শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২৪ অপরাহ্ন

দুয়ার খুলছে গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের

রিপোর্টারের নাম / ১৮২ বার দেখা হয়েছে
আপডেট করা হয়েছে

গভীর ও অগভীর সমুদ্রে তেল গ্যাস ও খনিজসম্পদ অনুসন্ধানে উৎপাদন ও বণ্টন চুক্তির খসড়া (মডেল পিএসসি) অনুমোদন করেছে অর্থনৈতিকবিষয়ক সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। গতকাল বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামালের সভাপতিত্বে কমিটির বৈঠকে ‘বাংলাদেশ অফশোর মডেল প্রোডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট-২০২৩’ শীর্ষক এ নীতিমালার অনুমোদন দেওয়া হয়।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় প্রণীত এই নীতিমালা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অনুমোদন আগেই পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই খসড়া অনুমোদনের ফলে এতে দীর্ঘদিন অবহেলায় পড়ে থাকা গভীর সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের দুয়ার খুলে যাবে। তবে বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এখন থেকে এ নীতিমালা মেনে সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও আবিষ্কৃত খনিজসম্পদের অংশীদারত্ব চূড়ান্ত করে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোকে কাজ দেওয়া যাবে।

কমিটির বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান বলেন, ‘দেশের উত্তরোত্তর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে খসড়া নীতিমালা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’ তবে এই নীতিমালায় কী কী পরিবর্তন আনা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি মাহবুব খান।

জানতে চাইলে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, এবার মডেল পিএসসি চূড়ান্তকরণে যেসব বিষয় বিবেচনা করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো গ্যাসের মূল্য, ট্যাক্স, বণ্টন ইত্যাদি। তিনি বলেন, ‘আশা করছি এখন বিশে^র বড় বড় কোম্পানি বাংলাদেশের সমুদ্রে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে সহজে আকৃষ্ট হবে।’

অনুসন্ধান কাজের জন্য আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন পেট্রোবাংলার এক শীর্ষ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আগে বিদেশি কোম্পানি অনুসন্ধানে আগ্রহ দেখিয়েও শেষ পর্যন্ত চলে যায়। তবে এবার তাদের আকৃষ্ট করতে পিএসসিতে বেশকিছু সংশোধন করা হয়েছে। ফলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে এক্সন মবিলসহ অনেক বড় বড় কোম্পানি আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশের অংশে ২৬টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে অগভীর সমুদ্রে ১১টি এবং গভীর সমুদ্রে ১৫টি ব্লক রয়েছে। সাগরে তেল-গ্যাস মজুদ থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পরও এর অনুসন্ধান এবং উৎপাদন অলাভজনক দাবি করে বিদেশি অনেক প্রতিষ্ঠান কাজ শুরুর পরও মাঝপথে চলে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের নভেম্বরে মডেল পিএসসি হালনাগাদ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের মডেল পিএসসি অনুযায়ী অগভীর ও গভীর সমুদ্রের প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম যথাক্রমে ৫ দশমিক ৬ ডলার এবং ৭ দশমিক ২৫ ডলার। কিন্তু এই দামে কোনো কোম্পানি জ্বালানি অনুসন্ধানে রাজি না হওয়ায় সরকার পিএসসি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। এবারের পিএসসিতে গ্যাসের দর নির্ধারিত থাকছে না। আন্তর্জাতিক বাজারে ব্রেন্ড ক্রুডের দরের সঙ্গে ওঠানামা করবে গ্যাসের দর। প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ধরা হয়েছে ব্রেন্ট ক্রুডের ১০ শতাংশ দরের সমান। অর্থাৎ ব্রেট ক্রুডের দাম ৮০ ডলার হলে গ্যাসের দাম হবে ৮ ডলার। ব্রেন্ড ক্রুডের দামের ক্ষেত্রে সারা মাসের গড় দর বিবেচ্য হবে।

দামের পাশাপাশি বাংলাদেশের হিস্যার অনুপাতও কমিয়ে আনা হয়েছে। মডেল পিএসসি-২০১৯ অনুযায়ী গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে বাংলাদেশের অনুপাত বৃদ্ধি পেতে থাকে। আর কমতে থাকে বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার। গভীর সমুদ্রে ৩৫ থেকে ৬০ শতাংশ এবং অগভীর সমুদ্রে বাংলাদেশের হিস্যা ৪০ থেকে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত ওঠানামা করবে। তবে ঠিকাদার নির্ধারিত সময়ের দুই বছরের মধ্যে কূপ খনন করে গ্যাস না পেলে কিংবা, বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য না হলে শর্তসাপেক্ষে যথাক্রমে ১ ও ২ শতাংশ হিস্যা বাড়ানোর সুযোগ থাকছে। গ্যাস বিক্রির ক্ষেত্রে প্রথম প্রস্তাব পেট্রোবাংলাকে দিতে হবে, পেট্রোবাংলা নিতে না চাইলে তৃতীয়পক্ষের কাছে গ্যাস বিক্রির সুযোগ পাবে বিদেশি কোম্পানি।

কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে পিএসসিতে। এক্ষেত্রে পরিবেশের ক্ষতির বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের সুপারিশ অনুযায়ী চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া জানমাল ও গ্যাসের রিজার্ভের ক্ষতি হলে এর পরিমাণ নির্ধারণ করবে পেট্রোবাংলার কমিটি। কোনো কারণে বিবাদ তৈরি হলে সিঙ্গাপুরের আন্তর্জাতিক আদালতে ফয়সালা করার সুযোগ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রথমবারের মতো ইন্টার্ন করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

দীর্ঘদিন তেল-গ্যাস অনুসন্ধান বন্ধ থাকায় সরকারের আমদানি নির্ভরতা বাড়ছে বলে মনে করেন ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম। তিনি বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সাগরের সম্পদ দিয়ে তাদের অর্থনীতি সুদৃঢ় করছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমার তাদের অংশে বিপুল পরিমাণ গ্যাস উত্তোলন করছে। কিন্তু বাংলাদেশের সাগরে তেল-গ্যাস পাওয়ার বিশাল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সেখানে একধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে। গত ২০ বছরে কোনো অনুসন্ধান পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে পিএসসি সংশোধন খুবই ইতিবাচক। তবে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বার্থ পুরোপুরি অটুট রাখার প্রয়োজনীয়তা স্মরণ করিয়ে দেন অধ্যাপক।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Theme Created By Limon Kabir