কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়ংকর হয়ে ওঠা মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) অন্যতম সামরিক কমান্ডার হাফেজ নুর মোহাম্মদসহ ছয় সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল শুক্রবার কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার শ্যামলাপুর-বাহারছড়ার গহীন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে বলে র্যাব জানিয়েছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খুনোখুনির পেছনে রয়েছে এই আরসা। বিদ্রোহী এই গোষ্ঠীর কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকার সামরিক কমান্ডার ও আরসার অন্যতম নেতা হাফেজ নুর মোহাম্মদ।
র্যাব জানিয়েছে, গত ৭ জুলাই ভোর ৬টার দিকে উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৮ ইস্ট, ব্লক-বি-১৭-১৮ সংলগ্ন এলাকায় গোলাগুলিতে ঘটনাস্থলে তিনজন এবং হাসপাতালে দুজন মারা যান। বাকি আরেকজনের মরদেহ মেলে পাহাড়ের ঢালুতে। এ হত্যাকা-ের নেতৃত্ব দেন আরসার কমান্ডার হাফেজ নুর মোহাম্মদ।
নুর মোহাম্মদের বিষয়ে র্যাবের ভাষ্য, এখন পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০টি হত্যাকা-ের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা মিলেছে। এ ছাড়া একটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক সদস্যকে হত্যার নেতৃত্বও দেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরেই তাকে খুঁজছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
র্যাবের এ অভিযানে নুর মোহাম্মদ ছাড়াও আরসার আরও পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে র্যাবের একটি সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাদের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাবের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, আরসার সামরিক শাখার অন্যরা বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার হওয়ায় বর্তমানে সামরিক শাখার মূল দায়িত্বে ছিলেন হাফেজ নুর মোহাম্মদ।
র্যাব জানিয়েছে, কক্সবাজারে বেশ কিছুদিন ধরে একের পর এক অপহরণ, মুক্তিপণ ও ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছয় হত্যাকা- সংঘটিত হয়। এসব ঘটনায় কক্সবাজার র্যাব-১৫ ও র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা দল নজরদারি শুরু করে। দীর্ঘ নজরদারির একপর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, কক্সবাজার টেকনাফকেন্দ্রিক এসব অপরাধে জড়িতদের অন্যতম আরসার হাফেজ নুর মোহাম্মদ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে আরসার অপতৎপরতায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। উখিয়া ও টেকনাফের ইয়াবা, মাদক ও মানব পাচার, সোনা চোরাচালান, চাঁদাবাজি, অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়, রোহিঙ্গা কল্যাণ ফান্ডের নামে মাসিক চাঁদা আদায়, সালিশ-বাণিজ্য, বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান থেকে চাঁদা আদায় করছে আরসা। ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার থেকে শুরু করে তুচ্ছ ঘটনায়ও আরসা ব্যবহার করছে দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র। ক্যাম্পে নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও ক্ষমতা বিস্তারে অস্ত্র ব্যবহার করছে আরসা সদস্যরা। খুনোখুনিসহ এসব অপরাধ কর্মকা-ে আশ্রয় ক্যাম্পগুলোতে নেমে এসেছে ভয়াবহ অশান্তি। সম্প্রতি সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে উখিয়া বালুখালী রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের কয়েকটি ব্লকে। এর মধ্যে বালুখালী ক্যাম্প-৮ ই-ব্লকে বিচরণ করা আরসা সবচেয়ে শক্তিশালী। তাদের রয়েছে ভারী অস্ত্র। সেখানে কথিত আরসা পরিচয়ধারী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতায় ক্যাম্পে বাড়ছে উদ্বেগ। প্রতিবাদ করলেই রাতের আঁধারে সশস্ত্র গ্রুপ এসে নিয়ে যাবে, মারধর করবে এ ভয়ে থাকে সাধারণ রোহিঙ্গারা।
আরসা সন্ত্রাসীরা পুরুষদের পাশাপাশি রোহিঙ্গা নারীদের হাতেও অস্ত্র তুলে দিয়েছে। তাদের অস্ত্রের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
উখিয়া ও টেকনাফের প্রতিটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে আরসা সদস্যরা। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালানোর আগে দেশটির সেনাবাহিনী দাবি করেছিল, তাদের ওপর বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসা হামলা চালিয়েছিল। রাখাইনে হত্যাযজ্ঞের মুখে ২০১৭ সালের আগস্টে কক্সবাজারের দিকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ঢল নামে।