দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ী আওয়ামী লীগ সরকারের নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ৩৭ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটায় বঙ্গভবনের দরবার হলে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। বাংলাদেশের নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পঞ্চমবারের মতো রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিল আওয়ামী লীগ। নতুন মন্ত্রিসভায় বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছেন প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্র পরিচালনায় এবার তার সঙ্গী হলেন ২৫ জন মন্ত্রী এবং ১১ জন প্রতিমন্ত্রী। গতকাল পর্যন্ত মন্ত্রিসভায় উপমন্ত্রী হিসাবে কাউকে রাখা হয়নি। নতুন মন্ত্রিসভার যাত্রা শুরুর মধ্য দিয়ে আগের মন্ত্রিসভার বিলুপ্তি ঘটেছে।
শেখ হাসিনা তার নতুন মন্ত্রিসভা সাজিয়েছেন ১৪ নতুন মুখ নিয়ে। তাদের মধ্যে পাঁচজনের এর আগে বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা আছে। সদ্য বিদায়ি মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীকে আগের মন্ত্রণালয়েই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দপ্তর পরিবর্তন করা হয়েছে বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর। আগের মন্ত্রিসভার এক প্রতিমন্ত্রী এবং এক উপমন্ত্রী এবার পদোন্নতি পেয়ে পূর্ণ মন্ত্রী হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মন্ত্রিসভায় আছেন আরও তিনজন নারী সদস্য। এর মধ্যে একজন পূর্ণমন্ত্রী এবং দুজন প্রতিমন্ত্রী।
শপথ নিতে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটের দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গভবনে পৌঁছলে তাকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর তারা দরবার হলে প্রবেশ করেন। এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা। অফহোয়াইট শাড়ি পরিহিত শেখ হাসিনাকে দরবার হলে আত্মবিশ্বাসী ও প্রাণবন্ত দেখাচ্ছিল। প্রশস্ত হলটি আমন্ত্রিত অতিথিদের ভিড় যেন উপচে পড়ছিল। সন্ধ্যা ৭টায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে বঙ্গভবনের দরবার হলে মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠান শুরু হয়। নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছ থেকে সরকারপ্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন ও গোপনীয়তার শপথ নেন। প্রধানমন্ত্রী শপথ নেওয়ার পর রাষ্ট্রপতি তাকে অভিনন্দন জানান।
এরপর শপথ গ্রহণের জন্য ২৫ জন মন্ত্রী এবং ১১ প্রতিমন্ত্রীকে দুই ধাপে শপথ মঞ্চে আহ্বান করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তাদের শপথ বাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি। সবাই শপথ নেওয়ার পর শপথ বইয়ে স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে শপথ গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা সারেন।
শপথ নেওয়া পূর্ণ মন্ত্রীরা হলেন-আ ক ম মোজাম্মেল হক, ওবায়দুল কাদের, আবুল হাসান মাহমুদ আলী, আনিসুল হক, নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, আসাদুজ্জামান খান, তাজুল ইসলাম, মুহাম্মদ ফারুক খান, মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ, দীপু মনি, সাধন চন্দ্র মজুমদার, আবদুস সালাম, ফরিদুল হক খান, র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, আবদুস শহীদ, ইয়াফেস ওসমান (টেকনোক্র্যাট), সামন্ত লাল সেন (টেকনোক্র্যাট), জিল্লুল হাকিম, ফরহাদ হোসেন, নাজমুল হাসান, সাবের হোসেন চৌধুরী ও মহিবুল হাসান চৌধুরী।
শপথ নেওয়া নতুন প্রতিমন্ত্রীরা হলেন-নসরুল হামিদ, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, জুনাইদ আহমেদ পলক, জাহিদ ফারুক, সিমিন হোসেন রিমি, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, মহিববুর রহমান, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, শফিকুর রহমান চৌধুরী, রুমানা আলী ও আহসানুল ইসলাম।
শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের প্রথম সারিতে সরকারপ্রধানের এক পাশে ছিলেন শেখ রেহানা এবং অন্যপাশে রাষ্ট্রপতির স্ত্রী রেবেকা সুলতানা। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর চাচা শেখ কবীর হোসেন, চাচাতো ভাই শেখ হেলাল।
এ ছাড়া জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী অতিথি সারিতে ছিলেন। শপথ অনুষ্ঠানে সংসদ্য-সদস্য, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, সাংবাদিক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়। এই শপথ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে বঙ্গভবনে প্রায় ১ হাজার ৪০০ অতিথিকে দাওয়াত করা হয়। শপথ অনুষ্ঠান শেষে বঙ্গভবনের মাঠে চা চক্রে যোগ দেন সবাই। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে ঘুরে ঘুরে সবার সঙ্গে কথা বলেন। নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেওয়ায় ২০১৮ সালের ৭ জানুয়ারি গঠিত পুরনো সরকারের দায়িত্ব শেষ হলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শুরু হলো আওয়ামী লীগের নতুন সরকারের যাত্রা।
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীক নিয়ে ২২২টি আসনে জয়লাভ করে। জাতীয় পার্টি ১১টি আসনে, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬২টি এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক দল-ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) একটি করে আসন পেয়েছে। নির্বাচনে একটি আসনে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি।
বুধবার ২৯৮ জন সংসদ-সদস্য স্পিকারের কাছ থেকে শপথ নেন। সেদিনই আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে শেখ হাসিনাকে সংসদ নেতা নির্বাচিত করা হয়। শেখ হাসিনা বুধবার বিকালে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে গেলে টানা চতুর্থ মেয়াদে তাকে সরকার গঠনের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানান রাষ্ট্রপতি।