিষয়ে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, মূল্যস্ফীতির চাপে যখন সবাই পিষ্ট, নতুন ঘোষণার ফলে তখন সরকারি কর্মচারীদের জন্য সুখবর। তবে সাধারণ মানুষের কথাও বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড ইত্যাদি তো আছে এই তথ্য তুলে ধরলে সেলিম রায়হান বলেন, তা আছে। কিন্তু সেটা দিয়ে তো আর পাঁচ থেকে সাত দিনের বেশি চলে না। সরকারের উচিত হবে, দেশের সব মানুষের জন্য মূল্যস্ফীতি কমানোর ব্যবস্থা করা।
২০১৫ সালের বেতন কমিশনে বলা ছিল, প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) হবে সরকারি কর্মচারীদের। সে অনুযায়ী তা হয়েও আসছে। জানা গেছে, ২০১৫ সালে মূল্যস্ফীতির হার গড়ে ৫ শতাংশ ছিল বলেই ইনক্রিমেন্ট একই হারে বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছিল। এখন মূল্যস্ফীতি বেশি বলেই ইনক্রিমেন্টের হার বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
আগামী অর্থবছরের জন্য বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৬ শতাংশ, যদিও গত মে মাসের মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৫ সালের বেতন কাঠামোর সুপারিশ সরকার না মানার কারণেই বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি সম্প্রতি নতুন করে সামনে এসেছে। সেই বেতন কাঠামোতে বলা হয়, সরকারি কর্মচারীদের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ হবে। তবে মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের বেশি হলে বেতন বৃদ্ধির হারও সে অনুযায়ী বাড়বে, তবে বাস্তবে তা মানা হচ্ছিল না।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের মূল বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে করা হয় ৭৩ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা। বাজেট সংক্ষিপ্তসার ২০২৩-২৪ অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮১ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা। বাড়তি প্রণোদনার জন্য অর্থ নেওয়া হবে থোক বরাদ্দ থেকে।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, মূল্যস্ফীতির চাপে পেনশনভোগী ব্যক্তিরা এখন সবচেয়ে কষ্টে আছেন। আমি জানি না, পেনশনভোগী ব্যক্তিদের জন্যও ৫ শতাংশ প্রণোদনা থাকছে কিনা। সরকারের শীর্ষ পর্যায় বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখবে বলে আশা করি। যদি পেনশনভোগী ব্যক্তিদের বাদ রাখা হয়, এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না।