দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে সব দলের অংশগ্রহণ চায় আওয়ামী লীগ। তবে তত্ত্বাবধায়ক নয়, সেই নির্বাচন হতে হবে সংবিধান অনুযায়ী। গত বুধবার রাতে কেন্দ্রীয় ১৪-দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে জোটপ্রধান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন, বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচন নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে প্রতিযোগিতামূলক চাই।
আপনারা (শরিক দলসহ) সেভাবেই প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। দেশি-বিদেশি যত চাপই আসুক আমি মাথা নত করব না। দেশের সংবিধান অনুযায়ী দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য যা যা করণীয় তাই করব। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তত্ত্বাবধায়কসহ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এক দফা আন্দোলন ঘোষণা করেছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। পদযাত্রা করছে তারা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না-বিএনপির এমন কঠোর মনোভাব থাকলেও ভিতরে ভিতরে দলটি নির্বাচনের জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলীয় নেতা-কর্মীদের চাঙা রাখতে কর্মসূচি ঘোষণা করছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা। তারা বলছেন, বিএনপি মুখে যাই বলুক, দলের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য হলেও তাদের বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। আওয়ামী লীগ সংবিধানের বাইরে যাবে না।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কখনো ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চায় না। আমরা চাই, সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। নির্বাচনের মাধ্যমে যারা সরকারের পরিবর্তন চান, বর্তমান সংবিধানের ভিতর থেকে তাদেরকেই নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে যদি কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন থাকে সেটি অবশ্যই আমরা করব। তিনি বলেন, সংবিধানের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করার কোনো সুযোগ নেই। লাখো শহীদের রক্তে পাওয়া সংবিধানের একচুল বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।’ জানা গেছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ নানা দেশের প্রতিনিধি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে লাগাতার বৈঠক করছেন। কিন্তু কোথাও তারা সংবিধানের বাইরে নির্বাচনের কথা বলেননি। বাংলাদেশের সংবিধান, সার্বভৌমত্ব, আইনি ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে তারা একটি নির্বাচন দেখতে চায়।
সরকারের পক্ষ থেকে তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্ভব। বাংলাদেশের সংবিধান ও বিধিবিধান অনুসারে আগামী নির্বাচন হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা সংসদ ভেঙে দিয়ে কোনো নির্বাচন নয়। সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের প্রধান শেখ হাসিনাই নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান থাকবেন। নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করবে। সবার অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে কমিশনকে সব ধরনের সহায়তা করবে সরকার।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনে বিএনপি কখনো ক্ষমতায় যেতে পারেনি। তারা ষড়যন্ত্র চক্রান্ত করে ক্ষমতায় যেতে চায়। দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান যেভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল, বিএনপিও চায় সেভাবে ক্ষমতা দখল করতে। কিন্তু সেই পরিস্থিতি নেই। ক্ষমতায় আসতে চাইলে ভোটের বিকল্প নেই। জনগণ চাইলে তারা ক্ষমতায় আসবে। সরকারের পালাবদল হবে একমাত্র নির্বাচনের মাধ্যমে। অন্য কোনো সুযোগ নেই। সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান থাকবেন। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে। আমরা চাই সংবিধানের প্রতি আস্থা রেখে বিএনপিসহ নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। আমরা প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন চাই।
জানা গেছে, সাংবিধানিক ধারা মেনে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং সেই নির্বাচনে অংশ নেবে সব রাজনৈতিক দল-এটাই আওয়ামী লীগের প্রত্যাশা। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয় না। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনই যথেষ্ট। অতীতে আমরা এমন অসাংবিধানিক সরকার দেখেছি, তারা সব রাজনৈতিক দলের প্রতি অবিচার করেছে। ওয়ান-ইলেভেনসহ কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলই সুখকর ছিল না। এ ছাড়া উচ্চ আদালতের রায়ের আলোকে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। এখন নির্বাচন তার আলোকেই হবে।
ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে খালেদা জিয়ারই উক্তি ছিল যে, ‘পাগল আর শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়’। অথচ এখন তারা নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে। উচ্চ আদালতের রায় আছে এবং সেই মোতাবেক সংবিধানও সংশোধন করা হয়েছে যে, একজন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বা সরকারপ্রধান আরেকজন নির্বাচিত সরকারপ্রধান দ্বারাই প্রতিস্থাপিত হবেন। এর বাইরে অনির্বাচিত কেউ আসতে পারবে না।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘তারা (বিএনপি) কি গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা চান? অর্থনৈতিক উন্নতি চান? দেশের মানুষের কল্যাণ হোক সেটা চান? নাকি আবার সেই ২০০৭-এর মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকার, আবার সেই ইমারজেন্সি, আবার সেই ধরপাকড় সেইগুলো চায়? এটা তো দেশের মানুষকে বিবেচনা করতে হবে।’ তিনি বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হবে। এখানে পার্লামেন্ট বিলুপ্তির প্রশ্নই ওঠে না। সরকারের পদত্যাগের প্রশ্নই ওঠে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশ্নই ওঠে না। আমরা চাই নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দল আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নিক এবং জনগণ উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে ভোট দিয়ে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে আগামীর সরকার নির্বাচিত করুক। সরকারের পক্ষ থেকে যদি কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন থাকে সেটি অবশ্যই আমরা করব। দেশের মানুষ যে রায় দেবে-সেটাই মাথা পেতে মেনে নেব। কিন্তু কারও রক্তচক্ষুকে ভয় পেয়ে সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।’