নিজস্ব প্রতিবেদক,রংপুর:
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা মডেল মসজিদের খতিবের নামে ভূয়া এতিমখানা ও মাদ্রাসা দেখিয়ে (ছয়-টন) এতিমদের জন্য বরাদ্দ দেয়া চাল আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে কয়েকদিন থেকে উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠ। বিভিন্ন সভা সেমিনারে বক্তারা এতিমদের চাল আত্মসাৎকারী খতিবের বিরুদ্ধে প্রকাশে বিষাদগার করছেন। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বর্তমানে বিষয়টি ভাইরাল।
রংপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সূত্রে জানা যায়- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় গত-জুলাই মাসে বিভিন্ন এতিমখানা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রধানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মিঠাপুকুর উপজেলার ৩৪ টি এতিমখানা ও একটি মন্দিরে ৩-টন করে ত্রাণের চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। চাল বিতরনে যথাযথ নিয়ম মেনে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের আওতায় নিবন্ধিত এতিমখানা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব যাচাই-বাছাই করে তবেই চাল বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশনা ও আদেশ দেন তৎকালীন রংপুর জেলা প্রশাসক ডঃ চিত্রলেখা নাজনীন।
মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পি-আই-ও) জেলা প্রশাসকের নির্দেশনাক্রমে প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব যাচাই-বাছাই শেষে এতিমখানা গুলোর প্রধানদের (৩ টন) করে চাল প্রদান করেন। কিন্তু যেসব এতিমখানায় চাল বিতরন করেছেন সেগুলোর অধিকাংশ গুলোর নেই নিবন্ধন কিংবা অস্তিত্ব!
বরাদ্দ দেওয়া এতিমখানা ও মাদ্রাসাগুলোর নামের তালিকা থেকে দেখা যায়, অস্তিত্ব-বীহিন দু’টি মাদ্রাসার (৬-টন) চাল উত্তলন করেছেন মিঠাপুকুর মডেল মসজিদের খতিব হযরত মাওলানা- মুফতিঃ মোঃ আখিরুজ্জামান আজাদী। এখানেই বাঁধে যত বিপত্তি। তিনি মিঠাপুকুর হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা, বালুয়া নুরুল হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে ৩ টন করে ৬ টন চাল উত্তলন করে আত্মসাৎ করেছেন বলে প্রর্তীয়মান হয়। মিঠাপুকুর উপজেলা ঘুরে এই নামে কোন মাদ্রাসা কি়ংবা এতিম খানার অস্তিত্ব মেলেনি।
জেলা প্রশাসক প্রদত্ত স্মারক ও নির্দেশনা পত্রে দেখা যায়, এতিমদের চাল বিতরনে কোনো ধরনের অনিয়ম ও দূর্নীতি পরিলক্ষিত হলে এর সমস্ত দায়ভার বর্তাবে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং পিআইও’র উপর। সেখানে সুস্পষ্ট উল্লেখ্য আছে,প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব যাচাই-বাছাই করতে হবে। চাল বিতরনের সময় অবশ্যই ইলেকট্রিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা উপস্থিত থাকবেন। কিন্তু এসব চাল বিতরনের কথা জানেনা উপজেলায় কর্মরত সংবাদকর্মীরা। এ বিষয়ে মিঠাপুকুর রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি রুবেল হোসাইন সংগ্রাম বলেন, আমরা বিষয়টি জানিনা। হয়তোবা অনিয়ম প্রকাশের ভয়ে আমাদের জানানো হয়নি। একই কথা বলেন উপজেলায় কর্মরত একাধিক সাংবাদিক।
চাল আত্মসাৎ প্রসঙ্গে মিঠাপুকুর উপজেলা মডেল মসজিদের খতিব, আখিরুজ্জামানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আমি পরিস্থিতির স্বীকার। আমাকে ব্যবহার করা হয়েছে। কে ব্যবহার করেছে, জানতে চাইলে তিনি জানান, মানুষ ভুলের উর্ধ্বে নয়! সময় হলে সব জানতে পারবেন। এই বলে তিনি সংবাদ প্রকাশে বিরত থাকার অনুরোধ জানান। এ বিষয়ে মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহি অফিসার রকিবুল হাসানের সাথে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এমনি খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি কোন মন্তব্য করেননি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান সরকার জানান, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে বিষয়টি আপনাদের জানাতে পারবো।
এ বিষয়ে মিঠাপুকুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, জাকির হোসেন সরকার জানান , সে একটা চোর। ভূয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা দেখিয়ে চাল আত্মসাৎ করেছে। তার পিছেন নামাজ হবেনা। তাকে দ্রুতগতিতে সরানোর জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বলেছি। আমরা তার পিছনে নামাজ পড়তে চাইনা।