আল্লাহ রব্বুল আলামিন বান্দার প্রার্থনা বা মোনাজাত শোনা এবং কবুল করা পছন্দ করেন।
সুরা আল আনয়ামের ৬৩-৬৪ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘বলুন, কে তোমাদের ত্রাণ করেন যখন তোমরা স্থলভাগের ও সমুদ্রের বিপদে কাতরভাবে এবং গোপনে তাঁর কাছে অনুনয় কর এভাবে- আমাদের এ বিপদ থেকে উদ্ধার করলে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব। বলুন, আল্লাহই তোমাদের বিপদ ও সমস্ত দুঃখ-কষ্ট থেকে পরিত্রাণ করেন। এ সত্ত্বেও তোমরা তাঁর শরিক কর!’
মহান আল্লাহর করুণা পেতে তাগিদ- ‘তোমরা বিনীতভাবে এবং গোপনে তোমাদের প্রতিপালককে ডাকো… তাঁকে ভয় ও আশার সঙ্গে ডাকবে।’ (সুরা আরাফ : ৫৫-৫৬)। ‘তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমাদের কেউ অব্যাহতি পেতে না এবং আল্লাহ তওবা গ্রহণকারী ও প্রজ্ঞাময়’ (সুরা নুর : ১০)। ‘বল, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হোয়ও না, আল্লাহ সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সুরা জুমার : ৫৩)।
যাবতীয় অনুকম্পা ও নিয়ামত দানকারী আল্লাহ রব্বুল আলামিনের কাছেই বিপদে-আপদে অভাব-অনটনে সাহায্য প্রার্থনা করার গুরুত্ব অপরিসীম। বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ করে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে। মহান রব্বুল আলামিনের দরবারে তাঁর বান্দা যে প্রার্থনা পেশ করবে তার বাণী ও বিষয় রহমানুর রহিম নিজেই শিখিয়ে দিয়েছেন আল কোরআনে।
আল কোরআনে যেসব মোনাজাত বিভিন্ন ক্ষেত্র বা উপলক্ষে বিবৃত হয়েছে তার মধ্যে প্রার্থনার বিভিন্ন আঙ্গিক, ভাব-ভাষা প্রকাশ পেয়েছে। আল কোরআনের প্রাণস্বরূপ সুরা আল ফাতিহা সেরা মোনাজাতের প্রতিকৃতি। এ কারণে মিরাজুল মুমিনিন হিসেবে বিবেচিত নামাজের প্রতি রাকাতে এ সুরা পাঠ করতে হয়।
আল কোরআনে সওগাত হিসেবে উল্লিখিত মোনাজাতগুলোর কয়েকটি : ‘হে আমাদের প্রতিপালক! যদি আমরা বিস্মৃত হই অথবা ভুল করি তবে তুমি আমাদের অপরাধী কোরো না। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর যেমন গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেছিলে আমাদের ওপর তেমন দায়িত্ব অর্পণ কোরো না। হে আমাদের প্রতিপালক! এমন ভার আমাদের ওপর অর্পণ কোরো না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই। আমাদের পাপ মোচন কর, আমাদের ক্ষমা কর, আমাদের প্রতি দয়া কর, তুমিই আমাদের অভিভাবক। সুতরাং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের জয়যুক্ত কর’ (সুরা বাকারা : ২৮৬)।
‘হে সার্বভৌম শক্তির মালিক! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে নাও; যাকে ইচ্ছা তুমি পরাক্রমশালী কর, আর যাকে ইচ্ছা তুমি হীন কর। কল্যাণ তোমার হাতেই। তুমি সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান। তুমিই রাতকে দিনে এবং দিনকে রাতে পরিণত কর; তুমিই মৃত থেকে জীবন্তের আবির্ভাব ঘটাও, আবার জীবন্ত থেকে মৃতের আবির্ভাব ঘটাও। তুমি যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবনোপকরণ দান কর’ (সুরা আলে ইমরান : ২৬-২৭)।
‘হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের (পিতা-মাতার) প্রতি দয়া কর যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন’ (সুরা বনি ইসরাইল : ২৪)। ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জ্ঞানের বৃদ্ধি সাধন কর’ (সুরা তা-হা : ১১৪)।