নিজস্ব প্রতিবেদক:
একাউন্টে জমা দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকের ৪৫ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হওয়া জনতা ব্যাংক সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর শাখার পিয়ন আওলাদ হোসেন রঞ্জু গোপালগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার হয়েছে।
সোমমার (১০ জুলাই) শাহজাদপুর থানা পুলিশের অভিযানে গোপালগঞ্জ জেলা সদরের পূর্ব মিয়াপাড়া গ্রাম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেফতার রঞ্জু শাহজাদপুরের পারকোলা এলাকার মৃত নুরুল হকের ছেলে।
মঙ্গলবার (১১ জুলাই) দুপুরে এক নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম মৃধা।
তিনি বলেন, গত ৬ জুলাই জনতা ব্যাংক, শাহজাদপুর শাখার গ্রাহক আবু হানিফ তার টাকা উত্তোলনের এসে চেক জমা দিয়ে জানতে পারেন তার একাউন্টে কোন টাকা নেই। এ সময় তিনি ব্যাংক কর্মকর্তাদের বলেন, গত ২ মে পিওন আওলাদ হোসেন রঞ্জুর মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা জমা রেখেছেন। ব্যাংকের ম্যানেজার জেহাদুল ইসলামের মাধ্যমে জানা যায়, ২ তারিখে হানিফের নামে কোন ভাউচার নেই এবং আওলাদ হোসেন রঞ্জু ঈদের ছুটির পর থেকে ব্যাংকে অনুপস্থিত রয়েছেন। রঞ্জুর অনুপস্থিতির বিষয় জানাজানি হলে গ্রাহকরা ব্যাংকে আসতে শুরু করেন।
এ বিষয়ে ম্যানেজার থানায় একটি জিডি করেন। পরবর্তীতে ম্যানেজার জানতে পারেন যে রঞ্জু গ্রাহকদের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে ব্যাংকের সিল ও স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া ভাউচার তৈরি করে ২৫ জন গ্রাহকের প্রায় ৪৫ লাখ টাকা আত্নসাত করেছেন। এ ব্যাপারে ম্যানেজার মো. জেহাদুল ইসলাম বাদী হয়ে শাহজাদপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার পর পুলিশের একটি চৌকশ টিম গোপালগঞ্জ জেলা সদরের পূর্ব মিয়াপাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে রঞ্জুকে গ্রেপ্তার করেছে।
ওসি আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রঞ্জু ২০০৩ সালে জনতা ব্যাংক শাহজাদপুর শাখায় পিওন কাম পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে যোগদান করেন। ২০০৭ সালে তার কাজের পাশাপাশি ডেচপাশের কাজ শুরু করেন এবং ব্যাংকের প্রবেশ দ্বারে একটি ডেস্ক স্থাপন করেন। তার কাজের পাশাপাশি কেউ একাউন্ট খুলতে আসলে ফরম পুরণ করে দিতেন। ২০১৬ সালের দিকে রঞ্জু ১৫ লাখ টাকা ঋণ হয়ে পড়েন। চড়া সুদের ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য তিনি বেশ কয়েকটি এনজিও থেকে ঋণ নেন। প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৩০ হাজার টাকা কিস্তি দিতে হত।
২০২২ সালের শুরুতে গ্রাহকদের কাছ থেকে জালিয়াতি করে টাকা নেয়ার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিচিত লোকদের টার্গেট করে তাদের একাউন্ট খুলে দেন। গ্রাহকরা তাকে বিশ্বাস করতেন। তার মাধ্যমেই একাউন্টের টাকা জমা ও উত্তোলন করতেন গ্রাহকেরা। কেউ যখন টাকা জমা দিতে আসত তখন তার কাছে টাকা দিয়ে চলে যেত। কিন্তু সে উক্ত টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে নিজের কাছে রাখত এবং পরের দিন গ্রাহককে ভুয়া জমা রশিদ করতেন। এভাবেই তিনি গ্রাহকদের প্রতারণা করেছেন বলে স্বীকার করেন রঞ্জু।