প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ইতালি সফরে ওই দেশটির সঙ্গে দুটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ। সম্ভাব্য এমওইউগুলো বাণিজ্য খাতে সহযোগিতা ও সাংস্কৃতিক বিনিময় বিষয়ে। আগামী মঙ্গলবার রোমে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। ওই বৈঠক শেষে এমওইউগুলো সই হতে পারে।
ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানান, আগামী সোমবার থেকে বুধবার ইতালির রোমে খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) আয়োজনে খাদ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। জাতিসংঘের মহাসচিবের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল এই ফোরামে যোগ দেবে। এ জন্য আগামী রবিবার রোমের উদ্দেশে রওনা করবেন তাঁরা। সফর শেষে আগামী বুধবার ঢাকার উদ্দেশে রওনা করবেন প্রধানমন্ত্রী।
ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগামী সোমবার প্রধানমন্ত্রী এফএওর সদর দপ্তরে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ আমন্ত্রিত বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী ‘ফুড সিস্টেম অ্যান্ড ক্লাইমেট অ্যাকশন’ শীর্ষক প্লেনারি সেশনে অংশ নেবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, তিনি ছাড়াও কৃষিমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হবেন।
বৈধকরণ
ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে কোন কোন বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, অবৈধ বাংলাদেশিদের বৈধ করার বিষয়টি দেশটির সরকারের কাছে তুলে ধরা হবে।
জ্বালানি খাতে সমঝোতার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আমরা ইতালির সঙ্গে জ্বালানি সহযোগিতা বাড়াতে চাই। এ নিয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হবে।’ তিনি বলেন, ‘ইতালির সংস্থা ইএনআইয়ের বিভিন্ন দেশে অবস্থান রয়েছে। যেহেতু জ্বালানির ক্ষেত্রে আমরা যথেষ্ট নির্ভরশীল, সে জন্য আমরা বিষয়টি বহুমুখীকরণ করতে চাই।’ পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে।
আমরা এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে করতে চাই। এ ছাড়া ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ বৃদ্ধি হচ্ছে। রোমের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক হলে বিভিন্ন দেশে ইএনআইয়ের যে কার্যক্রম রয়েছে, সেগুলোর মাধ্যমে ভবিষ্যতে জ্বালানি সংগ্রহে বহুমুখীকরণ আমাদের কাজে লাগবে।’
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা
ইতালির সঙ্গে সামরিক সহযোগিতার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার জন্য একটি সমঝোতা স্মারক নিয়ে কাজ চলছে। এ সপ্তাহে আমি একটি আন্ত মন্ত্রণালয় সভাও করেছি। তবে দুই দেশের সব স্টেকহোল্ডারের মধ্যে আলোচনা এখনো শেষ হয়নি, তবে সম্ভাবনা রয়েছে।’
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘আমরা চাই যে বাংলাদেশের কেনাকাটার যে উৎসগুলো রয়েছে, সেগুলোকে বহুমুখীকরণ করতে। মাসখানেক আগে আমি ইতালিতে সফর করেছি। তখনকার বৈঠকে আমরা এ বিষয়টি উল্লেখ করেছি।’ এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী এর আগে যখন ইতালিতে সফর করেছিলেন, ওই সময়ে তারাও আগ্রহ দেখিয়েছিল বলে তিনি জানান।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘এসব কেনাবেচা যদি বড় মাপে করতে হয়, তখন একটি চুক্তি থাকলে সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়। সেগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। ইতালির কাছ থেকে এরই মধ্যে আমরা ছোট ছোট অনেক কিছু নিয়েছি। তারা ইউরোপের মধ্যে অন্যতম দেশ, যারা সাবমেরিন, হেলিকপ্টারসহ অনেক কিছু তৈরি করে। ভবিষ্যতে এ সম্ভাবনা রয়ে যাচ্ছে।’
দূত সম্মেলন
এদিকে প্রধানমন্ত্রী রোমে আগামী সোমবার ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে বৈঠক করবেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আগামী সোমবার ইউরোপের ১৫টি দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে আয়োজিত আঞ্চলিক দূত সম্মেলনে অংশ নেবেন। রাষ্ট্রদূতদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী কী বার্তা দেবেন, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটি রুটিন ওয়ার্ক। রাষ্ট্রদূতরা তাঁদের কাজ সম্পর্কে বর্ণনা দেবেন। তাঁদের সমস্যার কথা বলবেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের দিকনির্দেশনা দেবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এর আগে সবাইকে নিয়ে আমরা ঢাকায় একসঙ্গে বসতাম। কিন্তু সবাইকে একসঙ্গে করতে গেলে কিছু ঝামেলা হয়। তাই প্রধানমন্ত্রী অঞ্চলভিত্তিক দূতদের নিয়ে বসছেন। প্রধানমন্ত্রী কোনো দেশ সফরে গেলে দূতদের নিয়ে আলোচনায় বসেন।’ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলি সাবরীন উপস্থিত ছিলেন।