বিশ্বজুড়ে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণের কারণে আগামী ২৫ বছরে ৪ কোটিরও বেশি মানুষ মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে। গবেষণায় উঠে এসেছে, এই মৃত্যুর সংখ্যা বর্তমান সময়ের তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি হতে পারে। এই ঘটনা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) সংকটকে আরও জটিল করে তুলবে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মানবজাতিকে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল পরবর্তী যুগে ঠেলে দিতে পারে, যেখানে সুপারবাগের কারণে চিকিৎসা কার্যক্রম পুরোপুরি ব্যর্থ হবে।
স্বাস্থ্যবিষয়ক সাময়িকী দ্য ল্যানসেটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংক্রমণের কারণে ৩ কোটি ৯০ লাখ মানুষ মারা যাবে। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স তখন মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য সরাসরি হুমকি হয়ে উঠবে। যখন ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের মতো জীবাণু তাদের ধ্বংসের জন্য ব্যবহৃত ওষুধগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে ফেলে, তখনই এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণকে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য এবং উন্নয়নের জন্য মারাত্মক হুমকি বলে ঘোষণা করেছে। রোগজীবাণুর অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ার পেছনে মানুষের অবহেলা ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার দায়ী। গবেষকরা মনে করেন, যদি এখনই কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে বিশ্বজুড়ে অপ্রতিরোধ্য সংক্রমণ আরও বাড়বে।
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশনের প্রধান ড. ক্রিস মারে বলেন, অ্যান্টিবায়োটিকের যথাযথ ব্যবহারে মনোযোগ দিতে না পারলে আমরা খুব দ্রুতই অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের বড় বিপদে পড়ব।
এটাতে বিশেষ করে বয়স্করা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। গবেষণায় উঠে এসেছে, আগামী ২৫ বছরে ৭০-এর বেশি বয়স্কদের মধ্যে সংক্রমণজনিত মৃত্যুর হার ৮০ শতাংশের বেশি বাড়বে, যদিও ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে মৃত্যুর হার ৫০ শতাংশ কমে যাবে।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি:
বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিকের মাত্রাতিরিক্ত এবং অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের ফলে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) মৃত্যুর ৮০ শতাংশ কারণ অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া, অর্থাৎ সুপারবাগ। ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউতে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ৪০০ জনই অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মারা যায়।
২০১৫ সালে ইউরোপিয়ান জার্নাল অব সায়েন্টিফিক রিসার্চের এক জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশের বেশি মানুষ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করছেন। এভাবে অ্যান্টিবায়োটিকের অবহেলামূলক ব্যবহার পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে, যা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না আনলে ভয়াবহ পরিণতি অনিবার্য