ডিজিটাল বাংলাদেশের আরেক ধাপ এগিয়ে গেল দেশ। এখন থেকে অনলাইনেই হবে প্রকল্প অনুমোদন প্রক্রিয়া। এতে বেঁচে যাবে সময়, অর্থ এবং হয়রানি।
পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। এজন্য উদ্বোধন করা হয়েছে ‘পিপিএস’ নামের একটি সফটওয়্যার। এখন থেকে মন্ত্রণালয়গুলো তাদের প্রকল্প প্রস্তাব এই সফটওয়্যারে দেবেন। সেখান থেকে প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণ করা হবে।
পিপিএস উদ্বোধন উপলক্ষ্যে সোমবার (২৪ জুলাই) আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সফটওয়্যারটি তৈরি করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা বিভাগ। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন- পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) একেএম ফজলুল হক, আব্দুল বাকী, এমদাদ উল্লাহ মিয়ান, ড. কাউসার আহাম্মেদ এবং আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন। সফটওয়্যারটির বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক ড. নুরুন নাহার।
সভায় জানানো হয়, পিপিএস সফটওয়্যারটি ব্যবহারের মাধ্যমে অনলাইনে সংস্থা থেকে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (পিপিপি/টিপিপি) প্রণয়ন করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো যাবে। ওই মন্ত্রণালয় প্রক্রিয়াকরণ করে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাতে পারবে। এর ফলে সময়, ব্যয়, যাতায়াত কষ্ট কমে যাবে। পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।
সভায় আরও জানানো হয়, পিপিএস সফটওয়্যার উদ্বোধনের পর ১২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ পাইলটিংয়ের মাধ্যমে কাজ শুরু করবে। এগুলো হলো- পরিকল্পনা বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং শিল্প মন্ত্রণালয়। আরও আছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ধর্ম মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ।
প্রকল্প পরিচালক জানান, বর্তমানে সফটওয়্যারটির মাধ্যমে ৩৩টি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন আছে। এর মধ্যে ১৮টি সংস্থায়, ১৩টি মন্ত্রণালয়ে এবং একটি পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ‘নিমগাছি এলাকায় সমাজভিত্তিক মৎস্য সম্পদ ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনামন্ত্রীর কাছে রয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আমরা আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের আরেক ধাপে এগিয়ে গেলাম। এটা একটা বড় কাজ। সফটওয়্যারটি ব্যবহারের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আরও বেশি নিশ্চিত হবে। এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রকল্পের ত্রুটি সহজেই ধরা পড়বে। তবে ত্রুটি ধরাটা বড় কথা নয়, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে কাজ করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. শামসুল আলম বলেন, এর আগে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় পরিকল্পনা বিভাগ ও পরিকল্পনা কমিশনের ৫টি ডিজিটাল সার্ভিস চিহ্নিত করা হয়েছে। যা জাতীয় পরিকল্পনা ব্যবস্থাকে গতিশীল করবে। এসব সার্ভিস সমন্বিতভাবে কার্যকর করা এবং সেবা দেওয়ার জন্য ইন্টিগ্রেটেড ডিজিটাল সার্ভিস ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা প্রয়োজন হয়। সে লক্ষ্যে ২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সালের শুরুতে প্রজেক্ট প্রসেসিং, এপ্রুভাল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (পিপিএস) সফটওয়্যার নির্মাণের কাজ শুরু করে। এটির আজ (সোমবার) উদ্বোধন করা হলো।
সভাপতির বক্তব্যে সত্যজিত কর্মকার বলেন, এটি দীর্ঘ দিনের একটি স্বপ্ন ছিল আজ বাস্তবে রূপ পেয়েছে। এক দিন আমি হয়তো দায়িত্বে থাকব না, কিন্তু সিস্টেম থাকবে। এর সুবিধা সবাই পাবে। এজন্য আজকের দিনটি একটি বিশেষ দিন। এখন ছোট প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণ হলেও আগামীতে বড় বড় মন্ত্রণালয়ের একনেকের জন্য বড় বড় প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণ করা হবে।