গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনী নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রস্তাব মতোই হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, সরকার আমাদের প্রস্তাব মেনে আমাদের সম্মান করেছে। যে যে সংশোধন চেয়েছিলাম, সরকার তাতে সম্মত নাও হতে পারত। আমরা যেসব প্রস্তাব দিয়েছিলাম, তাতে সম্মত হয়ে সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে। আমাদের প্রস্তাব পাস হয়েছে। এর ফলে ইসির ক্ষমতা কমেনি বরং বেড়েছে। গতকাল সোমবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। আরপিও সংশোধনী বিল, ২০২৩-এর বিষয়ে স্পষ্ট করার জন্য সিইসি এ সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেন। ইতোমধ্যে এ সংশোধনীতে স্বাক্ষর করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
নতুন সংশোধনীতে ভোট শেষে অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট কিছু কেন্দ্রে ভোট বাতিল ও গেজেট প্রকাশ আটকে দেয়ার ক্ষমতা ইসি পেয়েছে বলে দাবি করেন সিইসি। তিনি বলেন, আরপিও যেসব প্রস্তাব করা যায়, তা ১১ মাস আগে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। বেশ চড়াই-উৎরাই পার হয়ে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়। তাতে সামান্য পরিবর্তনও করা হয়নি। মন্ত্রণালয় ইসির মতামত নিয়েছে, বিশেষ করে ৯১-(এ) ধারা নিয়ে। আমরা বলেছিলাম, অনিয়মের কারণে যে কোনো পোলিং সেন্টার বা পুরো নির্বাচনি এলাকার ভোটগ্রহণ বাতিলের বিধান। সরকার আমাদের মতামত চেয়েছে, যে কেন্দ্রগুলোতে বাধাগ্রস্ত হবে সে কেন্দ্রগুলো বাতিল করে দেয়া হোক। আমরা সম্মত হয়েছি, এটা যৌক্তিক। এটি সম্পূর্ণ নতুন দফা।
আইনের ৯১-এ ধারায় কমিশন কোনো পরিবর্তন প্রস্তাব করেনি বলে উল্লেখ করে সিইসি জানান, সরকার বা সংসদ থেকেও কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, দীর্ঘ কয়েক মাসে আইনটি নিয়ে নানা বক্তব্য এসেছে। তাতে জনগণ বিভ্রান্ত হতে পারে। যেসব ব্যাখ্যা, মন্তব্য এসেছে তার সবগুলো সঠিক নয়। এজন্য ইসির পক্ষ থেকে আমরা স্পষ্ট করতে চাই। কমিশন বুঝে না বুঝে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মেরেছে-এমন মন্তব্যও এসেছে। গেজেট প্রকাশের পর নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা চেয়েছিল, ৯১ এ দফায় সংশোধন হয়েছে বলে কথা এসেছে। সরকার নিজের সুবিধার জন্য আইন সংশোধন করেছে, এসব কথার ব্যখ্যা দেয়া প্রয়োজন। সরকার আরপিও সংশোধন আমাদের প্রস্তাব মতো করেছে। ইসি তার নিজের অবস্থানকে আরো সংহত, শক্তিশালী করার জন্যে সংশোধনগুলো চেয়েছিল। সরকার তাতে সম্মত হয়েছে, সংসদ সম্মত হয়েছে। এতে করে আমাদের ক্ষমতা বেড়েছে।
তিনি বলেন, আরপিওর ৯১ (এ) ধারায় কোনো পরিবর্তন হলে আমাদের ক্ষমতা হেরফের হতো। সেখানে কিছু করা হয়নি। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধারা, যেখানে পোলিং পিরিয়ডে আমরা যে কোনো একটি, দুটি কেন্দ্র বা সমস্ত কন্সটিটিউয়েন্সির ভোট বাতিল করে দিতে পারব। সে ক্ষমতা হুবহু আগের মতো রয়েছে। ৯১-এ তে নতুন দফা সংযোজিত হয়েছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, আমরা নতুন দফা সংযোজন করে বলতে চেয়েছিলাম-নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর তার ফল সরকারিভাবে আমাদের কাছে পাঠানোর পরে ইসির গেজেট করা ছাড়া আর কোনো কাজ থাকে না। সেখানে আমরা বলেছিলাম- কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারি ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু তারপরও কোনো কেন্দ্র বা কোনো কন্সটিটিউয়েন্সি নিয়ে বড় ধরনের অভিযোগ থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে গেজেট স্থগিত রেখে কমিশন বিষয়টি তদন্ত করতে পারবে। সে ক্ষেত্রে কন্সটিটিউয়েন্সির নির্বাচনটা বাতিল না করে যে যে কেন্দ্রে ফলাফল বাধাগ্রস্ত হয়েছে মনে করবে, সেসব কেন্দ্রে ফলাফল বাতিল করতে পারবে। এটাকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যা আমরা সঠিক মনে করি না।
তিনি বলেন, কমিশন থেকেই ইসির ক্ষমতা কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, এটাও অবান্তর কথা। ইসি ক্ষমতা কমানোর প্রস্তাব পাঠাতে পারে না। জনগণ যাতে বিভ্রান্ত না হন, আমাদের অবস্থানটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমরা পুরো জাতি একটা সুন্দর নির্বাচন চাই। নির্বাচন নিয়ে অহেতুক, বিভ্রান্তকর মন্তব্য করে ইসিকে হেয় করা বাঞ্ছনীয় নয়। কমিশনকে গঠনমূলক পরামর্শ দিলে আমরা উপকৃত হবো। আমরা আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে প্রয়োজনে আরো কঠোর হব।