বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৯ অপরাহ্ন

জুনে বিএনপি নেতার মৃত্যু হলেও আগস্টে হত্যা দেখিয়ে মামলা, এলাকায় চাঞ্চল্য

রিপোর্টারের নাম / ১১৪ বার দেখা হয়েছে
আপডেট করা হয়েছে মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৯:১৪ অপরাহ্ন

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহজার থানায় দায়ের করা উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি বাবুল মিয়া হত্যা মামলা নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৩ জুন হৃদরো‌গে আক্রান্ত হয়ে বাবুল মিয়ার মৃত্যু হলেও দুই মাস পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে গত ২২ আগস্ট হত্যা মামলা করেছেন ওই ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন।

মামলার এজাহারে বাদী নুরুল আমিন উল্লেখ করেন, গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সচেতন নাগরিক হিসেবে অংশ নেন বাবুল মিয়া। ওইদিন সন্ধ্যা সাতটার দিকে বাড়ি ফেরার পথে পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাবুল মিয়াকে কালীবাড়ি বাজার থেকে তুলে নিয়ে দুপ্তারা ঈদগাহ মাঠে হত্যা করা হয়।

 

নিহত বাবুলের পরিবার ও এলাকাবাসী জানায়, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে গত ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর ছোট ভাই নাজমুল হোসেনের নেতৃত্বে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা বাবুলকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও রড দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে তারা। হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন বাবুল। এরপর ৩ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। এদিকে, ৩ জুন উপজেলার গিরদা-পশ্চিমপাড়া-চৌধুরীপাড়া কবরস্থানে বিএনপি নেতা বাবুল মিয়ার মরদেহ দাফন করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কবরস্থানের তত্ত্বাবধায়ক সেলিম মিয়া।

এছাড়া ৩ জুন ৪৯ বছর বয়সী বাবুল মিয়ার মৃত্যু হয়েছে বলে মৃত্যু সনদ প্রদান করেছে রূপগঞ্জের ভুলতা এলাকায় অবস্থিত ডিকেএমসি হাসপাতাল লিমিটেড কর্তৃপক্ষ। বাবুলের সেই মৃত্যু সনদে উল্লেখ করা হয়, গত ৩ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানায়, বাবুলের পরিবার এই সাজানো মামলা করতে রাজি না হওয়ায় পরিবারটির কাউকেই সেই মামলায় সাক্ষী করা হয়নি।

 

এদিকে, বাবুল মিয়ার বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রীকে পাওয়া যায়নি। মামলা নিয়ে জটিলতার কারণে এবং বিষয়টি সম্প্রতি প্রকাশ পাওয়ায় তিনি রূপগঞ্জে নিজ বাবার বাড়িতে চলে গেছেন। নিহত বাবুলের বড় ভাই আবদুল বাতেনের স্ত্রী নাসিমা জাফরিন জানান, তার দেবর হত্যার সঙ্গে ১০ থেকে ১১ জন সন্ত্রাসী জড়িত ছিল। কিন্তু যারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না এমন ব্যক্তিদেরও মামলায় আসামি করা হয়েছে অভিযোগ তুলে প্রকৃত অপরাধীদের বিচার দাবি করেন তিনি।

 

এ বিষয়ে বাবুল মিয়া হত্যা মামলার বাদী আড়াইহাজার উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন জানান, বাবুলকে পরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এলাকায় খোঁজ নিলেই এর প্রমাণ পাওয়া যাবে। ৩ জুন হার্টএ্যাটাকে বাবুলের মৃত্যু হলেও ৪ আগস্ট তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে মামলায় কেন উল্লেখ করা হয়েছে এই প্রশ্ন করলে নুরুল আমিন জানান, মামলায় মৃত্যুর তারিখের বিষয়ে ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকলে সেটা খোঁজ খবর নিয়ে সংশোধন করা হবে।

 

এ বিষয়ে আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এহসান উল্লাহ জানান, বাদীপক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ নিয়ে আসায় এজাহার গ্রহণ করা হয়েছে। মামলায় ভিকটিমের মৃত্যুর তারিখ নিয়ে দ্বিমত থাকলে এবং নিরপরাধ কাউকে জড়ানো হয়ে থাকলে তদন্ত করে সে অনুযায়ি পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. আমীর খসরু জানান, এই মামলা যদি ভুয়া বা কাউকে হয়রানি করার প্রমাণ পাওয়া যায় তবে আমরা সে অনুযায়ি ব্যবস্থা নেব।

উল্লেখ্য, আড়াইহাজারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপি নেতা বাবুল মিয়াকে হত্যার অভিযোগ এনে গত ২২ আগস্ট রাতে ওই ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও স্থানীয় নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুসহ ১৩১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Theme Created By Limon Kabir