শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ০৪:০১ অপরাহ্ন

তারাশে দেশীয় পদ্ধতিতে হাঁস পালন করে ভাগ্য বদল, মাসে আয় লাখ টাকা

রিপোর্টারের নাম / ২৭২ বার দেখা হয়েছে
আপডেট করা হয়েছে শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪, ৮:০৬ অপরাহ্ন

সিরাজগঞ্জ তাড়াশ উপজেলায় দেশীয় পদ্ধতিতে হাঁস পালন করে ভাগ্য বদল করেছেন মোঃ রাসিদুল মিয়ার। খামার থেকে ডিম বিক্রি করে প্রতি মাসে আয় করছেন ১ লাখ টাকা।

দৃঢ় মনোবল, কঠোর পরিশ্রম আর সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে পারলে অল্প পুঁজিতেই খুব সহজে স্বাবলম্বী হওয়া যায় তিনি তার দৃষ্টান্ত দেখালেন।

পরিবার পরিজন নিয়ে সুখ শান্তিতেই কাটছে তার দিন। খামারের সাফল্য দেখে অনেকেই হাঁস পালনে আগ্রহী হয়ে নিয়মিত পরামর্শ নিচ্ছেন। রাশিদুলের খামারে ৯শ হাঁস রয়েছে। রাসিদুল উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নে মহেশরৌহালী গ্রামের ইদন নুর ইসলাম হাজির ছেলে। পরিবারে স্ত্রী, ১ মেয়ে ১ ছেলে রয়েছে।

খামারি রাশিদুল মিয়া বলেন, এক সময় আমাদের অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। ইচ্ছা ছিল প্রবাসে যাওয়ার জন্য। কিন্তু বাবা মায়ের ইচ্ছা দেশে কিছু করতে। এক সময় ব‍্যবসা করতাম। বেশ কিছু দিন চালানোর পর সেটা বাদ করে দেওয়ায় বেকার হয়ে যাই। মা বাবা বলেন, কৃষি কাজ করো, না হয় তোমার পথ তুমি দেখ। আমরা কিছু করতে পারব না। যেহেতু বিয়ে করেছি ঘরে স্ত্রী ১ সন্তান আছে কি করব তা ভেবে পাচ্ছি না। দু’চোখে শুধু অন্ধকার দেখছি।

এক দিন বাজারে বসে চিন্তা করছি কী করা যায়। এ সময় এক ডিম বিক্রেতার সঙ্গে দেখা। তিনি আমাকে হাঁসের খামার দিতে পরামর্শ দেন। আমি বলি আমারতো টাকা পয়সা তেমন নেই। খামার দিতে তো অনেক পুঁজি লাগে। তিনি বলেন, মহেশরৌহালীতে অনেকেই খামারের হাঁস বিক্রি করছেন। তাদের কাছ থেকে হাঁস ক্রয় করতে পারেন। ওই লোকের ভরসায় সেখানে গিয়ে ২৫০ টি হাঁস ১০০০০০ হাজার টাকায় কিনি। এরপর বাড়িতে এসে বিলের মধ্যে শুরু করি খেয়ে না খেয়ে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম।

হাঁসগুলো ১ মাস পালন করি তাঁর পর হাঁস ডিম দেওয়া শুরু করে তখন আমার ডিম বিক্রি করে দ্বিগুণ টাকা লাভ হয়। দ্বিতীয় দফা ডিম পাড়া শেষ হলে হাঁসগুলো বিক্রি করে আরো লাভ হয়। এভাবেই ২০১০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত হাঁসের খামার দিয়ে ভালো টাকা আয় করি। যা দিয়ে পরিবার পরিজন খুব ভালভাবে চলছে। তারপর বাড়িতে একটি গরুর খামার দেই। সেটা লাভ জনক না হওয়ায় পুনরায় হাঁসের খামার দেই। হাঁসের খামারেই বদলে যায় আমার ভাগ্যের চাকা।

রাশিদুল মিয়া বলেন, গত ১ বছর আগে তাড়াশের আরিফের কাছ থেকে ৯শ হাঁস ক্রয় করি। খামারটি করতে ৪ লাখ ৫০০০০ টাকা খচর হয়। নানা কারণে ১শ হাঁস হারিয়ে যায়। বর্তমানে ৮শ হাঁস রয়েছে। এরমধ্যে দৈনিক ৫শ হাঁস ডিম দিচ্ছে। স্থানীয় বাজারে দৈনিক ৮ হাজার টাকার ডিম বিক্রি করি। এক একটি হাঁস ৪-৫ মাস পযর্ন্ত ডিম দিচ্ছে। প্রথম ধাপে এই হাঁসগুলো থেকে ৮ লাখ টাকার ডিম বিক্রি হয়েছে। বেশ কিছু দিন ডিম পারা বন্ধ থাকার পর পুনরায় শুরু হয়েছে। দৈনিক ৮ হাজার টাকার ডিম বিক্রি করছি।

আশা করছি দ্বিতীয় ধাপে ২০২৪ সালে নতুন বছরে আরো ৮ লাখ টাকা বিক্রি হবে। এরপর এই হাঁসগুলো বিক্রি করা হবে। এক একটি হাঁস ৫০০-৫৫০ টাকা বিক্রি হবে। এরপর পুনরায় নতুন হাঁস আনা হবে। খামার থেকে যাবতীয় খরচ বাদে প্রতি মাসে ১ লাখ টাকা আয় হচ্ছে।
খামারি রাসিদুল মিয়া বলেন, পানি থাকাবস্থায় হাঁসগুলো বিলে থাকে। পানি শুকিয়ে গেলে হাঁসগুলোকে নেয়া হয় অন্যত্র। পানি উঠা জমিগুলো থেকে ঝিনুক শামুক, ধানসহ বিভিন্ন প্রকারের খাবার খেয়ে সন্ধ্যা হওয়ার আগেই তাদের আশ্রয় স্থলে আনা হয়।

যেসব জায়গায় জলাশয় আছে সেখানে নিয়ে গেলে প্রাকৃতিক খাবার সহজেই পায়। ফলে হাঁসের জন্য বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া যেখানে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে একটি ঝাপটে ঘর তৈরি করা হয়। ওই ঘরে রাতের বেলায় হাঁসগুলো রাখা হয়। পাশাপাশি গম, কুড়া, ধানসহ বিভিন্ন প্রকার খাবার দেওয়া হয়। দৈনিক ২ হাজার টাকার খাবার দিতে হয়।

এদিকে খাবারের সময়ে মূলত হাঁসগুলোকে কয়েকবার আয়-আয় ডাক দিলে পাক-পাক আওয়াজে এক-এক করে চলে আসে দূরে ছড়িয়ে থাকা হাঁসগুলো।

তিনি জানান, খামারে হাঁসের কোনো সমস্যা হলে নিজেই সমাধান করে থাকেন। বড় কোনো রোগ বালাই হলে তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় পশু সম্পদ কার্যালয়ে গিয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। হাঁস খামার করা সহজ হলে ঝুঁকিও রয়েছে। কারণ খামারে মরক লাগতে পারে। তবে সচেতন থাকলে ঝুঁকি এড়িয়ে ভালো মুনাফা করা যায়।

তিনি বেকার যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, হতাশার কিছু নেই। কোনো কাজকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। সঠিক ভাবে শ্রম দিলে হাঁস পালনের মধ্য দিয়ে বিদেশি টাকার চেয়েও বেশি উপার্জন করা সম্ভব। এই খামারের আয় দিয়ে জায়গা জমি ক্রয় করেছি, বাড়ি করেছি। ১ মেয়ে পড়াশোনা চলছে। অন্য ছেলে মেয়েরা পড়াশুনা করছেন। পাশাপাশি আমার ছোট ভাইকে ইঞ্জিনিয়ার বানানোর আশা আছে। আমার বর্তমানে কোনো কিছুর অভাব নেই। বিদেশ থেকে দেশেই ভালো আছি।

তিনি বলেন, প্রাণিসম্পদ বিভাগ নিয়মিত খামার পরিদর্শন, বিনামূল্যে ভ্যাকসিন সরবরাহ, সার্বিকভাবে সহযোগিতা করলে খামারিরা অনেক উপকৃত হবে। হাঁস পালন একটি লাভজনক প্রজেক্ট। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ খাতকে একটি সম্ভাবনাময় খাতে রুপ দেয়া সম্ভব বলে মনে করি।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ চিকিৎসকরা জানান, হাঁসের রোগ বালাই সাধারণত কম হয়। তবে কিছু মৌসুমে ডাক প্লেগ ও ডাক কলেরা রোগের সম্ভাবনা থাকে। নিয়য়মিত ভ্যাকসিন দিয়ে নিলে এসব মহামারী রোগে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, হাঁস পালন একটি লাভজনক ব্যবসা। যে কোনো বেকার নারী-পুরুষ হাঁস পালনে এগিয়ে এলে সবাইকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর থেকে সাহায্য করা হবে। শুধু হাঁস পালন নয়, অন্যান্য যে কোনো খামার করলেই তাদেরকে প্রয়োজনীয় সাহায্য সহযোগিতা করা হবে। এ উপজেলায় অনেকেই খামার করে হাঁসপালনের মাধ্যমে লাভের মুখ দেখছেন। হাঁসের রোগ বালাই থেকে রক্ষা পেতে সব সময় পরামর্শ দেওয়া হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Theme Created By Limon Kabir