সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
প্রধান উপদেষ্টা নিয়ে বিতর্কিত পোস্ট, ওএসডি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ হয় না, হবেও না… নওগাঁয় পৈত্রিক সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে স্বাক্ষর জাল, দুদকে অভিযোগ সারিয়াকান্দিতে জাতীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দিবস পালিত  সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে গ্রীস্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার শুরু   কাজিপুরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অবহিত করণ ও বাস্তবায়ন বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত  কাজিপুরে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে গুণী শিক্ষকদের সন্মাননা প্রদান খানসামায় বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালন চারঘাটে জাতীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দিবস পালিত সিরাজগঞ্জে তিন হত্যা মামলার আসামি মুছা কক্সবাজারে র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

এতো বিতর্কেও বিমানের শিডিউল অফিসার পদে বহাল তবিয়তে ইশতিয়াক

রিপোর্টারের নাম / ২৩২ বার দেখা হয়েছে
আপডেট করা হয়েছে



নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাংলাদেশ বিমানের শিডিউল অফিসার পদে নিয়মনীতি না মেনে নিয়োগ পাওয়া বিতর্কিত পাইলট ইশতিয়াক হোসাইন বহাল তবিয়তে আছেন। একের পর এক অনিয়ম করে অসংখ্য বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমা হলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বিমান কর্তৃপক্ষ। এতে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে পুরো সংস্থা বা বাংলাদেশ বিমানে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তার প্রশ্ন, যুদ্ধাপরাধের পরিবারের খুব ঘনিষ্ট স্বজন হওয়ার পরেও কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না ? এমন উত্তর জানা নেই কারো। এছাড়া তিনি বর্তমান সরকারের সময় বিমানের বিরুদ্ধে আন্দোলনে জড়িত ছিলেন, যা ফ্লাইট চলাচল সর্ম্পূণভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। তদন্তে স্পষ্ট তথ্য প্রমানের পর ইশতিয়াকের বিরুদ্ধে চার্জশিট করা হয়।

পাইলট ইশতিয়াক বিএনপি সরকারের আমলে ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার শামীম ইসকেন্দার (খালেদা জিয়ার ভাই) এর ক্ষমতার জোরে একক প্রভাব খাটাতেন। এই প্রভাব খাটিয়ে তিনি ডেপুটি চিফ ফ্লাইট সেফটি হিসেবে নিযুক্ত হন। শামীম ইসকেন্দারের ক্ষমতার জোরে তৎকালীন নিরাপত্তা প্রধানকে পদত্যাগে বাধ্য করেছিলেন পাইলট ইশতিয়াক।

করোনার পরে সম্প্রতি ফ্লাইট বিঘ্নিত হওয়ার ঘটনায় তদন্তে পাইলট ইশতিয়াক জড়িত ছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

তার নিয়োগে যে অনিয়ম হয়েছে তার ব্যাখ্যা করে নাম না প্রকাশ করার শর্তে এই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ বিমানের অপারেশন ম্যানুয়েলের ধারা অনুযায়ী কোনো অ্যাসোসিয়েশনের কোনো নির্বাহী বিমানের নির্বাহী হিসেবে কাজ করতে পারবেন না। কিন্তু আন্তর্জাতিক ফেডারেশন অব এয়ারলাইন পাইলটস অ্যাসোসিয়েশনের ইফালপার (IFALPA) এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে থাকা অবস্থায়ই ইশতিয়াক হোসাইনকে বিমানের নতুন শিডিউল অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়। এটি স্পষ্টতই বিমান পরিচালনা নিয়মের পরিপন্থি। কেননা একই ব্যক্তি আন্তর্জাতিক সংস্থার ব্যবস্থাপনায় কাজ করছেন, আবার তাকেই রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমানের এমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই অপারেশন ম্যানয়াল বাংলাদেশের বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ দ্বারা অনুমোদিত। যেহেতু এটি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ দ্বারা অনুমোদিত এবং পরবর্তীকালে আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে তাই বার্ষিক অডিটের সময় বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সকে জরিমানা করা হবে। এতে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ-আইসিএও, ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-এফএএ দ্বারা অডিট হলে বাংলাদেশের বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এর অবস্থান ডাউনগ্রেড হবে। যার কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারবে না। অন্যদিকে ইউরোপে নিবন্ধিত বিমানগুলোর উপরও নিষেধাজ্ঞা আনতে পারে।

যদিও পাইলট ইশতিয়াক পরিকল্পনা ও তফসিল প্রধানের দায়িত্ব পালনকালে অপারেশ ম্যানুয়াল থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে নিয়মটি মুছে দিয়েছেন। কেউ যেন তার নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন না তুলতে পারেন তাই এ কাজ করেছেন তিনি।

ইশতিয়াকের বাবা মনোয়ার ছিলেন একজন স্বাধীনতা বিরোধী। যা নিশ্চিত করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ইশতিয়াকের বাবার সহকর্মী। মোবাইল ফোনে তিনি বলেন, এটা সত্য, মনোয়ার মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন। তার ছেলের এমন বড় পোস্টে পদায়ন এবং আওয়ামী লীগার পরিচয় দেয়া প্রসঙ্গে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা হতাশা প্রকাশ করেন।

ইশতিয়াক হোসাইনের বিরুদ্ধেও নারী সহকর্মীদের হয়রানিসহ অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে নিয়মনীতি লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে।
বিমানের এক নারী পাইলট জানান, ইশতিয়াক বিকৃত রুচিসম্পন্ন। এনার কারণে নারী কর্মীরা বারবার নিগৃহীত হচ্ছেন। নানাভাবে প্রতিবাদ ও অভিযোগ জানালেও শেষ পর্যন্ত কিভাবে যেন এরাই বিমানের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বসেন। এভাবে চলতে থাকলে বিমান ধ্বংস হতে খুব বেশিদিন সময় লাগবে না।

বিতর্কিত ইশতিয়াকের এমন নিয়োগ নিয়ে বিমানে চলছে চাপা অসন্তোষ। তার প্রভাব ও ক্ষমতার দাপটে সবাই মুখ বন্ধ রাখলেও আড়ালে এ নিয়ে চলছে তীব্র সমালোচনা। দাবি করা হচ্ছে, লোকসান ও অব্যবস্থাপনায় ধুঁকতে থাকা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবার নতুন করে হুমকির মুখে পড়েছে।

জাতীয় উপযুক্ত সংস্থাগুলি দ্বারা তাকে VVIP ফ্লাইটের জন্য ছাড় দেওয়া হয়নি, কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তাকে পরিকল্পনা ও সময়সূচীর প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে যিনি ভিভিআইপি ফ্লাইটের জন্য পাইলট নির্বাচন করেন যা VVIP – ফ্লাইটের জন্য নিরাপত্তার হুমকী।

সিপিপিএস (চিফ অফ প্ল্যানিং অ্যান্ড শিডিউলিং) হিসেবে যোগদানের পর, VVIP ফ্লাইটের জন্য ক্লিয়ার না হওয়ায়, তিনি VVIP ফ্লাইটটি ফিরিয়ে আনতে জাপানের টোকিওতে যান (এপ্রিল ২০২৩-এ প্রধানমন্ত্রীর সফর)। তিনি দুইদিন আগে থাই এয়ারওয়েজএ সেখানে হোটেল থাকার ব্যবস্থা সহ বিজনেস ক্লাস টিকিট ব্যবহার করে, উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করেন। এটি সম্পূর্ণ অর্থের অপচয় এবং ভিভিআইপি অবতরণের পর ফেরি ফ্লাইটটিকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনার জন্য একই ফ্লাইটে আরও দু’জন ভিআইপি ক্লিয়ার ক্রউ রেখে অপচয় এড়ানো যেতে পারতো। যা ফ্লাইট ডিউটি সময়সীমা কভার করে। তাছাড়া যে সব ক্রউ VVIP বহন করেছে, তারা টোকিওতে প্রবেশ না করেই ফিরে এসেছে। ক্রউরা VVIP ফ্লাইটের সাথে জড়িত হতে ক্লিয়ার হয়নি তারা জাপানে দুই দিন অবস্থান করছে এবং তাদের সাথে ফিরে আসায় ভিআইপি ক্লিয়ার করা ক্রউদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে

ইশতিয়াক হোসাইনের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে কথা বলার জন্য তার মোবাইল ফোনে বারবার চেষ্টা করা হলেও তিনি তা ধরেননি। বর্তমানে শুধু অভিজ্ঞ পাইলটের অভাবে বিমান তার পরিচালন সক্ষমতার পূর্ণ মাত্রায় উড়তে পারে না। বাপা সবসময় অভিজ্ঞ পাইলট নিয়োগের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। বিমান সংশ্লিষ্টদের দাবি, ইশতিয়াকের এ নিয়োগ পুনর্বিবেচনা করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অপেক্ষাকৃত যোগ্য ও ক্লিন ইমেজধারী কাউকে বসানোর দাবি উঠেছে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমানে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Theme Created By Limon Kabir