আবহমানকাল থেকে মানুষে মানুষে খাট্টা-মিঠা সম্পর্কের মোক্ষম উদাহরণ বউ-শাশুড়ির সম্পর্ক। এই জটিল সম্পর্ক নিয়ে রচিত হয়েছে কত না গল্প–উপন্যাস। উপমহাদেশে নির্মিত হয়েছে বেশ কিছু জনপ্রিয় সিনেমা, নাটক ও টিভি সিরিয়াল। পত্রিকার পাতা খুললেও শাশুড়ির ইন্ধনে পুত্রবধূকে হত্যা কিংবা পুত্রবধূর অত্যাচারে শাশুড়ির মৃত্যুর খবর প্রায়ই চোখে পড়ে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে স্বার্থের দ্বন্দ্বই এসব মর্মান্তিক ঘটনার মূল কারণ। এ সমস্যার শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত বলে এক দিনে তা দূর করা সম্ভব নয়। তবুও চেষ্টা তো করে যেতেই হবে। এখানে থাকছে পুত্রবধূ ও শাশুড়িদের জন্য কিছু পরামর্শ। এসব পরামর্শ দুজনের সম্পর্ক সহজ রাখতে সহায়তা করবে…
সময়-সুযোগ পেলে বউ-শাশুড়ি মিলে কোথাও বেরিয়ে পড়ুন। একসঙ্গে কোনো ভালো সিনেমা দেখে আসুন। একসঙ্গে বাইরে খেতে যান। কিংবা দুজনে মিলে শপিং করে আসুন। এসব কাজ আপনাদের দুজনের সম্পর্কটা আরও দৃঢ় করবে।
বিয়ের পর ছেলে পর হয়ে গেল—মায়েদের কখনোই এমনটা ভাবা উচিত নয়। অধিকার ভাগাভাগি করে নিতে যত দ্রুত সক্ষম হবেন, ততই মঙ্গল। বিয়ের পর ছেলের আচার–আচরণ যদি বদলায়ও, তার পেছনে পুত্রবধূর দোষ ধরার আগে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে সব বিবেচনা করুন।
বউ আর শাশুড়ি ঘন ঘন একে অন্যের ব্যাপারে অভিযোগ করবেন না। বিশেষ করে যে মানুষটি আপনাদের দুজনের জীবনেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ, তাঁর কাছে তো নয়ই। বরং নিজেরা খোলামেলা আলোচনা করুন। সমস্যা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিন।
মানুষ হিসেবে কে বেশি ভালো, তা নিয়ে দুজনে প্রতিযোগিতা করবেন না। কোন কাজে কে বেশি পটু, তা নিয়েও প্রতিযোগিতায় নামবেন না। বরং একে অন্যকে সহযোগিতা করুন। দায়দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নিন।
শাশুড়ি ও পূত্রবধূ একসঙ্গে বসবাস না করলে নিয়মিত একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। এ যোগাযোগ যেন শুধু উৎসবের দিনগুলোয় একটা ফোন করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থাকে। যেসব ভালো–মন্দ বিষয় ভাগাভাগি করে নেওয়ার মতো, তা একে অন্যকে বলুন।
ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে যদি কেউ কাউকে আঘাত করে থাকেন কিংবা আপনাদের মধ্যে কোনো ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব সুন্দর ও শোভনভাবে ঝামেলা মিটমাট করে ফেলুন। এর মধ্যে তৃতীয় কাউকে দরকার নেই।
জীবদ্দশাতেই সন্তানদের কোনো সম্পত্তি বুঝিয়ে দিতে চাইলে সব সন্তানের মধ্যে ন্যায্যভাবে সম্পত্তি ভাগবাঁটোয়ারা করুন। পুত্রবধূদের মধ্যে নিজের মূল্যবান অলংকার বা পোশাক–আশাক বণ্টন করতে চাইলে তা সুষমভাবেই করুন। নয়তো কে বেশি পেল, কে কম, তা নিয়েও পুত্রবধূদের সঙ্গে আপনার একটা হিংসাত্মক সম্পর্ক তৈরি হতে পারে।
নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে শাশুড়ি কোনো পরামর্শ দিলে মনোযোগ দিয়ে শুনুন। এমন নয় যে শাশুড়ির সঙ্গে একমত হতেই হবে। তিনি কী বলতে চান, অন্তত একবার শোনা এবং বোঝার চেষ্টা করা জরুরি।
পরস্পরের প্রতি আপনারা যেমন মনোভাবই পোষণ করুন না কেন, সব সময় একে অন্যের প্রতি স্নেহশীল ও শ্রদ্ধাশীল আচরণ করুন। সর্বোপরি পারস্পরিক শ্রদ্ধা থাকলে, একে অন্যকে ক্রমাগত নাজেহাল করার বদভ্যাস ত্যাগ করলে এবং ‘কোয়ালিটি টাইম’ কাটালে বউ-শাশুড়ির সম্পর্ক থাকবে সুন্দর ও স্বাভাবিক।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া