পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, গণমাধ্যমের কারণে রাষ্ট্রদূতগণ বিভিন্ন রকমের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মাতব্বরি করেন। আপনারা (মিডিয়া) সব সময় ময়লা খোঁজেন। আপনাদের অভ্যাসটা খারাপ হয়ে গেছে। আর কূটনীতিকরা যখন তখন যার তার কাছে প্রভাবিত হয়ে বিবৃতি দিচ্ছেন। কূটনীতিকদের এমন আচরণ ত্যাগ করতে হবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘দেশ এগিয়ে চলেছে’ বইয়ের প্রকাশনা উৎসব শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় বিবৃতি দেয় ১৩টি পশ্চমা মিশ। ওই বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার পশ্চিমা ১৩ মিশনকে ডেকে ঢাকার অসন্তোষের কথা জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডাকে বুধবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আসেনÑ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও হাইক। এ ছাড়া কানাডা, ডেনমার্ক ও সুইডেন দূতাবাসের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারাও আসেন। হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় বিবৃতি দেওয়া পশ্চমা মিশনের এসব কূটনীতিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
একই বিষয়ে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। মন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়, প্রধানমন্ত্রী রোম সফর করে ঢাকায় ফিরেছেন। হিরো আলমকে নিয়ে বিবৃতি দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে ইতালিও ছিল। দেশটির সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে মন্ত্রী পর্যায়ে এ বিষয়ে কোনো অসন্তোষ জানানো হয়েছে কি না? উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা এটা নিয়ে কিছু বলিনি। এটা ভদ্রতার জায়গা। আপনারা গণমাধ্যমকর্মী, এগুলো নিয়ে আলাপ করবেন। আমরা এটা নিয়ে আলাপ করিনি। আর আপনারা সব সময় ময়লা খোঁজেন। আপনাদের (গণমাধ্যমকর্মী) অভ্যাসটা খারাপ হয়ে গেছে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশীদের কথা বলা সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে মোমেন বলেন, ‘সাম হাউ, এটা একটা কালচার তৈরি হয়েছে অনেক দিনের। এটা বন্ধ করা উচিত। এখন সময় এসেছে এটা বন্ধ করার। এ দায় কি রাজনীতিবিদদের নেইÑ এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, অনেক দিন ধরে এটি তৈরি করেছেন। আমরা কালচারটা পছন্দ করি না।
অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশীদের বক্তব্য বা হস্তক্ষেপ বন্ধে সরকার কোনো উদ্যোগ নিয়েছে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর রোম সফরে ইউরোপে নিযুক্ত বাংলাদেশী দূতদের নিয়ে বৈঠকের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে একটা বৈঠক করেছি। সেখানে আমরা বলেছি, আমাদের দেশ সম্পর্কে অনেক দেশের জ্ঞান সীমিত। আমরা বিভিন্ন ইস্যুতে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, নির্বাচন প্রক্রিয়া, নির্বাচন কমিশনÑ এসব নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রায় ১০টি বিশেষ ব্রিফ করেছে। আমরা বলেছি, আপনারা এটা শেয়ার করেন।
‘এমনকি আগুন-সন্ত্রাসী নিয়েও বই তৈরি করেছি আমরা। আমরা বলেছি, আপনারা (বাংলাদেশী দূত) ওদের (বিদেশী) সঙ্গে শেয়ার করবেন, জানান দেবেন। এগুলো নিয়ে জানাবেন। তাতে তারা আহম্মকের মতো হঠাৎ করে বিবৃতি দেবেন না। কেউ একজন তাকে (বাংলাদেশী নাগরিক) ধরল আর সে না জেনে কথা বলে দিল!
তিনি আরও বলেন, ইতালি সফরকালে শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে কথা হয়েছে। দেশটি বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে আরও শ্রমিক চায়।
এর আগে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘দেশ এগিয়ে চলেছে’ বইয়ের প্রকাশনা উৎসবের সভাপতিত্ব করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বইটির সম্পাদনা করেন পিকেএসএফের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। সেখানে সভাপতির বক্তব্যে ড. মোমেন বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ পৃথিবীর মধ্যে নবম বৃহত্তর বাজার। বর্তমানে বাংলাদেশের রয়েছে অভাবনীয় উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার ইতিহাস। এ দেশের মানুষ ন্যায় বিচার, স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের জন্য রক্ত দিয়েছে। এই ইতিহাস পৃথিবীর আর কারও নেই। তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছিল বলেই এত অভাবনীয় উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। আর এই জন্যই অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে হবে। কোনো অজুহাতেই এই স্থিতিশীলতা নষ্ট করা যাবে না।
একই অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতায় না থাকলে বাংলাদেশের অগ্রগতি সব সময় ব্যাহত হয়। অগ্রগতি ধরে রাখতে সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। বর্তমানে আমরা ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করার মানসিকতা হতে আমরা বের হয়ে এসেছি।
এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নারীদের জন্য কাজ করছেন, এটা তার একান্ত চেষ্টা।