শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০২:১৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ

মার্কিন অবস্থানে সরকারে স্বস্তি

রিপোর্টারের নাম / ১২৬ বার দেখা হয়েছে
আপডেট করা হয়েছে

মার্কিন অবস্থানে সরকারে স্বস্তি : ‘তত্ত্বাবধায়ক’ ইস্যুতে নীরব উজরা জেয়া, সুষ্ঠু ভোটের প্রতিশ্রুতিতেইই তুষ্ট

মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ডোনাল্ড লু’র সফরে ঢাকায় লু হাওয়া বয়ে যাবে- এমনটাই পূর্বাভাস দিয়েছিলেন কেউ কেউ। তবে বাস্তবে তেমন কিছু ঘটেনি; বরং সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রæতি নিয়ে নিজ দেশে ফিরে গেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। বিরোধীপক্ষের ‘তত্ত্বাবধায়ক’ ইস্যুতে সাড়া দেননি উজরা জেয়ার দল। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের প্রত্যাশা জানালেও এই প্রক্রিয়ায় তারা সরাসরি যুক্ত নন বলেও সাফ জানিয়েছেন। যদিও বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র ভূমিকা রাখবে বলে আশ্বস্ত করেছেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি। ফলে বিএনপির এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি একটি ‘ডেড ইস্যু’ আবারো প্রমাণিত হয়েছে- এমনটাই মনে করছে সরকারপক্ষ। শুধু তাই নয়, দেশের সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন- এ বিষয়টিও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে মনে করছেন তারা। মূলত, সরকার পতনে প্রায় ১৪ বছর ধরে আন্দোলন করছে বিএনপি। কিন্তু নানা কারণে ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই মুখ থুবড়ে পড়ে তাদের সরকারবিরোধী আন্দোলন। তবে গত বছর বিভাগীয় সমাবেশের মধ্য দিয়ে এই আন্দোলনে প্রাণের সঞ্চার হলেও ‘ডেটলাইন ১০ ডিসেম্বর’ ফ্লপ হওয়ায় ঝিমিয়ে পড়ে আন্দোলন। সরকারপক্ষের ভাষায় সরকার হটানো ও তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে ‘নালিশ পার্টি’ বিএনপির একমাত্র ভরসা হয়ে ওঠে বিদেশি শক্তি। গত ২৪ মে বাংলাদেশের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিতে ব্যাপক চাঙা হয়ে ওঠে বিএনপি। সরকার আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়েছে- এই মন্ত্রে উজ্জীবিত বিএনপি ১০ দফা দাবি থেকে এক দফা আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়। ইইউ প্রতিনিধিদল এবং মার্কিন উচ্চ প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে বুধবার (১২ জুলাই) এক দফার কর্মসূচি ঘোষণা করে। যার মূল উদ্দেশ্যই ছিল বিদেশি কূটনীতিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সরকারের ওপর চাপ বাড়ানো। তবে বিএনপির মূল দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে কোনো কথাই বলেনি প্রতিনিধিদল। ফলে এক ধরনের স্বস্তিতে রয়েছে সরকার। নেতাকর্মীরাও আগের চেয়ে অনেক বেশি উচ্চকিত, ফুরফুরে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিদেশি বন্ধুরা আসার আগে বিএনপি তাদের অপপ্রচারের মাধ্যমে এমন আশঙ্কা তৈরির চেষ্টা করেছিল- এবার বুঝি সরকারের রেহাই নেই। নিষেধাজ্ঞা আসছে। মার্কিন ভিসানীতি সরকারকে বিপদে ফেলবে। সরকারকে হয়তো ফাইনালি বলে দেবে- এভাবে ইলেকশন করতে, তত্ত্বাবধায়ক হয়ে যাবে, প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে- এরকম চেয়েছিল বিএনপি। শেষ পর্যন্ত কী হলো?
মূলত, গত প্রায় দুই বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সরাসরি কথা বলছে। নির্বাচন নিয়ে তাদের অভিপ্রায় স্পষ্ট করেছে এবং বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যা বিএনপিকে বিভিন্নভাবে প্ররোচিত করেছে এবং বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে মার্কিন তৎপরতায় বিএনপি বেশ উজ্জীবিতও হয়েছে। একটা সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাষাকে বিএনপি নিজের কণ্ঠস্বর বলেও ভাবা শুরু করেছিল। কূটনৈতিক পাড়া এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা ছিল, মার্কিন প্রতিনিধিদল ঢাকা সফরে এসে সরকারের ওপর আরো বেশি চাপ প্রয়োগ করবে এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলবে। মোট কথা নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে, এমন ধারণাই চাউর ছিল। কিন্তু এর কোনোটাই হয়নি; বরং উজরা জেয়া বলেছেন, বাংলাদেশে কখন নির্বাচন হবে সেটা বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নেবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ভোরের কাগজকে বলেন, বিদেশি কিংবা উন্নয়ন সহযোগীরা দেশে আসবেন, পর্যবেক্ষণ করবেন- এটি স্বাভাবিক। কিন্তু কোনো অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে তারা কথা বলবেন কেন? নির্বাচন আমাদের দেশের ব্যাপার। এ ব্যাপারে সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্র, রাজনৈতিক দল সিদ্ধান্ত নেবে। অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে কেন? এটি বিএনপি বুঝতে পারে না। তাই বারবার বিদেশিদের কাছে নালিশ করে।
বাংলাদেশ আর আগের বাংলাদেশ নেই; যে কারো রক্তচক্ষু দেখলেই মাথা নুইয়ে ফেলবে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ভোরের কাগজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী সবসময় বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী, দল-মত গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিদেশি বন্ধু ও উন্নয়ন সহযোগীরা দেশে আসছেন। তারা প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে আমাদের সুরেই কথা বলছেন। তিনি বলেন, বিএনপি গত ১৪ বছর ধরে মরীচিকার পেছনে ঘুরছে। বিদেশিরা আমাদের কিছুই করতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের যে কোনো রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করে বক্তব্য দিচ্ছেন- সৎ সাহস রয়েছে বলেই পারেন। কারণ বাংলাদেশকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। শেখ হাসিনার বাংলাদেশ এখন উজ্জীবিত, উন্নয়নশীল, অগ্রগতির বাংলাদেশ। আশা করি, বিএনপির কুম্ভুকর্ণের ঘুম ভাঙবে এবং সংবিধান মেনেই নির্বাচনে আসবে। কারণ তাদের পাশে এখন কেউ নেই। আমেরিকাও নেই।
এদিকে উজয়া জেয়ার নেতৃত্বে মার্কিন উচ্চ প্রতিনিধিদল বিএনপির আশার প্রতিফলন ঘটাতে পারছেন বলে মনে করছেন না বিশ্লেষকরা। তবে ভিসানীতি প্রত্যাহার না করায় কিছুটা সংশয় রয়েছে বলে মনে করেন তারা। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও কূটনীতিক শমসের মবিন চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, আমেরিকার উচ্চ প্রতিনিধিদল সরকারের কাছে সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীও তাদের আশ্বস্ত করেছেন। তবে ভিসানীতি নিয়ে তারা কিছু বলেননি। ভিসানীতি প্রত্যাহার করেনি, বহাল থাকবে। একদিকে বিএনপির বেশ কিছু দাবি নিয়ে সরকারের ওপর চাপ নেই, অন্যদিকে ভিসানীতি রয়েছে। ফলে দুটি দিকই রয়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের কিছু ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হলেও ঢাকায় দেশটির আন্ডার সেক্রেটারির সফরের মধ্য দিয়ে ওই দূরত্ব কমেছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে অনড় রয়েছে দেশটি। সেটি বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন তারা। এক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটলে ভিসানীতি তো রয়েছে। ফলে স্পষ্ট না হলেও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সরকারের ওপর এক ধরনের চাপ রয়েছে বলে মনে করছেন তারা। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও কূটনীতিক তৌহিদ হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন চেয়েছে মার্কিন প্রতিনিধিদল। আগেও এই বিষয়ে একাধিকবার কথা বলেছে দেশটি। প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে কারা, কী বলেছেন, তা আমরা জানি না। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে তাদের বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন। এ ব্যাপারে চাপ রয়েছে বলে আমার মনে হয়। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন হবে না। এটি দেশের মানুষও চায় না। বিদেশিরাও চায় না। আর একটি সফরের মাধ্যমেই সব চাপ শেষ হয়ে যাবে এমনটি মনে করার কোনো কারণ নেই।
কূটনীতিক ও সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. সফিউল্লাহ ভোরের কাগজকে বলেন, আমেরিকা তাদের ভিসানীতি ও এর আগে পাঁচটি নীতি সরকার এবং গণমাধ্যমের কাছে জানিয়েছে। তারা স্পষ্ট বলেছে, কোনো দলকে সমর্থন দিচ্ছে না, কোনো দলের পক্ষে কাজ করছে না, বাংলাদেশে যেন সুস্থ গণতন্ত্র থাকে, সুষ্ঠু ভোট হয়। কাউকে ক্ষমতায় বসানো বা ক্ষমতাচ্যুত করা তাদের উদ্দেশ্য নয়। এটি তারা বারবার বলে আসছে। যারা সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করবে, তারা সরকার কিংবা বিরোধী শিবির যা-ই হোক আমেরিকার ভিসা পাবে না। আমাদের দেশে এটি প্রচলিত, বিরোধীরা বলে নির্বাচন হতে দেব না। তাহলে তারাই আমেরিকার ভিসা পাবে না। আমেরিকার উচ্চ প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফরে তাদের আগের কথাগুলোই মূলত তারা স্পষ্ট করেছে। তারা সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। নির্বাচনী সংলাপ নিয়ে তারা চাপ দিতে পারে না। এটি অভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপ। প্রতিনিধিদলের সফরে তারাই উচ্ছ¡সিত হবেন যারা সুষ্ঠু নির্বাচন চান। তবে ভিসানীতি কী হবে এই বিষয়টি অমীমাংসিত রয়েই গেল।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Theme Created By Limon Kabir