শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৫৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ

রোমানিয়ার সীমান্তের কাছে ইউক্রেনীয় বন্দরে রুশ ড্রোন হামলা

রিপোর্টারের নাম / ২৮৯ বার দেখা হয়েছে
আপডেট করা হয়েছে

অনাইন ডেস্ক:

ইউক্রেনের ইজমাইলে দানিয়ুব নদীর ওপর বন্দর স্থাপনায় ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এই স্থাপনাটি পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিরক্ষা জোট নেটোর সদস্য দেশ রোমানিয়ার সীমান্ত থেকে অল্প কিছু দূরে।

এই হামলায় একটি শস্য-গুদাম, একটি ভবন এবং শস্য ওঠানো-নামানোর কাজে ব্যবহৃত একটি লিফ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে হওয়া একটি সমঝোতা চুক্তি থেকে মস্কো বের হয়ে যাওয়ার পর রাশিয়া ইউক্রেনের বন্দরগুলোতে আক্রমণ চালাতে শুরু করেছে। এই চুক্তির আওতায় দুটো দেশ কৃষ্ণ সাগর দিয়ে নিরাপদে খাদ্যশস্য রপ্তানি করতে পারতো।

 

বুধবার ভোরে এই হামলায় ইজমাইলের বন্দর এলাকায় বড় ধরনের আগুন লেগে যায়। রোমানিয়ার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত দানিয়ুব নদী থেকে (যা প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে) ধারণ করা ভিডিও থেকে এই আগুনের তীব্রতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট ক্লাউস ইওহান্নিস রাশিয়ার এই হামলার নিন্দা করে বলেছেন, “রোমানিয়ার সন্নিকটে” ইউক্রেনীয় অবকাঠামোর ওপর এ ধরনের আক্রমণ গ্রহণযোগ্য নয়।

ইউক্রেনের বিমান বাহিনী বলেছে, রাশিয়ার ড্রোনগুলো রাতের বেলায় দানিয়ুব নদীর দিকে অগ্রসর হচ্ছিল, যেখানে ইজমাইল ও রেনি- ইউক্রেনের এই দুটো বন্দর অবস্থিত।

ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড বলেছে এসব ড্রোন ধ্বংস করার জন্য তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে সক্রিয় ছিল।

ওডেসার আঞ্চলিক নেতা ওলেহ কিপার বলেছেন, রাশিয়া সবশেষ যেখানে হামলা চালিয়েছে সেখানে জরুরি সব বিভাগ কাজ করছে এবং এই হামলায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, “দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেখানে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।” ইউক্রেনের আঞ্চলিক নেতা সোশাল মিডিয়াতে ক্ষয়ক্ষতির কয়েকটি ছবি পোস্ট করেছেন যা দেখে বোঝা যাচ্ছে যে বেশ কয়েকটি টার্গেটে এই হামলা চালানো হয়েছে।

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে ,বন্দরের একটি লিফটে আঘাত করা হয়েছে।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলছেন, লিফ্ট ছাড়াও একটি কার্গো টার্মিনাল ও একটি গুদামঘরে হামলা চালানো হলে সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, ইজমাইলের সরকারি আইনজীবীরা হামলায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য তদন্ত শুরু করেছেন।

গত সপ্তাহেও রাশিয়ার ছোড়া ড্রোন রেনি বন্দরের শস্য-গুদামে আঘাত করেছিল। এই বন্দরটিও দানিয়ুব নদীর আরো উজানে এবং রোমানিয়ার ভূখণ্ডের কাছে।

বুধবার রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট লুকাস ইওহান্নিস বলেছেন, রোমানিয়ার এতো কাছে আক্রমণ করা যুদ্ধাপরাধ। এই হামলার কারণে “বিশ্বের যেসব এলাকার মানুষের খাদ্য প্রয়োজন, সেখানে শস্য পাঠানোর কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”

এর আগে রাশিয়া কৃষ্ণ সাগরে বৃহৎ সমুদ্র বন্দর ওডেসা এবং চরনোমর্স্কেও হামলা চালিয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে এসব হামলায় ৬০ হাজার টন খাদ্যশস্য বিনষ্ট হয়েছে।

গত জুলাই মাসে শস্য চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় রাশিয়ার পক্ষ থেকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল যে তারা ইউক্রেনের কৃষ্ণ সাগর বন্দরের অভিমুখে অগ্রসরমান যেকোনো নৌযানের ওপর আক্রমণ চালাবে, যা কার্যত নৌ-অবরোধের পর্যায়ে পড়ে।

এর পর থেকে দানিয়ুব নদীকে শস্য পরিবহনের বিকল্প রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল।

সারা বিশ্বে গম ও ভুট্টা রপ্তানির ক্ষেত্রে ইউক্রেন শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর একটি। এর বেশিরভাগ চালানই পাঠানো হয় কৃষ্ণ সাগরে অবস্থিত দেশটির বিভিন্ন বন্দর থেকে। জাহাজ চলাচলের জন্য কৃষ্ণ সাগর বন্ধ হয়ে গেলে ইউক্রেনীয় শস্য রপ্তানির জন্য এই দানিয়ুব নদী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

শস্য চুক্তি থেকে রাশিয়ার বের হয়ে যাওয়ার পর বিশ্ববাজারে তাৎক্ষণিকভাবে গমের মূল্য বেড়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বে, বিশেষ করে আফ্রিকা ও এশিয়ার কিছু দেশে, খাদ্য নিরাপত্তার ব্যাপারে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

ইউক্রেনের বন্দরগুলোতে হামলার পাশাপাশি রাশিয়া গতরাতে রাজধানী কিয়েভেও দশটির বেশি ড্রোন হামলা চালিয়েছে বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এসব ড্রোন বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সাহায্যে ধ্বংস করা হয়েছে। তবে কর্মকর্তারা বলছেন এসব ড্রোনের ধ্বংসাবশেষের আঘাতে অনাবাসিক কিছু ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব হামলার ব্যাপারে রাশিয়ার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

সূত্র : বিবিসি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Theme Created By Limon Kabir