বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০৮ অপরাহ্ন

রাজশাহীতে অর্থনীতির নতুন দুয়ার খুলছে সোমবার

রিপোর্টারের নাম / ১১৩ বার দেখা হয়েছে
আপডেট করা হয়েছে সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪, ৪:১৯ অপরাহ্ন

রাজশাহীর সাথে ভারতের সরাসরি অর্থনৈতিক যোগাযোগের দুয়ার খুলছে সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি)। এর মধ্য দিয়ে পিছিয়ে পড়া রাজশাহীর অর্থনীতি যেমন গতি পাবে তেমনি পণ্য পরিবহনে ব্যয় কমে আসবে। সেই সাথে কমবে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের ওপর চাপ।

নতুন করে চালু হওয়া সুতলানগঞ্জ-মায়া নৌপথ এমনই আশা দেখাচ্ছে। সড়কপথের চাইতে নৌপথে মালামাল আনান-নেয়ার ব্যয় তলনামূলক কম হওয়ায় এমন ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা আশা করছেন, এই নৌপথে দুই হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হবে।

যদিও ২০ কিলোমিটার লম্বা পদ্মার এই নৌপথে নব্য ধরে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে বিআইডব্লিউটিএ (বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ)।

নৌপথটি উদ্বোধন করবেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। রাজশাহী সিটির মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল দ্রুত এই নৌবন্দরটি চালু করার।

সুলতানগঞ্জ বন্দরের ইনচার্জ ওয়াকীল আহমেদ জানান, উদ্বোধনের দিন বাংলাদেশ থেকে মোট ১৫ টন গার্মেন্টস তুলা রপ্তানি হবে এবং ভারত থেকে আমদানি হবে এক হাজার ৬০০ টন পাথর। তিনটি ভেসেলে এসব পণ্য আনা-নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

নৌপথের তাৎপর্য

বিআইডব্লিউটিএর তথ্যমতে, ভারত থেকে স্থলবন্দর দিয়ে প্রতি টন পাথর আনতে খরচ পড়ে ১৩ মার্কিন ডলার। সমুদ্র পখে এই খরচ ২০ ডলার। সুলতানগঞ্জ নৌবন্দর দিয়ে পাথর আমদানি করতে খরচ পড়বে মাত্র ৯ থেকে ১০ ডলার। এছাড়া বাংলাদেশের কার্গো বা জাহাজে পাথর আনা যাবে। বিল দেওয়া যাবে আন্তঃদেশীয় মুদ্রায়। ফলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। সৃষ্টি হবে বহু কর্মসংস্থান।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মায়া বন্দর থেকে নৌপথে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ নৌবন্দরের দূরত্ব মাত্র ২০ কিলোমিটার। সুলতানগঞ্জ থেকে রাজশাহীর দূরত্ব ৩৬ কিলোমিটার। রাজশাহীর সঙ্গে পাবনা, সিরাগঞ্জ, বগুড়া, নওগাঁ, জয়পুরহাট, রংপুর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, খুলনা ও যশোর এমনকি ঢাকার সাথে সড়কপথে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। ফলে দেশের স্থলবন্দর বা সমুদ্রবন্দরের চেয়ে অনেক সাশ্রয় হবে সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌপথ।

বাংলাদেশে মোট পাঁচটি আন্তর্জাতিক নৌপথ চালু আছে জানিয়ে বিআইডাবলুটিএর বৈদেশিক পরিবহন শাখার উপপরিচালক শর্মিলা খানম বলেন, এগুলোর মধ্যে সুলতাগঞ্জ থেকে মায়া বন্দরটি সবচাইলে স্বল্প দূরত্বের। নদীর নব্য বৃদ্ধি করতে পারলে এই রুট আরিচা পর্যন্ত দীর্ঘ হবে, যা অনুমোদন হয়ে আছে।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু বলেন, এই রুট চাল হলে বছরে দুই হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য সম্ভব হবে। আমাদের সাথে নিয়ে বিআইডব্লিটিএ ইতোমধ্যেই সমীক্ষা শেষ করেছে। এই রুট দিয়ে রাজশাহী অঞ্চলের পর্যটনশিল্পের বিকাশও দেখছেন এই ব্যবাসয়ী নেতা। তিনি বলেন, রাজশাহী শহরের কোল ঘেষে রয়েছে পদ্মা নদী।

নৌপথটি চালু হলে একদিকে যেমন কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে তেমনি হুহু করে শহরের উন্নতি হবে। সারা বিশ্বেই বন্দরনগরীগুলো উন্নত। বাংলাদেশের অন্যতম আদি অঞ্চল রাজশাহীতে একাধিক দর্শনীয় স্থান, পুণ্যস্থান ও ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে। ফলে পর্যটনশিল্পের সমৃদ্ধি দেখতে পাচ্ছি।

বন্দর প্রস্তুত কাজের তদারক করছেন বিআইডব্লিউটিএর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহআলম। তিনি বলেন, এরই মধ্যে সুলতানগঞ্জ অংশে পন্টুন ভেড়ানো হয়েছে। নদীতীর থেকে মালামাল সড়কে ওঠানো জন্য রাস্তা প্রস্তুত করা হচ্ছে। পাশেই ইয়ার্ডের জায়গা বাছাইয়ের কাজ চলমান। সড়ক প্রশস্তকরণ, ইয়ার্ড ও গুদামের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে হবে।

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, একটা সময় এই বন্দরটি চালু ছিল। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ঘিরে ১৯৬৫ সালে বন্ধ হয়ে যায়। এই নৌপথ চালু হলে এই অঞ্চলের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি গতি পাবে। এ থেকে সর্বপ্রথম রাজশাহীবাসী সরাসরি উপকৃত হবে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য রাজশাহীর মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন নৌপথে সম্ভাবনা নিয়ে বলেন, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাতটি নৌরুটের বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। তার মধ্যে একটি ভারতের মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান থেকে রাজশাহী গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ হয়ে পাবনার রূপপুর ও পাকশী দিয়ে ঢাকার আরিচা পর্যন্ত। এই রুটে সারা বছর যদি নব্য রাখা যায় এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শুরু করা যায়, তবে তা হবে দেশের অর্থনীতির জন্য মঙ্গলকর। এর মধ্য দিয়ে রাজশাহীর জনপদটি কর্মমুখর হয়ে উঠবে। তিনি বলেন, ‘এই নৌরুট চালুর মধ্য দিয়ে আমরা নতুন যুগের সূচনা করতে যাচ্ছি।’

সম্ভাব্য আমদানি-রপ্তানি পণ্য

জাতীয় রাজস্ববোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, আমদানি পণ্যের তালিকায় রয়েছে গবাদিপশু, মাছের পোনা, তাজা ফলমূল, গছগাছরা, বীজ, গম, পাথর, কয়লা, সার, চায়না ক্লে, টিম্বার, কাঠ, চুনাপাথর, পেয়াজ, মরিচ, রসুন, আদা, বল ক্লে ও কোয়ার্টজ। রপ্তানি করা যাবে বাংলাদেশের সকল পণ্য।

বড় চ্যালেঞ্জ নদীর নাব্য নিয়ে

শত আশার মধ্যে যে বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা হলো নাব্য সংকটের আশঙ্কা। নাব্য ধরে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ড্রেজিং প্রয়োজন হবে। মেইনটেনেন্স ডেজিং করতে হবে। প্রতি বর্ষায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়। নদী তো আছেই। নদীর গতিপথ বন্ধ হয়। নদীর প্রবাহ বন্ধ হয়নি। একে নিরাপদ রাখার জন্য সময় সময় মেইনটেনেন্স ড্রেজিং করতে হবে, যাতে জলযানগুলো চলতে পারে।

নাব্য সম্পর্কে বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (এস্টেট ও আইন) এ কে এম আরিফ উদ্দিন বলেন, স্বাধারণত পণ্যবাহী নৌযান চলাচলে নদীতে ১০ ফিট গভীরতার প্রয়োজন হয়। আমরা এই রুটের হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ সম্পন্ন করেছি। নৌপথটি পণ্যবাহী নৌযান চলাচলের জন্য যে পরিমাণ নব্য প্রয়োজন তা এখানে আছে। কখনও যদি নাব্য সংকট দেখা দেয় তাহলে আমাদের ড্রেজিং মেশিন আছে। তাৎক্ষণিকভাবে সংকট সামাধান করা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Theme Created By Limon Kabir