শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৫৭ অপরাহ্ন

১২ দিনের কাজ হবে ৪৮ ঘণ্টায়

রিপোর্টারের নাম / ১১০ বার দেখা হয়েছে
আপডেট করা হয়েছে

কক্সবাজার জেলার মহেশখালীতে নির্মাণ হচ্ছে ইনস্টলেশন অব সিংগেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন প্রকল্প। এটি জ্বালানি খাতে সরকারের সবচেয়ে বড় এবং যুগান্তকারী মেগা প্রকল্প। এর মাধ্যমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে দেশের আমদানি-নির্ভর জ্বালানি তেল খালাসে। সময় ও খরচ অবিশ্বাস্যরকম কমে আসবে। গভীর সমুদ্র থেকে তেল পাইপলাইনের মাধ্যমেই ১১০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে পৌঁছে যাবে চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডে (ইআরএল)।

এতে ১২ দিনের কাজ হবে মাত্র ৪৮ ঘণ্টায়। প্রতি বছর রাষ্ট্রের সাশ্রয় হবে ৮০০ কোটি টাকা। তেল মজুত সক্ষমতাকে নিয়ে যাবে অনন্য উচ্চতায়। ৫০ হাজার ঘনমিটারের তিনটি ও ৩০ হাজার ঘনমিটারের তিনটি ট্যাংকে তেল মজুত রাখা যাবে। যা সংকটকালে কাজে আসবে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মসংস্থান করে আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে। প্রকল্পটির ৯৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। কমিশনিং ও টেস্টিং শেষে চলতি বছরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রকল্পটি উদ্বোধনের কথা রয়েছে। এ তথ্য জানিয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, লাইটার জাহাজে লোড আনলোডের সময় তেলের যে অপচয় হতো, সেটি রোধ হবে, ফলে পরিবেশের ক্ষতি হবে না। সেই সঙ্গে এই পদ্ধতি অধিক নিরাপদ। সব মিলিয়ে এসপিএম ডাবল লাইন প্রকল্পটি জ্বালানি খাতের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে কাজ করবে।

২০১৫ সালে নেওয়া প্রকল্পটি তিন বছরের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু চার দফা সংশোধনের মাধ্যমে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। এতে প্রকল্পটির মোট ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা। এই প্রকল্পটি চালু হলে প্রতি বছর ৯ মিলিয়ন টন তেল খালাস করা যাবে। ৪৮ ঘণ্টায় খালাস হবে ১ লাখ ২০ হাজার টন ক্রুড অয়েল (অপরিশোধিত তেল)। ৭০ হাজার টন ডিজেল খালাসে সময় লাগবে মাত্র ২৮ ঘণ্টা। সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মহেশখালী দ্বীপে বন বিভাগের ১৯১ একর জমিতে এসপিএম প্রকল্পের মূল অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। এর মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে তিনটি করে মোট ছয়টি স্টোরেজ ট্যাংক। স্টোরেজ ট্যাংকগুলো সমতল থেকে প্রায় ২০ ফুট উঁচু করে নির্মাণ করা হয়েছে, যাতে বন্যা কিংবা বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে স্টোরেজে পানি উঠতে না পারে। এসপিএম থেকে ৩৬ ব্যাসার্ধের দুটি পৃথক পাইপলাইন গিয়ে মিলিত হয়েছে গভীর বঙ্গোপসাগরের বয়াতে। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে জিটুজি ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অধীনস্থ কোম্পানি ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড এটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের ইপিসি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছেন চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ার কোম্পানি লিমিটেড।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা ক্রুড অয়েল এবং ফিনিসড পোডাক্ট বড় জাহাজ থেকে লাইটার জাহাজের মাধ্যমে ১ লাখ ২০ হাজার টন তেল খালাস করতে ১১-১২ দিন লাগত। সনাতনী পদ্ধতিতে আমদানিনির্ভর জ্বালানি তেল খালাস করতে অতিরিক্ত সময়ের পাশাপাশি গুনতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা। আমদানি করা জ্বালানি তেল সরাসরি স্বল্প সময়ের মধ্যে খালাস করার জন্য ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে গভীর সমুদ্রে এসপিএম প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এজন্য এসপিএম বয়া মহেশখালী দ্বীপের পশ্চিম পাশে বঙ্গোপসাগরে স্থাপন করা হয়েছে। বিদেশ থেকে বড় জাহাজে আমদানি করা জ্বালানি তেল পাইপলাইনের মাধ্যমে মহেশখালীতে স্থাপিত স্টোরেজ ট্যাংকে জমা হবে। সেখান থেকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ডিপো, ইস্টার্ন রিফাইনারির স্টোরেজ ট্যাংক ছাড়াও প্রয়োজনে তেল বিপণন কোম্পানির বিভিন্ন স্টোরেজ ট্যাংকে জমা করে সারা দেশে সাপ্লাই করা হবে। এসপিএম প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় জ্বালানি খালাসে প্রতিবন্ধকতায় আর পড়তে হবে না। এতে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, জাহাজ থেকে তেল সরাসরি পাম্প করা হবে—যা এসপিএম হয়ে অফশোর পাইপলাইনের মাধ্যমে মাতারবাড়ী এলটিই (ল্যান্ড টার্মিনাল ইন্ড) পর্যন্ত এবং সেখান থেকে অনশোর পাইপলাইনের মাধ্যমে মহেশখালী এলাকায় স্থাপিত স্টোরেজ ট্যাংকে জমা হবে। প্রকল্প কর্মকর্তারা বলেন, মহেশখালীতে স্থাপিত ট্যাংকগুলো থেকে গভীর সমুদ্রে স্থাপিত বয়ার দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। বয়া থেকে মহেশখালী ট্যাংক হয়ে চট্টগ্রামের ইআরএল পর্যন্ত দূরত্ব ১১০ কিলোমিটার। যেহেতু এটি ডাবল পাইপলাইন প্রকল্প। সেই হিসেবে এটির মোট দূরত্ব ধরা হয়েছে ২২০ কিলোমিটার। এই দূরত্বের মধ্যে সমুদ্রের গভীরে ১৪৬ কিলোমিটার ও সমতলে ৭৪ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে। এসপিএম প্রকল্প কর্মকর্তা মনজেদ আলী শান্ত ইত্তেফাককে জানান, এটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্প। এটি কাজ শুরু করলে সুবিধা মতো আমরা ক্রুড অয়েলকে পাম্পিং করে চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারিতে পাঠাতে পারব। মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইয়াছিন বলেন, এই প্রকল্পটি দেশের জ্বালানি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। পাশাপাশি প্রকল্পটি মহেশখালীতে হওয়ায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এখানকার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Theme Created By Limon Kabir