শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩১ অপরাহ্ন

বৈশ্বিক সংকটে অর্থব্যয়ে লাগাম সরকারের

রিপোর্টারের নাম / ১২২ বার দেখা হয়েছে
আপডেট করা হয়েছে

বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় অর্থ ব্যয়ে লাগাম টানা হয়েছে। এর অংশ হিসাবে নতুন অর্থবছরের শুরুতেই কয়েকটি খাতের ব্যয়ের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে অর্থ বিভাগ। এতে পরিচালনা বাজেটের আওতায় সব ধরনের ভূমি অধিগ্রহণ বন্ধ থাকবে। তবে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিতে হবে। একইভাবে সরকারি সব ধরনের আবাসিক ও অনাবাসিক ভবন নির্মাণ বন্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি অফিস-আদালতের জন্য নতুন যানবাহন কেনা বন্ধ থাকবে। অর্থ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ খাতে মোট বরাদ্দের ২৫ শতাংশ ও জ্বালানি খাতের ২০ শতাংশ ব্যয়ও স্থগিতের আওতায় আনা হয়েছে। নতুন বাজেট কার্যকরের দ্বিতীয় দিন রোববার এসব খাতে অর্থ ব্যয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে পরিপত্র জারি করেছে অর্থ বিভাগ। সেখানে বলা হয়েছে সরকারি চাকরিজীবীদের অতীতের মতো নতুন (২০২৩-২৪) অর্থবছরেও বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ থাকবে। অর্থ বিভাগের বাজেট নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে এসব ব্যয় ও বরাদ্দ স্থগিতের মাধ্যমে প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে সরকারের।

জানতে চাইলে সাবেক সিনিয়র অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ রোববার যুগান্তরকে বলেন, কৃচ্ছ সাধন কর্মসূচির আওতায় এ উদ্যোগ প্রয়োজন ছিল। সরকারের এ উদ্যোগের ফলে যে অর্থ সাশ্রয় হবে সেই অঙ্কের ঋণ করতে হবে না। অর্থাৎ সাশ্রয়ের সমপরিমাণ ঋণ কমবে। এতে সুদ ব্যয়ও কমবে। তিনি আরও বলেন, সরকারের মূল্য লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। সে কারণে এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় দিনে এ ধরনের উদ্যোগ দরকার ছিল না। কারণ বাজেট প্রণয়নের সময় খাতওয়ারি বরাদ্দ কমিয়ে বাজেট প্রণয়ন করলে আরও ভালো হতো। কারণ ওই সময়ে যে অর্থ সাশ্রয় হতো তা অন্য খাতে বরাদ্দ দেওয়া যেত।

জানা গেছে, বিগত অর্থবছরে কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচির মাধ্যমে পরিচালনা ব্যয় খাতে পণ্য, সেবা ও সম্পদ সংগ্রহের ক্ষেত্রে সাশ্রয় করা হয়েছিল ৬৪৭০ কোটি টাকা। এ ছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ভাতা থেকে ১০৯৩ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে। এ ছাড়া অন্যান্য খাতে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা হয়।

বাজেট নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে ভূমি অধিগ্রহণ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৩ হাজার ২০৬ কোটি টাকা। সেখানে বলা হয়, পরিচালনা ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় আবাসিক ও অনাবাসিক ভবন, অন্যান্য ভবন এবং স্থাপনা খাত থেকে কোনো অর্থ ব্যয় করা যাবে না। এ খাতে অর্থ ব্যয় সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। বাজেটে ভবন নির্মাণ কোডে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। ফলে এই টাকা নতুন করে নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত কোনো মন্ত্রণালয় ব্যয় করতে পারবে না। যদিও আগের অর্থবছরে একই খাতে নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছিল নতুন ভবন নির্মাণ ও স্থাপনা খাতে বছরের শুরুতে যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে তার বিপরীতে কোনো ধরনের কার্যাদেশ দেওয়া যাবে না।

সূত্র জানায়, নতুন অর্থবছরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার গাড়ি, জলজান ও উড়োজাহাজ ক্রয় বাবদ বরাদ্দ রাখা আছে ২৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় এ খাতের পুরো বরাদ্দ স্থগিত করা হয়েছে। ফলে কোনো মন্ত্রণালয় বিভাগ নতুন কোনো পরিবহণ কিনতে পারবে না। তবে একটি শর্ত দিয়ে বলা হয়েছে ১০ বছরের অধিক পুরোনো গাড়ির ক্ষেত্রে প্রতিস্থাপনের জন্য অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিতে হবে। অনুমোদন পাওয়ার পর সে অর্থ ব্যয় করা যাবে।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নতুন বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে প্রশাসনিক ব্যয় হিসাবে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১০ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা। মন্ত্রণালয়গুলো এ খাতের অর্থ সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ ব্যয় করতে পারবে। বাকি ২৫ শতাংশ ব্যয় করা যাবে না। দেখা গেছে এ উদ্যোগের ফলে এ খাতে সাশ্রয় হবে ২৬৫০ কোটি টাকা। একইভাবে দেখা গেছে, পেট্রোল, অয়েল ও লুব্রিকেন্ট, গ্যাস, জ্বালানি খাতের মোট বরাদ্দের ৮০ শতাংশ ব্যয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে ২০ শতাংশ অর্থ ব্যয়। এ খাতে বরাদ্দ আছে ২৯৩০ কোটি টাকা।

এদিকে সরকারি খরচে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিদেশ ভ্রমণ করতে পারবেন না। এ নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়েছে। চলমান বিশ্ব অর্থনীতি ও দেশের ডলার সংকটের কারণে বৈদেশিক রিজার্ভের ওপর চাপ কমানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। এর অংশ হিসাবেই সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে বলে নির্দেশনায় বলা হয়েছে। তবে সীমিত আকারে দুটি ক্ষেত্রে বিদেশ ভ্রমণ করা যাবে। এতে লাগবে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন। এই সুযোগের মধ্যে রয়েছে বৈদেশিক-সরকার, প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সহযোগী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ অর্থায়নে পাওয়া বৃত্তি, ফেলোশিপের আওতাধীন মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্সে অধ্যয়ন। দ্বিতীয়টি হচ্ছে বৈদেশিক-সরকার, প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সহযোগীর আমন্ত্রণে ও সম্পূর্ণ অর্থায়নে আয়োজিত বিশেষায়িত পেশাগত প্রশিক্ষণ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ।

প্রসঙ্গত, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেশবাসীকে মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সব ধরনের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় তথা অপচয় কমাতে হবে। সয বিলাসদ্রব্য পরিহার করে শুধু প্রয়োজনীয় জিনিস কেনায় মনোযোগ দিতে হবে।

বিগত দুই বছরে করোনার অভিঘাত কাটিয়ে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর সময় ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হিসাবে দেখা দেয় ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি এই যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ব অর্থনীতিতে নানা ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়ে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বেড়ে প্রতি ব্যারেল ১১৩ মার্কিন ডলারে ওঠে। অপর দিকে প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য ১২ গুণ বৃদ্ধি পায়। তেল ও গ্যাসের পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় কয়েকটি পণ্যের দামও অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায়। কারণ ওইসব পণ্যের সরবাহকারী দেশ ইউক্রেন ও রাশিয়া। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কৃচ্ছ সাধনের দিকে মনোযোগ দিয়েছে সরকার।

অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় অর্থ সাশ্রয়ের জন্য অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ উদাসীন। এটি অর্থ বিভাগ পর্যবেক্ষণ করেছে। অনেক মন্ত্রণালয় এই সংকটের মধ্যেও রাস্তা নির্মাণ, নতুন ভবন নির্মাণ, স্থাপনা খাতে ব্যয় করছে। এ খাতে অর্থ ব্যয়ের জন্য অর্থ বিভাগের অনুমোদনও চাচ্ছে। প্রকৃত অর্থে এই সময়ে খাদ্য, জ্বালানি ও সার আমদানি ব্যয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে অর্থ বিভাগ। ফলে এই উদাসীনতার কারণে এই মুহূর্তে জরুরি নয়, এমন ব্যয়গুলো স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Theme Created By Limon Kabir