
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব মীর আরশাদুল হক। একই সঙ্গে তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
আজ সকালে নিজের ফেসবুক একাউন্টে এক পোস্টে এনসিপি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। মীর আরশাদুল হক এনসিপিতে কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিবের পাশাপাশি নির্বাহী কাউন্সিলের সদস্য, মিডিয়া সেল ও শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য, পরিবেশ সেলের প্রধান এবং চট্টগ্রাম মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করছিলেন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম–১৬ আসনে দলটির মনোনয়নও পেয়েছিলেন তিনি।
তিনি তার ফেসবুক একাউন্টে লিখেন, ‘একটি বিশেষ ঘোষণা’ আমি মীর আরশাদুল হক জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব, নির্বাহী কাউন্সিলের সদস্য, মিডিয়া সেল ও শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য, পরিবেশ সেলের প্রধান এবং চট্টগ্রাম মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারীসহ অন্যান্য সব দায়িত্ব ও পদ থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। আমি এই মুহূর্তে এনসিপি থেকে পদত্যাগ করলাম। চট্টগ্রাম-১৬ সংসদীয় আসনে (বাঁশখালী) এনসিপির হয়ে আমি নির্বাচন করছি না।
তিনি লিখেন, আজকে একটি বিশেষ দিনে এই ঘোষণাটি দিচ্ছি, যেদিন দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসন শেষে দেশে ফিরলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান। সুস্বাগতম।
আরশাদুল আরও লিখেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এনসিপির যাত্রা শুরু হয়েছিল। কিন্তু এনসিপির প্রতিষ্ঠা থেকে এখন পর্যন্ত গত ১০ মাসের অভিজ্ঞতায় আমার কাছে প্রতীয়মান হয়েছে যে এই দল ও দলের নেতারা সে প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। যে স্বপ্ন ও সম্ভাবনা দেখে এনসিপিতে যোগ দিয়েছিলাম, তার কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। দল ও বড় অংশের নেতারা ভুল পথে আছেন বলেই মনে করি আমি। এই ভুল পথে আমি চলতে পারি না। এই মুহূর্ত থেকে এনসিপির সাথে আমার কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই। তবে ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকবে। তাদের প্রতি শুভকামনা রইল।
তিনি লিখেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট স্বৈরাচারের পতন ও পলায়নের দিন আমি এতোই অভিভূত হয়েছিলাম যে মনে হয়েছিল এবার নতুন একটি বাংলাদেশ হবে। যেখানে মানুষের ন্যূনতম অধিকার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে তার বিপরীত। জুলাই অভ্যুত্থানের ১৪০০ অধিক শহীদ, হাজার-হাজার আহত এবং এত আত্মত্যাগের পরও একটা শান্তিপূর্ণ ও ন্যায্যতার বাংলাদেশ দেখতে পাইনি। এনসিপিও এক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। অস্থিরতা তৈরি করা, পবিত্র ধর্ম ইসলামকে ব্যবহার করে সমাজে বিভাজন তৈরি করা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির একটি প্রবণতা বর্তমানে বাংলাদেশে লক্ষ করা যাচ্ছে। একটা গোষ্ঠী বা চক্র নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য দেশকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছে। এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন হচ্ছে গণতন্ত্রে উত্তরণ এবং বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা।
প্রয়োজন আগামী দিনের কথা মাথায় রেখে রাজনৈতিক সচেতন, উন্নত ও প্রগ্রেসিভ চিন্তার নতুন তরুণ নেতা, নতুন উদ্যোগ ও বর্তমান বাংলাদেশপন্থী দলগুলোকে সংগঠিত করা, শক্তিশালী করা।
দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি দায় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রজীবনের শুরু থেকেই আমি সচেতনভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক তৎপরতার সাথে যুক্ত ছিলাম। বহুবার আক্রমণ নির্যাতনের শিকার হয়েছি। যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সবসময় আমার প্রথম অগ্রাধিকার ছিল বাংলাদেশ ও এ দেশের মানুষের স্বার্থ। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমার কাছে মনে হচ্ছে, তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি ও জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করার কোনো বিকল্প নেই। জুলাই অভ্যুত্থান ও পরবর্তী সময়ে তারেক রহমানের বিভিন্ন কার্যক্রম ও বক্তব্য পর্যালোচনা করে আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, এই মুহূর্তে সবাইকে ধারণ করে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা ও সক্ষমতা তিনিই রাখেন।
যখন অন্যান্য দল ধর্ম ও পপুলিজমকে প্রধান এজেন্ডা করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চাচ্ছে, তখন তারেক রহমান স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশসহ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে একটি ক্লিয়ার ভিশন জাতির সামনে উপস্থাপন করছেন। আগামী দিনে জনগণের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ, সংস্কৃতি, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন খাতভিত্তিক সুনির্দিষ্ট ও বাস্তবসম্মত সমাধানের কথাও তিনি বলছেন। এই স্মার্ট অ্যাপ্রোচ আমাকে আকৃষ্ট করেছে।
তরুণদের উচিত হবে পপুলিজম বা কোনো হুজুগে প্রভাবিত না হয়ে দেশের সামগ্রিক স্বার্থ, ভবিষ্যত ও কল্যাণের কথা বিবেচনা করে তারেক রহমানের জনকল্যাণমূলক ভিশন বাস্তবায়নে সহযোগিতা ও সমর্থন জানানো। আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে রাখলাম৷ ধন্যবাদ।
পরে কমেন্টের ঘরে মীর আরশাদুল হক লেখেন, ‘আমার সিদ্ধান্ত আমিই নেই। কারো কথায় প্রভাবিত হয়ে বা কারো চাপে কখনো কিছু করি না। এইটা যারা আমাকে চিনেন জানেন তারা ভালো করেই জানেন। আমার এলাকা বাঁশখালীর জন্য আমি কাজ করে যাব। সমস্যাগুলো সমাধানে চেষ্টা চালিয়ে যাব। আপাতত যোগাযোগ না করার অনুরোধ রইল। মেসেজ দিয়ে রাখতে পারেন। পরে সময় সুবিধা হলে দেখব, জবাব দিব। ধন্যবাদ।’
প্রকাশক : সোহেল রানা সম্পাদক: আব্দুস সামাদ সায়েম
©২০১৫-২০২৫ সর্বস্ত্ব সংরক্ষিত । তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত (নিবন্ধন নং-২১০)