শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০২:১৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ

প্রতি ইউনিটের দাম হবে ৩ থেকে ৫ টাকা, আসছে নেপালের বিদ্যুৎ

রিপোর্টারের নাম / ২৩৫ বার দেখা হয়েছে
আপডেট করা হয়েছে

কয়লা, তেল, গ্যাসের উচ্চ খরচের বিদ্যুৎ থেকে বের হতে নানা বিকল্প খুঁজছে সরকার। নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের নানা কৌশল নির্ধারণে আগ্রহী বিদ্যুৎ বিভাগ। ইতোমধ্যে দেশে জোর দেওয়া হয়েছে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে। এবার দেশের গ্রিডে যোগ হতে যাচ্ছে জলবিদ্যুৎও। তবে তা দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত বিদ্যুৎ নয়। আমদানি হবে প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্র নেপাল থেকে। অপর প্রতিবেশী ও বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করে জুলাইয়ের শুরুতেই দেশে আসবে ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ। যার প্রতি ইউনিটের দাম পড়বে মাত্র ৩ থেকে ৫ টাকা। এর বাইরেও দেশটি থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির জন্য শীঘ্রই হচ্ছে চুক্তি। এই চুক্তি হয়ে গেলে দেশের বিদ্যুৎ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জলবিদ্যুৎ তুলনামূলকভাবে সস্তা ও পরিবেশবান্ধব। তবে বাংলাদেশে এর উৎপাদন সম্ভব না হওয়ায় নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে এ বিষয়ে সহযোগিতা বাড়াতে কাজ চালিয়ে আসছিল বর্তমান সরকার। নেপাল থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করতে ভারতের একটি কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতাও হয়েছে। ভারতের জিএমআর এনার্জি নেপালে ‘আপার কারনালি’ প্রকল্পের আওতায় ৯০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। এই কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনার জন্য ২০১৭ সালে জিএমআরইয়ের সঙ্গে ওই সমঝোতা স্মারকে সই করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। ভারত হয়ে আন্তঃদেশীয় গ্রিড লাইনের মাধ্যমে এই বিদ্যুৎ আনার পরিকল্পনা করা হয়। তবে এর আগেই ওই বিদ্যুতের বাইরে দেশটি থেকে আরও ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হবে।
চলতি মাসের ১ তারিখ ভারতের নয়াদিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমলের একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। হায়দরাবাদ হাউসে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে ভারতের সঞ্চালন লাইন ব্যবহারের সম্মতি সাপেক্ষে বাংলাদেশে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির লক্ষ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ওইদিন বৈঠক শেষে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই চুক্তির ফলে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে। নেপালে উৎপাদিত জলবিদ্যুৎ ভারত ছাড়াও বাংলাদেশে রপ্তানির জন্য তারা অনেক দিন ধরেই সচেষ্ট ছিলেন।
অবশেষে তা বাস্তবায়িত হতে চলেছে জানিয়ে পররষ্ট্র সচিব বলেন, এই চুক্তি বাস্তবায়নে আঞ্চলিক উপকার হচ্ছে। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে অঞ্চল উপকৃত হলে সেটাই হয়ে ওঠে প্রকৃত প্রতিবেশী নীতি। বিনয় কোয়াত্রা বলেন, জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে সহযোগিতা ভারত ও অন্য দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। সামগ্রিকভাবে সবাই উপকৃত হয়। ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল সবাই। আমাদের এই অঞ্চলে এর প্রাচুর্য রয়েছে। সুযোগের সেই সদ্ব্যবহারে সচেষ্ট হওয়াই সহযোগিতার ধর্ম।
আর ভারতের এই বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাবের কারণেই নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি সম্ভব হচ্ছে জানিয়ে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা আশা করছি আগামী মাসের শুরুতেই ভারতের সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে চুক্তি হওয়া ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশের গ্রিডে যুক্ত হবে। এতে করে আমাদের বিদ্যুৎ খাতে একটা বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন হবে বলে আশা করছি। মাত্র ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এনে কি হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বিদ্যুৎ আমরা অনেক কম দামে পাচ্ছি। যেখানে তেল, গ্যাস বা কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত লাগে সেখানে এই বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে মাত্র ৩ থেকে ৫ টাকায়। তাই এটা থেকে যা পাওয়া যায় তাই আমাদের জন্য লাভ। এই বিদ্যুৎ ভারতের বহরমপুর এবং বাংলাদেশের ভেড়ামারা গ্রিডের মাধ্যমে আমদানি করবে বাংলাদেশ।
তাহলে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি শীঘ্রই হচ্ছে কিনা-জানতে চাইলে তিনি বলেন, নেপালে বাস্তবায়নাধীন ভারতের জিএমআর গ্রুপের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়েও খুব শীঘ্রই চুক্তি সই হবে বলে আমরা মনে করছি। সম্প্রতি নেপাল এবং বাংলাদেশের সচিব পর্যায়ের এক যৌথ বৈঠকেও নেপালে ৬৮৩ মেগাওয়াট সানকোশি-৩ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ওই কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার ব্যাপারে দুই দেশ একমত হয়েছে।

আগামী ৬ মাসের মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি সই হওয়ার বিষয়ে দু’দেশ সম্মতি দিয়েছে। তবে নেপাল থেকে যে জলবিদ্যুৎ আমদানি করা হবে তার দর এখনো চূড়ান্ত হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনেই দুই দেশের আলোচনার ভিত্তিতে দর নির্ধারণ করে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি সই হবে। তবে দাম তুলনামূলক কম পড়বে। নেপালের সঙ্গে সরাসরি সীমান্ত না থাকায় দেশটি থেকে বাংলাদেশে এই বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে ভারতীয় সঞ্চালন লাইন ব্যবহারের জন্য তাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ চার্জ দিতে হবে। এ জন্য বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তিও সই হবে। কাটিহার-পার্বতীপুর-বরানগর ৭৬৫ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন যৌথ কোম্পানির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে।
সম্প্রতি বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা সংক্রান্ত বাংলাদেশ-ভারত যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির ২১তম সভায় নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য ভারত-বাংলাদেশ আন্তঃসংযোগ লিংকসহ জিএমআর কর্তৃক নেপালে উৎপাদিত জলবিদ্যুৎ থেকে ভারতের মাধ্যমে বাংলাদেশে ৫০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি সই, ভুটানে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটানের ত্রিপক্ষীয় বিনিয়োগ এবং বাংলাদেশে সেই বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
তবে নেপাল থেকে ৫০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানি প্রায় চূড়ান্ত বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আগামী ৫-৬ বছরের মধ্যে আরও ৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাইপলাইনে আছে। দেশে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আগামী ২ বছরের মধ্যে ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। তিনি বলেন, কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্যক্রম স্থগিত হওয়ায় প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ চলে গেছে। কিন্তু ওই পরিমাণ অর্থ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে আসছে না। নেপাল থেকে ৫০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানি কার্যক্রম প্রায় চূড়ান্ত। নেপাল-ভুটান থেকে আরও জলবিদ্যুৎ আমদানি করতে চাই। ভারতের পাওয়ার মার্কেট থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টিও সক্রিয় বিবেচনায় আছে বলে জানান তিনি।
এর আগে ২০১৮ সালে বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা বাড়াতে নেপালের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করে বাংলাদেশ। ওই সমঝোতার আওতায় নেপাল থেকে ভারত হয়ে জলবিদ্যুৎ আমদানি ছাড়াও নেপালের বিদ্যুৎখাতে বাংলাদেশের সরকারি বা বেসরকারি কোম্পানির বিনিয়োগের বিষয়গুলো রয়েছে। নেপালের রাজধানী কাঠমা-ুতে দেশটির জ্বালানি, পানি ও সেচ মন্ত্রণালয়ের এক অনুষ্ঠানে ওই সমঝোতা স্মারকে সই করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ও নেপালের জ্বালামি মন্ত্রী বর্ষা মান পুন অনন্ত।
সরকারের মাস্টারপ্ল্যানে ২০৩০ সালের মধ্যে দৈনিক ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তার একটি অংশ আসবে আমদানি করা বিদ্যুৎ থেকে। জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, নেপালে ৪০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে বাংলাদেশের সরকারি বা বেসরকারি কোম্পানিগুলো ভবিষ্যতে বিনিয়োগ করে সে বিদ্যুৎ দেশে পারবে। এতে করে আমরা অল্প পয়সায় বিদ্যুৎ পাব।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Theme Created By Limon Kabir