রংপুর প্রতিনিধিঃ
রংপুরের মিঠাপুকুরে ইরাক প্রবাসীর পরিত্যক্ত বাড়ির একটি ঘরে পড়েছিল এক মাদক ব্যবসায়ীর লাশ। তবে এটা হত্যা নাকি আত্মহত্যা এ নিয়ে এলাকায় ব্যপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। নিহতের পরিবারের দাবি, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে মৃতের ভাইয়েরা পরিকল্পিতভাবে হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। তবে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, নিহত মাদক ব্যবসায়ী নিজেও মাদকাসক্ত ছিলেন। তার নামে মাদক মামলাও রয়েছে। সে নির্জন স্থানে রাতের আঁধারে মাদকদ্রব্য গ্রহণ করতে গিয়ে স্ট্রোক করে মৃত্যুবরণ করতে পারে।
নিহত মাদক ব্যবসায়ী বাবলু মিয়া (৫২) উপজেলার ইমাদপুর ইউনিয়নের ফরিদপুর গ্রামের আজিজার রহমানের ছেলে। আজ শনিবার দুপুরে লাশ উদ্ধার করে পোস্ট মর্ডেমের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে , উপজেলার ইমাদপুর ইউনিয়নের মোল্লারহাট গান্ধার পাড়া গ্রামে ইরাক প্রবাসী নজরুল মিয়ার পরিত্যক্ত একটি টিনের বাড়ি রয়েছে। সেই বাড়ির ভিতরে কাঁচা মরিচের বাগানও আছে। আজ শনিবার সকাল ৭টার দিকে পাশের বাড়ির পারভীন বেগম নামে এক গৃহীনি সেখানে মরিচ তুলতে গিয়ে বাবলু মিয়ার লাশ দেখতে পেয়ে ভয়ে চিৎকার করলে স্হানীয়রা ছুটে আসেন। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে বাবলু মিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এলাকাবাসী জানান, নিহত বাবলু মিয়া পেশাদার মাদক কারবারি ছিলেন। তার নামে একাধিক মাদক মামলা চলমান রয়েছে। মাদক কারবারি হলেও এলাকায় সে মোটামুটি সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতো। যে পরিত্যক্ত বাড়িতে তার লাশ পাওয়া গিয়েছে, সেখানে সে জীবনেও প্রবেশ করার কথা নয়। লাশের শরীরে কোথাও আঘাতের চিহ্নও ছিলনা, আবার যে জায়গায় তার মরদেহ পাওয়া গিয়েছে, তাতে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলেও সন্দেহ করা যায়।
নিহত বাবলু মিয়ার স্ত্রীর মুঞ্জুয়ারা বেগমের দাবি, আজ ৬ বছর থেকে আমার স্বামী বাবলু মিয়ার সাথে জায়গাজমি নিয়ে তার ভাইদের সাথে বিরোধ চলছিল। ২/৩ আগেও এ নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল। এটা হত্যা ওর ভাই সাইফুল ডাক্তার এবং তার ভাড়াটিয়া ফরিদা বেগম পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে লাশ পরিত্যক্ত বাড়িতে রেখে এসেছে। মৃতের কান দিয়ে অনবরত রক্ত বের হচ্ছিল। মৃতের শরীরে কাপড় ছিলোনা। সূতরাং এটা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড।
বাবলুর মেয়ে বিপাশা বেগম তার বাবার মাদক ব্যবসার কথা অস্বীকার করে জানান, তার বাবা খুব ভালো মানুষ ছিলেন, নেশা তো দুরের কথা জীবনে একটা সিগারেট খায়নি। তার বাবাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে লাশ গুমের চেষ্টা করা হয়েছিল, অজ্ঞাত কারণে হত্যাকারীরা লাশ গুম করতে পারেনি।
অভিযুক্ত ডাক্তার সাইফুল এবং তার ভাড়াটিয়া ফরিদা বেগমের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। এ কারণে তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ রিপোর্ট লেখা অবধি তারা পলাতক রয়েছেন এবং লাশ পোস্ট মর্টেমের জন্য মর্গে রয়েছে।
এ বিষয়ে মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান বলেন, লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে পোস্ট মর্টেমের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট আসলে এটা হত্যা নাকি অস্বাভাবিক মৃত্যু তা জানা যাবে। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।