শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:০০ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ

দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় বাধা দিলে বরদাস্ত করব না: প্রধানমন্ত্রী

রিপোর্টারের নাম / ১৩৭ বার দেখা হয়েছে
আপডেট করা হয়েছে

রোজকার সকালের চেয়ে গতকাল রবিবারের সকালটা ভিন্ন ছিল টুঙ্গিপাড়াবাসীর কাছে। নিয়মমাফিক আচার-রীতি আর নিরাপত্তাজনিত বিধিনিষেধের বেড়াজাল যেন মিশে যায় টুঙ্গিপাড়ার সবুজেঘেরা গ্রামীণ রাজপথ; সবাইকে অনেকটা চমকে দিয়ে ব্যতিক্রমী এক দৃশ্যের অবতারণা করেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। গাড়িতে চেপে নয়; নিজ বাসভবন থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার হেঁটে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে করতে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে পৌঁছান তিনি।

সিক্ত হন স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের হর্ষধ্বনি, স্লোগানমুখর উষ্ণ অভ্যর্থনায়। ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের সূচনা বক্তব্যের পর আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে স্থানীয়দের কথা শোনেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এ সময় জনগণের ভাগ্য নিয়ে যেন কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি। বাংলাদেশ সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায় জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি খুব ভালো। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমরা সেই নীতিই মেনে চলি কিন্তু আমাদের উন্নয়নে বা অগ্রযাত্রায় কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করুক আমরা তা চাই না। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে বরদাস্ত করব না। তবুও বাংলাদেশের কিছু মানুষ আছে কথায় কথায় নালিশ করে, নালিশ করে কী হয়? কথায় আছে না- ‘নালিশ করে বালিশ পাবে, ভাঙা জুতার বাড়ি খাবে’। ওরা ওটাই পাওয়ার যোগ্য!

শেখ হাসিনা আরো বলেন, যাদের নিজের মাটিতে খুঁটায় জোর থাকে না, নিজের দেশের মানুষের আস্থা-বিশ্বাস যাদের থাকে না, দেশের মানুষের কল্যাণ করতে পারে না; ওই তারাই গিয়ে নালিশ করে। আর ওই সোশ্যাল মিডিয়াতে নানা কথা, গুজব ছড়ানো- ওইসব তারাই করে বেড়ায়।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, প্রতিশোধ যদি নিতে যেতাম তাহলে ওই বিএনপি বা জামায়াতের অস্তিত্বও থাকত না। যেটা বাস্তবতা। ওরা কী করেছে? জিয়াউর রহমান আসার পর তো আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন, খুন; সেনাবাহিনী-বিমান বাহিনী থেকে শুরু করে কেউ বাদ যায়নি। হাজার হাজার সেনা অফিসার, বিমান বাহিনীর অফিসারকে হত্যা করেছে। সৈনিকদের হত্যা করেছে। আমাদের টুঙ্গিপাড়ার লুৎফরসহ অনেকে এভাবে মারা গেছে। পরিবারগুলো লাশও পায়নি, আপনজনকেও পায়নি। আমিই তো আমার বাবা-মা, ভাই কারো তো লাশও দেখতে পারিনি।

তিনি বলেন, টুঙ্গিপাড়ায় এনে আমার বাবাকে সমাধিস্থ করেছিল একটি কারণে, এখানে সমাধিস্থ করেছে- ভেবেছিল টুঙ্গিপাড়ায় আর কেউ কোনো দিন আসতে পারবে না। ইতিহাস থেকে নামটা মুছে দিয়েছিল। ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ ছিল। জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ ছিল। একে একে সবই আমরা ফিরিয়ে এনেছি। আজ ‘জয় বাংলা’ স্লোগান উচ্চ আদালতের রায়ে আমাদের জাতীয় স্লোগান। জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণ এখন বিশ্বে স্বীকৃতি পেয়েছে ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক প্রামাণ্য দলিলে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ; যে ভাষণ মানুষকে উদ্দীপ্ত করে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ২১ বছর পর্যন্ত যেভাবে করেছিল, আজকে বাংলাদেশ বদলে গেছে যখন আওয়ামী লীগ সরকার এসেছে। আওয়ামী লীগ সরকার এলেই দেশের মানুষের ভাগ্য ফেরে। এই টুঙ্গিপাড়ার বিভিন্ন ইউনিয়নে মানুষ তো একবেলা খাবার জুটাতে পারত না। এখন তো আর সে অবস্থা নেই।
বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী রূপ মানুষ দেখেছে : জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস দমনে জনগণের সম্পৃক্ততা দরকার মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমানের আমলে তো করেছেই, এরশাদের আমলেও কম যায়নি সন্ত্রাসী

কর্মকাণ্ড, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯১ সালের কথা মনে আছে, মন্দিরগুলো ভেঙে দিল। হিন্দুদের ওপর অকথ্য অত্যাচার। আবার ২০০১-এ ক্ষমতায় এসে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান আর মুসলমান; কেউই বাদ যায়নি ওদের অত্যাচার-নির্যাতন থেকে। মানুষকে গুলি করে মারা। হাত-পায়ের হাড় হাতুড়ি দিয়ে গুঁড়া গুঁড়া করে মারা, চোখ তুলে নেয়া, হাত কেটে নেয়া। এমন কোনো সন্ত্রাসী কাজ নেই এই বিএনপি না করেছে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের যে সন্ত্রাসী রূপ, এটা তো এ দেশের মানুষ দেখেছে। তারা দেশের কোনো উন্নতি নয়, নিজেরা অর্থ-সম্পদশালী হয়েছে, বিদেশে পাচার করেছে। খালেদা জিয়ার ছেলেদের পাচার করা ৪০ কোটি টাকা আমরা ফেরতও এনেছি। অর্থ পাচার, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, মানুষ খুন করা, ভোট চুরি করা, ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তালিকা করা- এ সমস্ত অপকর্ম করে গেছে। ২০০১-এ ক্ষমতায় আসার পরই তাদের তাণ্ডব আমরা দেখেছি। এরপর আবার ২০১৩ সালে তাদের অগ্নিসন্ত্রাস। ক্ষমতা বিএনপির অর্থ বানানোর মেশিন।

আমাদের ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে আমাদের গিবত গায় : প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমদের প্রোগ্রাম, ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’- টুঙ্গিপাড়া তো বলতে গেলে আমার শহরই হয়ে গেছে। কোটালীপাড়াসহ বাংলাদেশের প্রত্যেকটা অঞ্চলে গেলে দেখা যাবে শতভাগ বিদ্যুৎ, আমরা ডিজিটাল সিস্টেম নিয়ে গিয়েছি, ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। সবার হাতে হাতে মোবাইল ফোন। কালকে আসতে আসতে দেখলাম, আবালবৃদ্ধবনিতা প্রত্যেকের হাতেই মোবাইল ফোন, ছবি তুলছে। যারা ছবি তুলছে তাদেরও কিছু ছবি আমি তুলে রেখেছি। কারণ এটাও আমার কাছে দেখার বিষয় ছিল। তিনি বলেন, আমাদের দেশে একটা গ্রুপ আছে তারা সব সময় নানা তথ্য দিয়ে থাকে। এরা কখনো গ্রামে যায়নি বা গ্রামের মানুষের অবস্থাও দেখে না। আমরা বিদ্যুৎ দিয়েছি আর অনেকগুলো প্রাইভেট টেলিভিশন- ৪৪টার মতো। এই প্রাইভেট টেলিভিশন; সেখানে গিয়ে টক শো করবে আর আমাদের দেয়া টেলিভিশন, আমাদের দেয়া বিদ্যুৎ, আমাদের দেয়া ডিজিটাল পদ্ধতি, তাই ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গিবত গায়। এটা তাদের চরিত্র। তবে মিথ্যা বেশি দিন টেকে না। সত্যের জয় হয়, সত্যের জয় হবেই।

বিএনপি-জামায়াত যাতে আবার ক্ষমতায় আসতে না পারে এজন্য নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। সাহস থাকলে দেশে আসে না কেন? : তারেক রহমানের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফিউজিটিভ (পলাতক) হয়ে ওই লন্ডনে বসে এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় বড় বড় কথা বলে। চোরের বড় গলা কথায় আছে, সেই চোরের বড় গলাই আমরা শুনি। এত সাহস থাকলে বাংলাদেশে আসে না কেন? তা তো আসতে পারে না। ওই সাহস তো দেখাতে পারে না। তিনি বলেন, ১০ ট্রাক অস্ত্র, একুশে আগস্ট গেনেড হামলা করে আমাদের হত্যার চেষ্টা, আইভী রহমানসহ আমাদের ২২ জন নেতাকর্মী হত্যা করেছে, মানিলন্ডারিং, দুর্নীতি এমন কোনো অপকর্ম নেই যে না করে গেছে। আজকে সাজাপ্রাপ্ত, পলাতক।

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বোই : বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবার দোয়া-আশীর্বাদ চাই, আমার বাবার স্বপ্নপূরণ করতে চাই। ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব। উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা এটাই আমাদের লক্ষ্য। আমার বাবা যে কাজটা শুরু করেছিলেন সেটা সম্পন্ন করা। আমিও আমার বাবার মতো জীবনটা উৎসর্গ করেছি, এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে। আজকে সেই কষ্ট-ব্যথা বুকে নিয়েই আমার প্রতিজ্ঞা হচ্ছে, এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে যেন আর কখনো কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে, এ দেশ হবে ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত সমৃদ্ধ একটি জাতি।

এ সময় শেখ হাসিনা বয়সের কথা তুলে ধরে অবসরে যাওয়ার কথা বলেন। নেতাকর্মীরা তাকে দেশ ও জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করে দায়িত্বপালন করে যাওয়ার অনুরোধ করেন। নেতাকর্মীরা বলেন, তারা শেখ হাসিনাকে দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান এবং আগামীতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আনতে কাজ করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। মতবিনিময় সভায় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ আবুল বশার খায়ের। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করে উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল শেখ।

প্রসঙ্গত, গোপালগঞ্জে দুই দিনের সফরের অংশ হিসেবে শনিবার সকালে গণভবন থেকে সড়ক পথে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি নবনির্মিত কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় উদ্বোধন করেন এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ জনগণের সঙ্গে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। কোটালীপাড়ার কর্মসূচি শেষে দুপুরের পর বঙ্গবন্ধুকন্যা টুঙ্গিপাড়ার নিজের গ্রামের বাড়িতে যান এবং রাতে সেখানে অবস্থান করেন। সফরের দ্বিতীয় দিন টুঙ্গিপাড়ার কর্মসূচি শেষে বিকালে গণভবনে ফিরে আসেন প্রধানমন্ত্রী। এ সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন তার ছেলে ও তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Theme Created By Limon Kabir