‘বিগত ১০ বছরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক যে পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে তা পরিবর্তন অযোগ্য।’ ভারতের জি-২০ সম্মেলনের প্রধান সমন্বয়কারী হর্ষবর্ধন শ্রিংলা একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারের সময় এ মন্তব্য করেন। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, বাংলাদেশের নির্বাচন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং নির্বাচন অবাধ হওয়ার সঙ্গে ভিসানীতি ঘোষণার পর ভারতের মত কী? প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। শ্রিংলা ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব। তিনি বাংলাদেশে হাইকমিশনার ছিলেন। এখনো বাংলাদেশ সম্পর্কে নীতিনির্ধারণে তার মতামত নেওয়া হয়ে থাকে। তিনি এই মন্তব্য করলেন এমন সময় যখন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার ও গণতন্ত্র বিষয়ের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া ৮ থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত ভারত ও বাংলাদেশ সফর করছেন। সরকারি সূত্রমতে, উজরা জেয়া ভারতে পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ বিষয়ক কূটনীতিকদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গ আলোচিত হতে পারে। বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মাও দিল্লিতে এসে তার মতামত সাউথ ব্লককে দিয়েছেন। হর্ষবর্ধন শ্রিংলাকে যখন বলা হয়, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমেরিকা সফরের পর বাংলাদেশে প্রচুর কৌতূহল তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে ভারতের মতামত কী? শ্রিংলা স্পষ্ট ভাষায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর ‘নয়া প্রজন্ম-নয়া দিশা’ (যার রূপকার শ্রিংলা) বলে যৌথ বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে, সেটাই দুই দেশের সম্পর্কের দিশার মৌলিক ভিত্তি। তিনি এও বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সময়কালে দুই দেশের সম্পর্ককে ‘সোনালি অধ্যায়’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই সম্পর্ক এমন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে, যা বিগত ৪০ বছরেও হয়নি। যে কারণে এই সম্পর্কের চাকাকে পেছন দিকে ঘোরানো সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ এখন ভারতের বাণিজ্যের পঞ্চম বৃহত্তম অংশীদার। বাণিজ্যের পরিমাণ ১৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এটা আরও বাড়বে। সীমান্তে রেল ও বন্দর যোগাযোগ পরিকাঠামো বিকশিত হওয়ার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। এতে উভয় দেশ লাভবান হয়েছে। ভারতে রপ্তানি যেমন বেড়েছে তেমন বাংলাদেশের রপ্তানিও ভারতে বাড়ছে। জনতার সঙ্গে জনতার সম্পর্ক বিষয়ে হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘আগে যেখানে বছরে ৫ লাখ ভিসা দেওয়া হতো, এখন সেটা বেড়ে হয়েছে ১৫ লাখ। বাড়বে কুড়ি লাখে। মূলত পর্যটক, মেডিকেল চিকিৎসার জন্য সিংহভাগ ভিসা দেওয়া হচ্ছে। এতে বাংলাদেশিরা ভারতে এসে অর্থ ব্যয় করছেন। তাতে ভারতের অর্থনীতি লাভবান হচ্ছে। বিশেষ করে বলতে হয়, পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে বাংলাদেশিদের যোগদান। বেশির ভাগ মানুষ সেখানেই আসছেন। তিনি এও বলেন, ভারতের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই বাংলাদেশকে প্রভাবিত করবে না। সেটা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত বোঝানো হয়েছে। যেমন সিএএ’র সময়ে অনেক ভ্রান্ত ধারণা প্রচার করা হয়েছিল। প্রচুর সংখ্যায় ভারতীয় মুসলিম বাংলাদেশে যাবেন। তা হয়নি। সেটা বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব বোঝেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে বলেন, আমেরিকা সুপার পাওয়ার, এটা অস্বীকার করা যাবে না। তাদের কাছে উচ্চমানের প্রযুক্তি রয়েছে এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও রয়েছে। সেটা ভারতের প্রয়োজন। যদিও ভারতের সব থেকে বেশি প্রতিরক্ষা সামগ্রী আমদানি হয় রাশিয়া থেকে। রাশিয়া এর জন্য ভারতকে ভুল বোঝে না। চীনের সঙ্গে ভারত কিন্তু সম্পর্ক উন্নত করতে চায়। চীন একতরফা সীমান্তে চুক্তি লঙ্ঘন করে চলেছে। এটা ভারতের পক্ষে উদ্বেগের বিষয়। বিষয়টি প্রতিবেশীদের বোঝানো হচ্ছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আন্ডার সেক্রেটারি ভারত ও বাংলাদেশে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র বিষয় নিয়ে সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনা করবেন।