রাজধানীতে কাঁচাবাজারে প্রতিদিন যে পরিমাণ বর্জ্য তৈরি হয়, এর প্রায় ৭০ ভাগই খাদ্য ও কৃষিপণ্যজাত বর্জ্য। তা ছাড়া শহর এলাকায় বাসাবাড়ি ও হোটেল-রেস্টুরেন্ট থেকেও জৈব বর্জ্য তৈরি হয়। শুধু ঢাকা শহরেই প্রতিদিন ৬ থেকে ১১ হাজার টন পর্যন্ত বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে।
এসব জৈব বর্জ্যের প্রায় ৮০ ভাগই পুনঃচক্রায়নযোগ্য। বর্জ্য থেকে জ্বালানি, বায়োগ্যাস, বিদ্যুৎ, জৈবসার ও মাছ-মুরগির খাদ্য তৈরি সম্ভব। অথচ তা পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা হচ্ছে না।
শনিবার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ব্ল্যাক সোলজার মাছির লার্ভা উৎপাদন এবং মাছ-মুরগির খাবার হিসেবে লার্ভার ব্যবহার’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন আলোচকরা। এএসভিএম অনুষদের সেমিনার কক্ষে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থায়নে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং ওয়াগেনিয়েন ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড রিসার্চের কারিগরি সহায়তায় ‘ঢাকা ফুড সিস্টেম’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে শেকৃবি। প্রকল্পটিতে সমন্বয়ক হিসেবে আছেন প্রাণী পুষ্টিবিদ অধ্যাপক ড. মোফাজ্জল হোসাইন, কন্ট্রাক্ট ম্যানেজার ও পাবলিক হেলথ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. কে বি এম সাইফুল ইসলাম এবং কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. শাখাওয়াত হোসাইন।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন শেকৃবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. অলোক কুমার পাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম, এফএও-এর প্রতিনিধি পেড্রো এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।
বক্তারা বলেন, এ দেশে এখনও মাছির লার্ভা উৎপাদন করে মুরগির খাবার তৈরির বাণিজ্যিক ফিড মিল চালু হয়নি। ব্ল্যাক সোলজার মাছির লার্ভা (প্রোটিনসমৃদ্ধ) মাছ-মুরগির খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তাই এ বিষয়ে উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসা উচিত।
বক্তারা উল্লেখ করেন, বর্তমানে মাছ ও মুরগির খাদ্যের দাম চড়া। তাই জৈব বর্জ্য ব্যবহার করে মাছ ও মুরগির খাদ্য তৈরির ব্যাপারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে মাছ-মুরগির জন্য প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে সয়াবিনজাত খাবার আমদানি করতে হয়। এতে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হয়। জৈব বর্জ্য থেকে লার্ভা উৎপাদনের মাধ্যমে সয়াবিনজাত খাবারে নির্ভরতা কমানো সম্ভব।
শেকৃবির উপাচার্য বলেন, জৈব বর্জ্য ব্যবহারযোগ্য করে একদিকে দূষণ কমিয়ে আনা সম্ভব, অন্যদিকে মাছ ও মুরগির নিরাপদ খাবার উৎপাদন করা যাবে।
এএসভিএম অনুষদের ডিন অধ্যাপক কে বি এম সাইফুল ইসলাম সমাপনী বক্তব্যে বলেন, আমরা পাইলট প্রজেক্টের মাধ্যমে বর্জ্য সংগ্রহ করে ব্ল্যাক সোলজার মাছি পালন এবং তা মুরগির খাবার হিসেবে ব্যবহার করতে কাজ করছি। তা ছাড়া পোলট্রি খামারের উচ্ছিষ্ট ফের ব্যবহারযোগ্য করে মাছির লার্ভা চাষ করার বিষয়েও ভাবা হচ্ছে।