নিজস্ব প্রতিবেদক:
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় মাদ্রসার শিক্ষক পদের চাকুরী থেকে জোরপুর্বক ইস্তফা নিয়ে সুদ ব্যবসায়ীকে ওই পদে চাকুরী দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। রায়গঞ্জের এম. আর দাখিল মাদ্রসার সহকারী শিক্ষক (কৃষি) সামসুজ্জোহা বকুল চাকুরী হারিয়ে গত সাত বছর যাবত মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় পরিবার পরিজন নিয়ে নিঃস্ব অবস্থায় জীবনযাপন করছে। গত সাত বছরে সুদ ব্যবসায়ীদের ভয়ে প্রতিকার চাওয়ার সাহস না হলেও সম্প্রতি ওই সুদ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় মুখ খুলেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষক পরিবার।
ভুক্তভোগী শিক্ষক সামসুজ্জোহা বকুল জানান, ২০০৩ সালে রায়গঞ্জ উপজেলার এম.আর দাখিল মাদ্রসায় সহকারী শিক্ষক (কৃষি) হিসেবে যোগদান করেন। শিক্ষকতার দরুন মাদ্রসা সংলগ্ন বিপ্লব নামে এক যুবকের সাথে পরিচয় হয়। টাকার প্রয়োজন হওয়ায় তিনি বিপ্লবকে জানালে সে তার চাচাতো ভাই সুদ ব্যবসায়ী ফেরদৌস আলমের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা সুদে নিয়ে দেন। কিন্তু টাকা পরিশোধ করতে না পারায় বিপ্লব মানসিক নির্যাতন শুরু করে। এর মধ্যেই ২০১৫ সালে বিপ্লব মাদ্রাসার সভাপতি নির্বাচিত হয়। সভাপতি নির্বাচিত হয়ে সাতদিনের মধ্যে টাকা ফেরত দিতে বলেন।
নচেত চাকুরী থেকে ইস্তফা দিতে বলেন এবং সেই পদে সুদ ব্যবসায়ী ফেরদৌসকে নিয়োগ দিবেন বলে জানান। আমি অনুরোধ করলেও তিনি এবং মাদ্রাসা সুপার শুনেন না। এক পর্যায়ে ইস্তফাপত্র তৈরী করে তার বাসায় ডেকে নিয়ে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করেন। আর এ বিষয়ে কোথাও অভিযোগ করলে প্রাণ নাশের হুমকি দেন। যেহেতু আমার বাসায় পাশ্ববর্তী উল্লাপাড়া উপজোয় তাই ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাইনি। পরবর্তীতে একমাসের মধ্যেই ওই সুদ ব্যবসায়ী ফেরদৌসকে আমার পদে চাকুরী দিয়ে দেন। তিনি বলেন, সম্প্রতি ফেরদৌস আলম ৩ লাখ সুদের টাকা দিতে না পারায় সংখ্যালঘু এক যুবকের কাছ থেকে সাড়ে ছয় বিঘা জমি লিখে নেয়ার ঘটনায় বিভিন্ন মিডিয়া প্রকাশ হয়েছে। ঘটনাটি জানতে পারে ভয় কাটিয়ে একটু সাহসের সঞ্চার হওয়ায় আমি মুখ খুলেছি।
ভুক্তভোগী শিক্ষকের স্ত্রী উম্মে হাবিবা জানান, আমার স্বামী ইস্তফা দিয়েছি জানতে পেরে তখনই সভাপতি বিপ্লবের বাসায় গিয়ে তার সুদের দুই লক্ষ টাকা ফেরত দেয়ার জন্য একমাস সময় চাই এবং জমি বিক্রি করে টাকা ফেরত দিবো বলে জানালে সে সাফ জানিয়ে দেন, আপনাদের সুদের টাকা ফেরত দিতে হবে না এবং চাকুরীও ফেরত পাবেন না। এরপর থেকে আমার স্বামী একমাস বাড়ীতে ফেরে নাই। একমাস পর তাকে খুজে পাই। সেই থেকে সে ভারসাম্যহীন অবস্থায় রয়েছে। চাকুরী খুইয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কস্টে দিন কাটছে। তিনি চাকুরী ফেরতের পাশাপাশি তার চিকিৎসা ব্যবস্থা করার দাবী জানান।
এ বিষয়ে সুদ ব্যবসায়ী ফেরদৌস আলম জানান, মাদ্রাসার সভাপতি বিপ্লব আমার চাচাতো ভাই। তাকে কোন টাকা দেয়া হয়নি। নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই চাকুরী পেয়েছি।
তবে মাদ্রসার সভাপতি বিপ্লব ও মাদ্রাসা সুপার আনোয়ার হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, সুদের টাকার জন্য নয় বরং শিক্ষক সামসুজ্জোহা শারীরিক অসুস্থতা দেখিয়ে চাকুরী থেকে ইস্তফাপত্র দিয়েছেন। পরবর্তীতে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে ফেরদৌস আলমকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।